শেখ হাসিনার ভূতরা প্রতি পদে পদে এই সরকারকে ব্যাহত করছে : রিজভী
‘সরকারের সর্বত্র শেখ হাসিনার ভূতরা সক্রিয়’ বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার ভূতরা আজকে আদালতে আছে, আজকে প্রশাসনে আছে, আজকে পুলিশে আছে; তারা প্রতি পদে পদে এই সরকারকে ব্যাহত করছে।
আজ বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবিতে এক বিক্ষোভ সমাবেশে দেশের প্রশাসনের অবস্থা তুলে ধরে রিজভী এই অভিযোগ করেন।
রিজভী বলেন, সাইবার নিরাপত্তা যেটা ডিজিটাল নিরাপত্তা অ্যাক্ট যেটা করেছিল তারই আপহোল্ড আইন… একই জিনিস। আজকে অন্তর্বর্তী সরকার আছেন….যে খাদিজা মেয়েটা মাস্টার ডিগ্রিতে পড়েন সে নাকি এখনো কারাগারে তাহলে প্রশাসন কীভাবে চলছে? শুধু একটা পোস্ট দেওয়ার কারণে একজন ছাত্রী এখনো যদি কারাগারে থাকে তাহলে তো বুঝতে হবে আমরা যেটা বলি, শেখ হাসিনার ভূতরা আজকে আদালতে আছে, আজকে প্রশাসনে আছে, আজকে পুলিশে আছে; তারা প্রতি পদে পদে এই সরকারকে ব্যাহত করছে।
জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের যৌথ উদ্যোগে ‘আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং আমার দেশ পত্রিকার খুলে দেওয়ার দাবিতে’ এই বিক্ষোভ সমাবেশ হয়।
অতিদ্রুত সংস্কার করে নির্বাচন
রিজভী বলেন, ফ্যাসিবাদ আর নাৎসীদের কখনোই রাজনৈতিক ও সামাজিক পুনর্বাসন হতে পারে না। মুসোলিনি আবার ফিরে আসেনি ইতালিতে, হিটলার আবার পুনর্বাসিত হয়নি জার্মানিতে। সুতরাং কোনোভাবেই মাফিয়া-নাৎসি-ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন বাংলাদেশে হবে না। একটি নতুন বাংলাদেশ, একটি বৈপ্লবিক বাংলাদেশ, একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, একটি আইনের শাসনের বাংলাদেশ, একটি বিচার বিভাগের স্বাধীনতার বাংলাদেশ; সেই সুন্দর স্বপ্নময় বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হবে সেই দিকেই আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। তার জন্য অতি শিগগিরই অতি তাড়াতাড়ি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে। যেটা প্রয়োজনীয় যে সংস্কার সেই সংস্কার সম্পন্ন করে অতিদ্রুত জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে দিলে পরেই সেই বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডগুলো খুব দ্রুত বাস্তবায়িত হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারকে জনগণের সরকারের মতো কাজ করার আহ্বান জানিয়ে রিজভী বলেন, বিরোধী দলের এতো আত্মত্যাগ, ছাত্র-জনতার বিপ্লবের ওপর এই বিপ্লব রচিত হলো। তাহলে এর টোন এর ভাষা, এর কার্যক্রম সব কিছু তো বৈপ্লবিক হবে। আজকে ঘাপটি মেরে থাকা যে সমস্ত শেখ হাসিনার দোসর প্রশাসনে, পুলিশে প্রত্যেকটি জায়গায় তারা বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা করছে। আপনার পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকে... পুলিশের সামনে মার্ডার কি করে হয়? তাহলে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর এর দায়িত্ব বর্তায়।
আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে নেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, বিপ্লবী সরকারের কর্মকাণ্ড হবে বৈপ্লবিক। আইনের কথা বলছেন…আইন উপদেষ্টা সাহেব নিশ্চয়ই একজন গুণি মানুষ… আমাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন। কিন্তু বিপ্লবী সরকারের দায়িত্ব তো প্রচলিত কোনো আইনের ওপর ভিত্তি করে কাজ করা নয়। প্রচলিত আইন ব্যবহার করেছে শেখ হাসিনা। একটা মাফিয়া সিন্ডিকেটের সরকার, একটা দুর্বৃত্ত নাৎসি সে এই কাজটা করেছে। ফৌজদারি আইনে এক বছরের বেশি সাজা হলে তাকে কারাগারে যেতে হয়… এই আইন এখন মানা হবে কেনো? আইন তো ধর্মীয় গ্রন্থ নয় যে এটা পরিবর্তন করা যাবে না। এই বৈপ্লবিক পরিবর্তনে এতো ছাত্র-জনতার এতো যে আত্মদান, এতো রক্ত এখনো গড়িয়ে যাচ্ছে… কিছুক্ষণ আগে দেখে এলাম তাহমিদ ও মাসুদ রানা কীভাবে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে… কপালে গুলি লেগেছে মাথার পেছন দিক দিয়ে গুলি বেরিয়েছে...তাদের আত্মদানের মধ্য দিয়ে যে সরকার তাদের কেনো পুরোনো আইন দেখিয়ে কাজ করবেন?
‘ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে’ কেনো মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে যেতে হয় তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন রিজভী।
তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিলম্বের ষড়যন্ত্র
রিজভী বলেন, দুই মাস হয়ে গেলো, এতো দিনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কেনো দেশে এলেন না? কী আইনি প্রক্রিয়া আছে? এই আইন তো মানবতাবিরোধী আইন, এই আইন স্বার্থ রক্ষা করা হয় মাফিয়াদের, স্বৈরাচারের, খুনিদের…. এই আইন তো একটা নির্বাহী আদেশের খোঁচায় পরিবর্তন হতে পারে। তাহলে কী আপনারা (অন্তর্বর্তী সরকার) ভয় পাচ্ছেন? নাকি আপনাদেরকে কেউ নির্দেশ দিচ্ছে কোনো জায়গা থেকে যে এর বাইরে যাওয়া যাবে না, এইভাবে কাজ করবেন….দেশনায়ক তারেক রহমান যেন ফিরতে না পারে সেই ব্যবস্থার জন্য আপনারা এই কাজগুলো করুন, এগুলো পরিবর্তন করা যাবে না। যেভাবে মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হলো। এই পরিস্থিতি আমরা এই সরকারের কাছ থেকে আশা করতে পারি না।
রিজভী আরও বলেন, এতো আত্মত্যাগের পরে যে সরকার সেই সরকার কেনো শেখ হাসিনার আইনগুলো টেনে টেনে নিয়ে এসে গণতন্ত্রের বিপ্লবী মানুষদেরকে যন্ত্রণা দিচ্ছে, এটা গোটা জাতির আজকে জিজ্ঞাসা। আমরা একটা বিপ্লবী সরকার দেখতে চাই। এই সরকারকে জনগণের সেন্টিমেন্ট বুঝেই তো কাজ করতে হবে। আমরা শেখ হাসিনার সরকারের মতো সরকার চাই না। চট্টগ্রামের ডিসি মোনাজাত করছেন কাদেরকে নিয়ে? আওয়ামী লীগের যে সমস্ত চেয়ারম্যান প্রার্থী নমিনেশন জমা দিয়েছেন তাদেরকে নিয়ে। এই ধরনের সরকার চাই না বলেই তো এতো রক্তপাত এতো কিছু হলো… এতো ঘটনা হলো এটা এই সরকারকে বুঝতে হবে।
বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী বলেন, আমাদের খুব দূঃখ লাগে যে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিপ্লবের পরে আমাদেরকে রাস্তায় নামতে হয়েছে দাবি নিয়ে। আমরা এই সমাবেশ থেকে সব বন্ধ সংবাদপত্রসহ মিডিয়া খুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। খুনি হাসিনা যত সাংবাদিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে সেই মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। এই সরকারের চারপাশে ফ্যাসিবাদের প্রেত্মাতাদের ঘুরে বেড়াতে দেখছি। এই প্রেত্মাতাদের অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে, তাড়িয়ে দিতে হবে। নইলে যেভাবে আমরা রক্ত দিয়েছি, আমরা আবারও ফ্যাসিবাদের দালালদের তাড়ানোর জন্য রাজপথে নামতে বাধ্য হবো।
ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীনের সভাপতিত্বে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক দিদারুল আলম দিদারের সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, বিএফইউজের সহসভাপতি বাছির জামাল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবদুল আউয়াল ঠাকুর, একেএম মহসিন, রাশেদুল হক, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মুরসালীন নোমানী, মহিউদ্দিনসহ দুই ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দেন।