হাসিনা-জয়ের বিরুদ্ধে ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচারের প্রমাণ পেয়েছে এফবিআই
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম ও অর্থপাচারের প্রমাণ পেয়েছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)। লন্ডনের প্রতিনিধির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে সংস্থাটি। এফবিআইয়ের তদন্তে দেখা যায়, সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে হংকং এবং কেম্যান দ্বীপপুঞ্জের বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ ওয়াশিংটন ডিসি, নিউইয়র্ক এবং লন্ডনের ব্যাংকে স্থানান্তরিত হয়েছে। খবর গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পের।
সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ অর্থনীতির অবস্থা সম্পর্কিত শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে অবৈধ অর্থপাচারের কারণে বাংলাদেশ বছরে ১৬ বিলিয়ন হারিয়েছে। এরপর এমন একটি তথ্য এলো।
মার্কিন বিচার বিভাগের একজন সিনিয়র ট্রায়াল অ্যাটর্নি এবং একটি বিশেষ এজেন্ট নিশ্চিত করেছেন, বাংলাদেশ থেকে ৩০০ মিলিয়ন কেম্যান দ্বীপপুঞ্জ এবং হংকংয়ের শেল কোম্পানির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্যাংকে জমা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের সিনিয়র ট্রায়াল অ্যাটর্নি লিন্ডা স্যামুয়েলস স্পেশাল এজেন্ট লা প্রিভোটের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেখতে পান, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে।
৯ সেপ্টেম্বর মার্কিন ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশনের (এসিসি) মানি লন্ডারিং ও লিগ্যাল ইউনিটের মহাপরিচালক এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় বিপুল নথি হস্তান্তর করা হয়।
গত ১ অক্টোবর বাংলাদেশে ইইউ ডেলিগেশনের হেড অব কো-অপারেশন মাইকেল ক্রেজার নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল দুদকের তৎকালীন চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পাচার হওয়া তহবিল প্রত্যাবাসন ও কমিশনের পরিচালন সক্ষমতা বাড়াতে কারিগরি সহায়তা নিয়ে আলোচনা করেন।
বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়। দুর্নীতি বিরোধী সংস্থার কর্মকর্তারা দ্য গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হাসিনা এবং জয়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগটি বিশেষ তদন্তের জন্য দুদক মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো হয়েছে।
১৭ ডিসেম্বর দুদক মহাপরিচালক মো. আখতার হোসেন জানান, দুদক শেখ হাসিনা, জয়, হাসিনার বোন শেখ রেহানা, রেহানার কন্যা এবং ব্রিটিশ সংসদ সদস্য টিউলিপ সিদ্দিক এবং অন্যদের বিরুদ্ধে ৯টি উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সাত বিলিয়ন ডলার আত্মসাতের অভিযোগে পৃথক তদন্ত শুরু করেছে।
সূত্রমতে, এই ৯টি প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং বেপজা ও বেজার আওতাধীন অন্যান্য প্রকল্প। এরমধ্যে শুধুমাত্র রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকেই পাঁচ বিলিয়ন আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ব্রিটিশ ট্রেজারি মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশে একটি দুর্নীতিবিরোধী তদন্তে তার পরিবারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি ২০১৩ সালে রাশিয়ার সঙ্গে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং অস্ত্র হস্তান্তরের চুক্তি প্রক্রিয়ায় মধ্যস্থতা করেন, যার মাধ্যমে বিশাল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়।
এ বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঘটনাটি অনেকাংশে সত্য। আমরা ভবিষ্যতে আরও নির্দিষ্ট তথ্য পেতে পারি। এই বিষয়ে সরাসরি পরে কথা বলব।’
বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তাদের মতে, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের নাম প্রথম ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র বনাম রিজভী আহমেদ মামলায় উঠে আসে।
দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ঘটনাটি অনেকাংশে সত্য। আমরা ভবিষ্যতে আরও নির্দিষ্ট তথ্য পেতে পারি। এই বিষয়ে সরাসরি পরে কথা বলব।’