ফেসবুক লাইভে ভারতবিদ্বেষ, বাংলাদেশি যুবকের ভিসা বাতিল
ভারতে ঘুরতে গিয়ে ‘ফেসবুক লাইভে দেশটির বিরুদ্ধে কথা বলার’ অভিযোগে বাংলাদেশি এক যুবককে আটকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে প্রায় ছয় ঘণ্টা হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে দেশটির কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশি ওই যুবকের নাম মো. আলমগীর ইসলাম। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী। বাড়ি লালমনিরহাটের পাটগ্রাম পৌরসভার জুম্মাপাড়ায়।
বুড়িমারী স্থলবন্দরে ওপারে দেশটির চ্যাংরাবান্ধা ইমিগ্রেশন থেকে তাঁকে আটকের দাবি করেছেন আলমগীর। তবে আজ আনন্দবাজার অনলাইন সংস্করণের এক খবরে বলা হয়, আলমগীরকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদ থেকে আটকের পর ‘কালো তালিকাভুক্ত করে’ রোববার চ্যাংরাবান্ধা ইমিগ্রেশন দিয়ে দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
আলমগীরের ভিসায় দেখা যায়, তাঁর নামে গত ২২ এপ্রিল ভ্রমণ ভিসা ইস্যু করা হয়েছিল। যার মেয়াদ রয়েছে আগামী ২১ অক্টোবর পর্যন্ত। ‘ডাবল এন্ট্রি’র ভিসায় বাতিল (ক্যান্সেলড) সিল মেরে দিয়েছে ভারতীয় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ।
আলমগীর বলেন, ‘সর্বশেষ পাওয়া ভিসায় আমার দুইবার ভারত যাওয়ার অনুমতি ছিল। ভিসার চলতি মেয়াদে এর আগে একবার ঘুরে এসেছি এবং গত ৩ সেপ্টেম্বর পুনরায় দেশটিতে গিয়েছিলাম। ফলে এখানে ভিসা বাতিলের কিছু নেই।’
আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তের পর আলমগীরকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে ভারত সরকার। ভিসা বাতিল করে তাঁকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ভবিষ্যতে আর কোনো দিনই তিনি ভারতে আসতে পারবেন না বলে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে খবরে বলা হয়েছে।
আলমগীর ইসলাম তাঁর ‘আলমগীর শেখ আলম’ নামের ফেসবুক পেজে চার দিনে আগে একটি লাইভ করেন। এতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘ভারত আমাদের ৭১ সালে অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং জনবল দিয়ে দেশ স্বাধীন করে দিয়েছে। এটা তো আমাদের বাপ-দাদার ঋণ, এই ঋণটা আমাদের পরিশোধ করা উচিত। ... আমার বাংলাদেশি ভাইদের বলব, আমরা সবাই মিলে এবার ভারতকে সহযোগিতা করি ভারত ভাগ হওয়ার জন্য। যেহেতু তারা আমাদের পাকিস্তান থেকে ভাগ করছে আমরা তাদের ভাগ হতে সাহায্য করি, মনিপুরের জয় হোক। আমি আমার বাংলা ফেরত চাই, পশ্চিমবঙ্গ আমার, ত্রিপুরা আমার, মেঘালয় আমার। ...আমার দেশ আমাকে ফেরত দেন।’
আলমগীর অভিযোগ করে বলেন, গত ৩ সেপ্টেম্বর আমি ভারত যাই। এরপর আজমীর শরিফসহ বিভিন্ন মাজার জিয়ারত শেষে তাজমহল দর্শনে যাই। সেখানে গিয়ে অনলাইনে দেখলাম, ভারতের ‘সেভেন সিস্টার্স’ স্বাধীনের জন্য আন্দোলন চলছে। ফলে সেখানে ফেসবুক লাইভটি করেছিলাম। এই লাইভের তিন দিন পর দেশে ফেরার জন্য চ্যাংরাবান্ধা আসি। এরপর রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টার দিকে ইমিগ্রেশনে ঢোকার পর পরই আমাকে ইমিগ্রেশন পুলিশ আটক করে। এরপর আমাকে দীর্ঘ সময় দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল। এক গ্লাস পানিও চেয়ে পাইনি। এই দীর্ঘ সময়ে আমাকে ও আমার দেশকে নিয়ে গালাগাল করেছে তারা।’
আলমগীর অভিযোগ, ‘পরিবার-স্বজনদের জন্য ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২০ হাজার টাকার বাজার করেছিলাম। আমাকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় ভারতীয় কর্তৃপক্ষের অনেকে সেগুলো যে যার মতো করে নিয়ে গেছে।’
বুড়িমারী স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহসান হাবিব আজ সোমবার রাতে বলেন, ‘রোববার ওপারে ইমিগ্রেশনের কাজ হওয়ার পর পরই আলমগীরকে তাঁরা জিজ্ঞাসাবাদ করে। এরপর রাত প্রায় ১০টার দিকে আমাদের কাছে পাঠানো হয়।’