রাতুলের কণ্ঠে আর ‘মা’ ডাক শুনতে পাবেন না রোকেয়া বেগম!
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গিয়ে পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছিল বগুড়ার শিশু শিক্ষার্থী জুনায়েদ ইসলাম রাতুল। মৃত্যুর সঙ্গে ৪৮দিন পাঞ্জালড়ে অবশেষে হেরে গেলো সে। আজ ভোর ৫টায় রাজধানীর ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউরোসাইন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে রাতুল।
রাতুল বগুড়া উপশহরের হাকির মোড়ে বাবা, মা ও বড় বোনের সঙ্গে থাকত। উপশহরের পথ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। গত ৫ আগস্ট বিকেলে রাতুলের বড়বোন কলেজ ছাত্রী জেরিন ও ভগ্নিপতি আমির হামজা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগ দেয়। নাস্তা না করেই ওদের সঙ্গে বেড়িয়ে যায় সে। স্লোগান দিতে-দিতে বগুড়া সদর থানার অদুরে বড়গোলার কাছে পৌঁছায়।
জেরিন জানান, তার পাশেই ছিল রাতুল। হঠাৎ পুলিশের ছররা গুলি এসে লাগে রাতুলের গায়ে, এরমধ্যে একটি লাগে তার মাথায়। গুলিটি তার বাম চোখের মধ্যে দিয়ে মাথার মগজে ঢুকে পড়ে। এরপর পুলিশের ছোড়া আরও অর্ধশতাধিক গুলি লাগে তার শরীরে বিভিন্ন জায়গায়। গুলিবিদ্ধ হয়ে অজ্ঞান থাকা অবস্থায় রাতুলকে বগুড়া শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে নিয়ে যাওয়া হয়। ওখানে চিকিৎসকরা তাকে রাজধানীর ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিওরোসাইন্স হাসপাতলে নিতে বলেন। ৪৮ দিন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থেকে আজ ভোর ৫টায় চিকিৎসাধীন অবস্থার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে শিশু রাতুল।
আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় রাতুলের মৃত্যুর সংবাদ বগুড়ায় পৌঁছায়। তার মৃত্যুর খবরে উপশহরে শোকের ছায়া নেমে আসে। রাতুলের মরদেহ বগুড়ায় আনার জন্য তার বাবা, মা, বোন ও ভগ্নিপতি সবাই ঢাকায় হাসাপাতলে যান।
রাতুলের বোনবড় জেরিন জানান, তাদের আশা ছিল যেহেতু মগজ থেকে গুলি বের করতে সফল অস্ত্রপচার হয়েছে, সেহেতু এ যাত্রা বোধ হয় বেঁচে যাবে তার একমাত্র ভাই। রাতুলের মৃত্যুতে বার-বার মুর্চ্ছা যাচ্ছেন মা রোকেয়া বেগম। ৪৮ দিন দুই চেখের পাতা এক করতে পারেননি। ভাবতেন—এইবুঝি ছেলে রাতুল ‘মা’ বলে ডাকবে। বুকে জড়িয়ে ধারে আদর করবে। কিন্তু মায়ের ছিল শুধু অপক্ষে আর অপেক্ষা। ৪৮ দিন চোখ মেলে তাকাইনি রাতুল। মায়ের আর শেষ বারের মতো ‘মা’ ডাক শোনা হলো না।
মুদির দোকানি বাবা জিয়াউর রহমান জানান, আমার সর্বস্ব বিক্রি করে ছেলের চিকিৎসা করেছি। তবুও সন্তানকে ফিরে পেলাম না।