কাল থেকে কাজে যোগ দেবেন ট্রেইনি চিকিৎসকরা
মাসিক ভাতা পাঁচ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৩৫ হাজার করার প্রজ্ঞাপন মেনে নিয়ে কর্মবিরতি ও আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা। আজ সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. মিলন হলে আন্দোলনকারী ট্রেইনি চিকিৎসকদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে তারা কাজে যোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন।
আন্দোলন প্রত্যাহার প্রসঙ্গে আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিস সোসাইটির সভাপতি ডা. জাবির হোসেন বলেন, আমরা দীর্ঘ দুই বছর ধরে বারবার রাজপথে সংগ্রাম করেছি। আমরা যখনই ভাতা বৃদ্ধির দাবি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়েছি, তখন সবাই যৌক্তিক দাবি বলে শুধু আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা এই দাবি নিয়ে রাস্তায় না নামি, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। এবারও আমরা গত চার মাস যাবত সব জায়গায় গিয়েছি, সবার সঙ্গে কথা বলার পরই যখন আমরা সামগ্রিকভাবে এই সমস্যাটি সমাধান করতে পারছিলাম না, তখন আমরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হই।
ডা. জাবির হোসেন বলেন, বিগত একদিন আমরা শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করি, যার ফলশ্রুতিতে আমাদের ডাকা হয় এবং ভাতা বৃদ্ধির বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন আসে। সে প্রজ্ঞাপনে জানুয়ারি থেকে ত্রিশ হাজার টাকা এবং পরবর্তী জুলাই থেকে ৩৫ হাজার টাকা ভাতা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। এ অবস্থায় আমরা সার্বিক বিবেচনা করে সরকারের এ সিদ্ধান্ত মেনে নিচ্ছি এবং কাজে ফিরে যাচ্ছি।
ডা. জাবির হোসেন আরও বলেন, আগামীকাল (মঙ্গলবার) সকাল ৮টা থেকে আমরা কাজে ফিরব। তবে, কোনো কারণে যদি জুলাই থেকে ৩৫ হাজার টাকা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা না হয় এবং আমাদের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কথা চিন্তা করে যে ইনক্রিমেন্টের কথা আমাদের বলা হয়েছে, এ বিষয়টি মাথায় নিয়ে যদি সুন্দরভাবে সমাধান করা না হয় তাহলে আমরা চিকিৎসকরা আবারও রাস্তায় নামতে বাধ্য হব। আমরা চাই না আমাদের এভাবে প্রতিবার রাস্তায় নামানো হোক। আমরা দাবি মেনে নিচ্ছি। তবে, যদি প্রয়োগ না হয় তাহলে আবার রাস্তায় নামব কথা দিচ্ছি।
আরও পড়ুন : কাল থেকে কাজে যোগ দেবেন ট্রেইনি চিকিৎসকরা
সারাদেশে প্রায় ১০ হাজার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসক রয়েছেন। দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে উচ্চতর শিক্ষার পাশাপাশি তারা হাসপাতালে রোগীদের সেবা দেন।
ভাতা বাড়ানোর দাবিতে ২০২২ সাল থেকে আন্দোলন চালিয়ে আসছে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা। তাদের আন্দোলনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে জুলাই মাসে মাসিক ভাতা পাঁচ হাজার টাকা বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা করা হয়। ওই ভাতা ‘যৌক্তিক নয়’ দাবি করে আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন আন্দোলনকারীরা।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এলে আবারও ভাতা বাড়ানোর দাবিতে সড়কে নামেন চিকিৎসকরা। গত ২২ ডিসেম্বর তারা শাহবাগে সড়ক অবরোধ করলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে তারা দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে সড়ক ছেড়ে দেন।
পরে গত ২৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসের (বিসিপিএস) এফসিপিএস প্রথম পর্ব পাস করা অবৈতনিক প্রশিক্ষণার্থীদের পারিতোষিক ভাতা পাঁচ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা করার প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। সেটা প্রত্যাখ্যান করে রোববার রাজধানীর শাহবাগে সড়ক অবরোধ করেন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎসকরা। তাদের দাবি ভাতা বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করতে হবে। পরে দুপুরের পর প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমানের হেয়ার রোডের বাসায় আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। সেখানে ভাতা বাড়িয়ে ৩৫ হাজার করার সিদ্ধান্ত হয়, যা জুলাই থেকে কার্যকর হবে। আজ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হলে ট্রেইনি চিকিৎসকরা তা মেনে নিয়ে আগামীকাল থেকে কাজে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দেন।