নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি বিএনপির, ইতিবাচক প্রধান উপদেষ্টা
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। একইসঙ্গে তারা দ্রুত নির্বাচনের জন্য কমিশন গঠনের কথা বলেছেন। প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচন হচ্ছে তাদের ‘এক নম্বর প্রায়োরটি’।
আজ শনিবার (৫ অক্টোবর) যমুনায় বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমকে এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, সাবেক সরকার এনআইডি কার্ড স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়ার কথা বলেছে। কিন্তু, এটা আমরা সেই এনআইডি কার্ড অর্ডিন্যান্স বাতিলের জন্য বলেছি। এ ছাড়া সকল ইউনিয়ন পরিষদ বাতিলের দাবি জানিয়েছি।
২০২৪ সালে পক্ষপাতমূলক নির্বাচনের জন্য যারা দায়ী তাদের শাস্তির আত্ততায় আনার দাবি জানিয়েছি। নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে বিচারপতি খায়রুল হক, তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করেছি।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, আগামী ৮ তারিখে অন্তর্বর্তী সরকারের দুমাস হবে। এখন পর্যন্ত গত সরকারের আমলে, অর্থাৎ ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে তাদের দোসর হিসেবে যারা কাজ করেছে, লুটপাট অনাচার অত্যাচারে নির্যাতন গুমখুনের ব্যাপারে গণহত্যার ব্যাপারে সহায়তা করেছে, তাদের বেশিরভাগই এখনও স্ব-স্ব পদে বহাল তবিয়তে আছে। অবিলম্বে তাদেরকে সরিয়ে নিরপেক্ষ কাউকে আনার কথা আমরা বলেছি। তিনি আরও বলেন, ৫৯ জেলা প্রশাসক কীভাবে নিয়োগ পেয়েছে এবং কীভাবে নিয়োগ হয়েছে তা জানতে চেয়েছি। একইসঙ্গে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাদের নিয়োগ বাতিল করে দিতে আমরা বলেছি।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিলের জন্য অনুরোধ করেছি। নিম্নআদালতে অতিদ্রুত পিপি, জিপি নিয়োগের কথা বলেছি। তিনি ্বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যেও দুই একজন আছেন, যারা গণঅভ্যুত্থান বিপ্লবের যে মূল স্পিরিট ব্যাহত করছে, তাদের সরানোর কথা বলেছি। যারা গত ১৫ বছর ধরে পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছেন, তাদের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির কথা বলেছি। এ ছাড়া সুনির্দিষ্ট কারণে গ্রেপ্তারদের জামিন দেওয়া হচ্ছে, তা খুবই উদ্বেগজনক। অনেকে ফ্যাসিস্ট মন্ত্রী, এমপিরা পালিয়ে যাচ্ছেন, তারা কীভাবে পালিয়ে যাচ্ছেন তা আমরা প্রশ্ন রেখেছি।
বিচারবিভাগের বিষয়ে খু্ব স্পষ্ট করে বলেছি, বিচার বিভাগের যে হাইকোর্ট বিভাগ, যেখানে এখন পর্যন্ত খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। অথচ সেখানের বেশিরভাগ নিয়োগই ছিল দলীয় ভিত্তিতে। এমন প্রায় ৩০ জন বিচারক বহাল তবিয়তে কাজ করছেন। এদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা বলেছি। দলকানা বিচারকদের অপসারণের কথা বলেছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ফ্যাসিবাদের প্রধান শেখ হাসিনা ভারতে আছে। ভারত থেকে তার মাধ্যমে যে ভাবে ক্যাম্পেইন এবং অপপ্রচার চলছে, সে এই বিষয়গুলো করতে পারছে, কারণ সে ভারতে আছে। এসব বিষয়ে ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনার জন্য এবং তাকে ওই অবস্থা থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। তারা ভারত সরকারের সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে কথাও বলবেন।
পার্বত্যচট্টগ্রাম নিয়ে যেভাবে অপ্রচার করা হচ্ছে সেটাও বলেছি, আরও গভীরভাবে দেখে কারা জড়িত সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, গুম-খুনের সাথে যারা জড়িত মেজর জিয়াউল আহসান ছাড়া আর কাউকে ধরা হয়নি। আমরা দাবি করেছি, অবিলম্বে তাদের চিহ্নিতের মাধ্যমে গ্রেপ্তার করা হোক ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। জাতিসংঘের একটি দল এসেছে, কিন্তু বিভিন্ন বিভাগে যে সব কর্মকর্তা আছেন, তারা দুঃখজনকভাবে সহযোগিতা করছেন না।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, সম্প্রতি দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে আপনারা লক্ষ্য করেছেন, সনাতনী ধর্মের কিছু মানুষ, সবাই না, তারা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে জনগণকে উসকে দিচ্ছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। তারা অপপ্রচার চালাচ্ছেন, হিন্দু কমিউনিটির ওপর অত্যাচার নির্যাতন চলছে–এই ধরনের কথা বলতে চাচ্ছেন। এটা সবৈর্ব মিথ্যা। সবাই জানে এটা, আপনারাও দেখছেন। এটা তাদের সুদূর পরিকল্পনা যে, বাংলাদেশের মাইনোরিটিকে নির্যাতন করা হচ্ছে এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র বলে আমরা মনেকরি। এই কথাগুলো গুরুত্বসহকারে বিবেচনার জন্য বলেছি। এসবের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি।
নির্বাচন কবে হবে প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, মাস দিন ক্ষণ নিয়ে আমরা কোনো কথা বলিনি। উনি (ড. ইউনূস) আমাদেরকে যেটা বলেছেন, এটা হলো আমাদের এক নম্বর প্রয়োরিটি। নির্বাচন অনুষ্ঠান তাদের এক নম্বর প্রয়োরিটি। প্রধান উপদেষ্টা ‘কী ফিডব্যাক দিয়েছেন’ প্রশ্নে তিনি বলেন, অত্যন্ত সহৃদয়তার সঙ্গে তারা দেখছেন। তারা মনে করেন, আমাদের দাবি হলো জনগণের দাবি, আমাদের দবিগুলো তাদেরও দাবি
বিএনপি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রতিনিধি দলে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও সালাহউদ্দিন আহমেদ।