ইয়াবা বদির ম্যানেজার জাফর গ্রেপ্তার
শীর্ষ মাদক কারবারি, টেকনাফের আব্দুর রহমান বদি ওরফে ইয়াবা বদির ম্যানেজার ও টেকনাফ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জাফর আহম্মদকে রাজধানীর বাসাবো এলাকা হতে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। আজ শুক্রবার (১ নভেম্বর) রাতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাতে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখা থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, টেকনাফের ইয়াবা সিন্ডিকেটের ডন মাদক সম্রাট আব্দুর রহমান বদি ওরফে ইয়াবা বদির বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে পরিচিত ছিল সাবেক আলোচিত উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহম্মদ প্রকাশ মাফিয়া জাফর। সংসদ সদস্য থাকাকালে আব্দুর রহমান বদি নিজের নির্বাচনি এলাকা টেকনাফকে পরিণত করেছিলেন মাদক, চোরাচালান, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও হত্যার স্বর্গরাজ্যে। আর সেই স্বর্গরাজ্য কার্যক্রমের বিশ্বস্ত সহচর ছিল গ্রেপ্তার জাফর।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এক হাজার ২৭৫ জন মাদক কারবারিকে তালিকাভুক্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেই প্রতিবেদনে আব্দুর রহমান বদি ও তার ঘনিষ্ঠ সহচর জাফরকে ইয়াবা সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের অন্যতম মূল হোতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ২০১৯ সালে আত্মসমর্পণকারী মাদক কারবারীরা পূনরায় জামিনে বের হয়ে জাফরের নেতৃত্বে আবার সঙ্গবদ্ধ হয়েছে এবং ইয়াবা ব্যবসার ব্যাপক প্রসার ঘটিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, টেকনাফে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্রদের বিরুদ্ধে সকল হামলা ও কুকীর্তির নেতৃত্বে ছিল জাফর আহম্মদ প্রকাশ মাফিয়া জাফর। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পরপর টেকনাফের ঝর্নাচত্বর এলাকায় ছাত্র জনতার ওপর জাফরের নেতৃত্বে নির্বিচারে গুলি চালায় জাফরসহ তার লালিত শীর্ষ সন্ত্রাসীরা। হামলার সময় তাদের হাতে দুটি শর্টগান ও একটি পিস্তল দেখা গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী এবং স্থানীয় সূত্রে জানা যায়।
গত ১৮ আগস্ট ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা হত্যাচেষ্টা মামলার অন্যতম আসামি জাফর আহম্মদ প্রকাশ মাফিয়া জাফর। এই মামলার প্রধান আসামি ইয়াবা গডফাদার আব্দুর রহমান বদি ওরফে ইয়াবা বদি ইতিপূর্বে র্যাবের হাতে আটক হলেও তার বিশ্বস্ত সহযোগী জাফর এতদিন অধরাই ছিল। র্যাব তাকে গ্রেপ্তারের জন্য সব সময় সচেষ্ট ছিল। অবশেষে ব্যাপক তথ্য সংগ্রহ ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধির মাধ্যমে আজ ১ নভেম্বর রাতে ঢাকাস্থ পূর্ব বাসাবো এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে র্যাব-১৫ ও র্যাব-৩ এর যৌথ আভিযানিক দল জাফর আহম্মদকে (৬৭) গ্রেপ্তার করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, জাফর প্রথম জীবনে ছিলেন পান বাজারের শ্রমিক। সেখান থেকে হয়ে উঠেন শ্রমিক নেতা নামধারী দুর্ধর্ষ চাঁদাবাজ। এই চাঁদাবাজির অর্থে সে টেকনাফ সদরের উপজেলা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়। এরপর থেকে তার আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এরপর কৌশলে একটি রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত হয়ে টেকনাফ সদর ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। কালের পরিক্রমায় জাফর নানারূপে আবির্ভূত হয়ে আব্দুর রহমান বদির বিশ্বস্ত সহযোগী হয়ে মাদক সাম্রাজ্য সম্প্রসারনপূর্বক অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন।
ওয়ান ইলেভেনের সময় জাফর হলে কারাগারে আব্দুর রহমান বদি ওরফে ইয়াবা বদির সাথে তার সব সখ্যতা গড়ে ওঠে। এরপর সে রাজনৈতিক মতাদর্শ পরিবর্তন করে আব্দুর রহমান বদি ওরফে ইয়াবা বদির সাথে যুক্ত হয়ে অন্য একটি রাজনৈতিক দলে যোগ দেয় এবং আব্দুর রহমান বদির সহায়তায় চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়। এরপর জেলা পরিষদ সদস্য ও ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আবারও উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সরকার পতন হলে ১৯ আগস্ট দুই মাসের মাথায় স্বপদ হতে তাকে অপসারিত করা হয়।