প্রায় ৩০ লাখ টাকা নিয়ে উধাও ছাত্রী হোস্টেলের পরিচালক
ফরিদপুর শহরের একটি ছাত্রী হোস্টেলের বোর্ডারসহ বিভিন্ন জনের কাছ থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে গেছেন আফসানা ছাত্রী হোস্টেলের পরিচালক। শহরের ঝিলটুলী মহল্লার ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন হাসপাতালের সামনে অবস্থিত ওই ছাত্রী হোস্টেল।
ওই ছাত্রী হোস্টেলের পরিচালক আফসানা মীম নিজের হোস্টেলের ছাত্রী ও বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া প্রায় ৩০ লাখ টাকা নিয়ে চম্পট দিয়েছেন বলে ভুক্তভোগীরা জানান। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন ভুক্তভোগীরা।
জানা যায়, প্রায় চার বছর আগে ঝিলটুলীর সুফিয়া বেগমের মালিকানাধীন ১১ তলাবিশিষ্ট রহমত টাওয়ারের ছয়টি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে ‘আফসানা ছাত্রী হোস্টেল’ নামে ওই মেসটি চালু করেন মধুখালি উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের মামুন মোল্লার মেয়ে আফসানা মীম। ছয়টি ফ্ল্যাটের বিভিন্ন কক্ষে প্রায় ১২০ জন ছাত্রী বোর্ডার রয়েছেন। একই বিল্ডিংয়ের আরেকটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে স্বামী ইমামুজ্জামান মিয়া ওরফে সাব্বিরকে নিয়ে সপরিবারে সেখানে থাকতেন তিনি। মাত্র ১৫ দিন আগে শহরের একটি হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে এক মেয়ে সন্তান জন্ম দেন তিনি।
ছাত্রী হোস্টেলের বোর্ডাররা জানান, বুধবার ভোরে হঠাৎ একটি হলুদ পিকআপ ও দুটি ভ্যানযোগে তার পরিবারের সব মালামাল নিয়ে উধাও হয়ে যান মীম। তার আগে মঙ্গলবার রাতে তিনি ওই হোস্টেলের সব ছাত্রীদের কারো কারো কাছ থেকে এক হাজার, আবার কারো কারো থেকে দই হাজার টাকা করে প্রায় ৫০ হাজার টাকা সংগ্রহ করেন। এরপর ভোরের দিকে লাপাত্তা হয়ে যান।
একাধিক ছাত্রী বলেন, অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে মীম প্রায় ৫০ লাখ টাকা দেনা হয়ে পড়েন। তিনি বিভিন্ন সময়ে আমাদের কাছ থেকেও টাকা নিয়েছেন। এ হোস্টেলের অনেক ছাত্রী চলে গেছেন। অনেকে এক মাস সময় চেয়েছেন। এখন গতকাল থেকে আমরা খেয়ে না খেয়ে আছি। অনেকের পরীক্ষা চলছে। সবাই খুব বিপদে আছে। এমনকি হোস্টেলের রান্নার পরিচারিকার থেকেও ২৫ হাজার টাকা ধার নিয়েছেন মীম।
হোস্টেলের রফিক নামে একজন বলেন, হোস্টেলের ছাত্রীদের ব্যাপারে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তারা এখানে নিরাপদেই আছে। তাদের সময় দেওয়া হয়েছে। অনেকেই মীমের কাছে টাকা পায় বলে জানতে পারছি। এসব পাওনাদাররা এখন আমাদের ফোন দিয়ে মীমের কাছে তাদের টাকা পাওনার কথা জানাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত যা খবর এসেছে তাতে মীম প্রায় ৩০ লাখ টাকা ধার করেছেন বিভিন্নজনের কাছে।
এ ঘটনায় কোতোয়ালী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই হোস্টেলের সামনের বিকাশের দোকানি মো. নিশাদ পাল। তিনি বলেন, আমার দোকানের বিকাশ নম্বর থেকে মীম টাকা লেনদেন করতেন। গত ২১ অক্টোবর মীম বিকাশের মাধ্যমে ৪০ হাজার টাকা নেন এবং ২২ তারিখে নগদ ৩০ হাজার টাকা নেন। গতকালই তার টাকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত বুধবার সকালে তার পালিয়ে যাওয়ার কথা শুনে আমার মাথায় হাত পড়েছে।
মীমের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানতে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদউজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আফসানা ছাত্রী হোস্টেলের পরিচালক আফসানা মীমের উধাও হওয়ার ঘটনায় ওই বিল্ডিংয়ের মালিকের পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। মীম তাদের দুই মাসের ভাড়া না দিয়ে চলে গেছেন। এ বিষয়ে আমাদের তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।