সতর্ক থাকুন দেশকে কেউ যেন বিভক্ত করতে না পারে : মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ওপারে পালিয়ে গিয়ে হাসিনা ষড়যন্ত্র করছে, চক্রান্ত করছে। সতর্ক থাকুন, এখন যেন কেউ দেশকে বিভক্ত করতে না পারে। আমরা সবাই এক। আমরা সবাই বাংলাদেশি। আমরা সবাই বাংলাদেশের উন্নয়ন চাই। এভাবেই আমাদেরকে কাজ করতে হবে।
রোববার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলে পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার সাকোয়া স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে সাম্য, সম্প্রীতি ও মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে দলীয় জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, হাসিনা মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে। এই দেশে বলে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার হচ্ছে। আমরা এই অঞ্চলের মানুষ শান্তিপ্রিয়। এখানে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাই একসাথে বাস করি। পুজোয় এখানে মন্দির পাহারা দিয়েছে আমাদের লোকজন। তারা আমাদের মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে বিপদে ফেলতে চাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, যারা লুটপাট করে তাদের সরিয়ে দিতে হবে। কেউ যেন আমাদের দেশের উপর অন্যায়ভাবে হাত না দেয়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। আওয়ামী লীগ আমাদের ওপর যে অত্যাচার করেছে তা আর কেউ করেনি। আলেম-ওলামাদের ফাঁসি দিয়েছে। আমাদের রাজনীতিবিদদের ধরে নিয়ে গেছে। জেলে দিয়েছে। এইভাবে কেউ যেন আর অন্যায় করতে না পারে সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে। এখন যেন কেউ দেশকে বিভক্ত করতে না পারে। আমরা সবাই এক। আমরা সবাই বাংলাদেশি। আমরা সবাই বাংলাদেশের উন্নয়ন চাই। এভাবেই আমাদেরকে কাজ করতে হবে।
বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, আমি আহ্বান জানাতে চাই সরকারি কর্মকর্তা, সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবিসহ সবাই আসুন আমরা একটা সুযোগ পেয়েছি; এই সুযোগটাকে কাজে লাগাই। আবার আমরা বাংলাদেশকে সব বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে গড়ে তুলি। একটা শান্তির দেশ, প্রেমের দেশ, উন্নতির দেশ হিসেবে গড়ে তুলি। আমাদের মাথায় যেন কেউ কাঁঠাল ভাঙতে না পারে, সেজন্য সজাগ থাকি।
মির্জা ফখরুল বলেন, যেখানেই যাচ্ছেন সেখানেই ঘুষ চাচ্ছে। ঘুষ আমরা আর দিবো না। আপনারা সবাই রুখে দাঁড়াবেন। যে ঘুষ চাইবে তাকে ধরে পুলিশে দিবেন। আবার পুলিশতো ঘুষ খায়। কিন্তু আমরা এই পুলিশ পরিবর্তন করতেছি। ওই পুলিশ এখন জনগণের পুলিশ হবে। এরকম একটা বাংলাদেশ আমরা চাচ্ছি। কেউ কেউ বলেন একাত্তর ভুলে যাবে। একাত্তর আমরা ভুলতে পারি না। একাত্তরে আমাদের একটা স্বাধীন দেশের জন্ম হয়েছে। আমি আমার নিজেকে চিনতে পেরেছি একাত্তর সালে। আমরা আমাদের জন্য একটা ভূখণ্ড তৈরি করতে পেরেছি। হাসিনা জনগণকে বোকা বানিয়ে জোর করে তিনটি নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতায় থেকেছে। সে ভেবেছিল কোনদিন ক্ষমতা থেকে যাবে না। তাকে সেনাবাহিনী দুটি অপশন দিয়েছিল। একটি হলো উত্তাল জনগণের দ্বারা পৃষ্ঠ হবেন না বাঁচার জন্য পালিয়ে যাবেন? যে নেত্রী বলেছিল আমি মুজিবের বেটি আমি পালাই না। সে জীবন নিয়ে তার নেতাকর্মীদের ছেড়ে বিপদে ফেলে পালিয়ে গেছে। এই হলো ফ্যাসিবাদের পরিণতি। আমরা ছাত্রদের ধন্যবাদ দিতে চাই তারা বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে আবার সুযোগ তৈরি করেছে যেন আমরা আবার দেশকে গণতান্ত্রিকভাবে গড়ে তুলতে পারি।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, আমরা হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিস্টান সবাই একসাথে বাস করি। আমরা সবাই মিলে সব ষড়যন্ত্র রুখে দিবো। আমাদের ওপর অন্যায়ভাবে দেশের ভিতরে যেন কেউ হাত না দেয়, সেই ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে।
বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের আয়োজনে কেন্দ্রীয় বিএনপির পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা সদস্য সচিব ফরহাদ হোসেন আজাদের সভাপতিত্বে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলুসহ সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, আব্দুল খালেক, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বেবি নাজনীন, বিএনপিনেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, পঞ্চগড় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাহিরুল ইসলাম বাচ্চু, সাবেক মেয়র তৌহিদুল ইসলামসহ দলের নেতাকর্মীরা। জনসভা শেষে বিএনপির মহাসচিব জুলাই বিপ্লবে নিহত ৬টি পরিবারের স্বজনদের হাতে আর্থিক সহায়তা তুলে দেন।