একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় খালাস পেলেন আরিফুল ইসলাম
একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলামকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আজ রোববার (১ ডিসেম্বর) বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ আসামিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদন (ডেথ রেফারেন্স) ও আপিল আবেদনের ওপর শুনানি শেষে বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করে এ আদেশ দেন।
এ মামলায় সর্বমোট ৪৯ জন আসামিকে সাজা দিয়েছিল বিচারিক আদালত। তার মধ্যে কমিশনার আরিফুল ইসলামকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। এ মামলায় ২০০৯ সালে ৫ নভেম্বর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান। কিন্তু ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর জামিন বাতিল করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
আসামিদের আইনজীবী শিশির মনির বলেন, এ মামলায় বিচারিক আদালতে ভুলভাবে জাজমেন্ট দেওয়া হয়েছে। কেননা প্রকৃত আসামিদের বাদ দিয়ে রাজনৈতিকভাবে আসামি করা হয়েছে। এতে করে প্রকৃত আসামিরা সুযোগ পেয়ে মামলার আসামি তালিকা থেকে বেরিয়ে গেছে। তারেক রহমান, লুৎফুজ্জামান বাবর ও আব্দুস সালাম পিন্টুসহ যাদের আসামি করা হয়, তাদেরকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে করা হয়েছে। এটি কোনো সরকারের জন্য উচিত নয়। ফৌজদারী মামলায় ১০০ আসামি খালাস পেলেও ভুলভাবে একজনকেও সাজা দেওয়া যাবে না।’
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত যে আসামিরা খালাস পেলেন তারা হলেন—শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ ওরফের আবু ওমর, আবু হোমাইরা ওরফে পীরসাহেব, মাওলানা সাব্বির আহমদ ওরফে আবদুল হান্নান সাব্বির, আরিফ হাসান ওরফে সুজন ওরফে আবদুর রাজ্জাক, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, আবু বকর ওরফে সেলিম হাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম ওরফে আরিফ, মহিবুল মোত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন (পলাতক), আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন (পলাতক), মো. খলিল (পলাতক), জাহাঙ্গীর আলম বদর ওরফে ওস্তাদ জাহাঙ্গীর (পলাতক), মো. ইকবাল (পলাতক), লিটন ওরফে মাওলানা লিটন (পলাতক), তারেক রহমান ওরফে তারেক জিয়া (পলাতক), হারিছ চৌধুরী (পলাতক), কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ (পলাতক), মুফতি শফিকুর রহমান (পলাতক), মুফতি আবদুল হাই (পলাতক) এবং রাতুল আহম্মেদ বাবু ওরফে বাবু ওরফে রাতুল বাবু (পলাতক)।
নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যে আসামিরা খালাস পেয়েছেন তারা হলেন—সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, হানিফ পরিবহণের মালিক মো. হানিফ, জঙ্গিনেতা মাওলানা তাজউদ্দীন, মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, মাওলানা শেখ ফরিদ, মাওলানা আবু সাইদ, মুফতি মঈনউদ্দিন শেখ ওরফে আবু জান্দাল, হাফেজ আবু তাহের, মো. ইউসুফ ভাট ওরফে মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক, মফিজুর রহমান ওরফে মহিবুল্লাহ, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হোসাইন আহমেদ তামিম, রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ ও মো. উজ্জ্বল ওরফে রতন।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এতে দলটির নেতাকর্মীসহ ২৪ জন নিহত হন। এ ঘটনায় করা মামলায় (হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের) ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ রায় দেন। রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন ও ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের আদেশ দেন বিচারিক আদালত।
২০১৮ সালে বিচারিক আদালতের রায়সহ মামলা দুটির নথিপত্র হাইকোর্টে এসে পৌঁছায়, যা সংশ্লিষ্ট শাখায় ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়।