চট্টগ্রাম বন্দরে আটকা আ.লীগের সাবেক এমপিদের বিলাসবহুল গাড়ি
আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্যদের (এমপি) শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা বেশকিছু বিলাসবহুল গাড়ি গত পাঁচ মাস ধরে চট্টগ্রাম বন্দরে পড়ে আছে। এসব গাড়ি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) জন্য জটিলতা তৈরি করছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাবেক সংসদ সদস্যদের গাড়িগুলো না নিতে পারায় নিয়ম অনুযায়ী সেগুলো নিলামের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর। এই পদক্ষেপে সরকারের কমপক্ষে ৪০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে এসব বিলাসবহুল গাড়ি বন্দরের কারশেডে পার্কিং করে রাখা আছে। আমদানিকারকদের গত ১৪ অক্টোবরের মধ্যে এগুলো সরিয়ে নেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তারা তা করতে ব্যর্থ হয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষকে নিলামের জন্য ২৪টি গাড়ির কাগজপত্র চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে স্থানান্তর করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস ইতোমধ্যে আমদানিকারকদের ২৪টি গাড়ির জন্য মোট সাড়ে আট কোটি টাকা শুল্ক পরিশোধের জন্য অনুরোধ করেছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার পতনের পর এমপিরা পালিয়ে যাওয়ায় শুল্কমুক্ত সুবিধা ব্যবহার করে আমদানি করা এসব গাড়ির জন্য কেউ আসেননি।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের উপকমিশনার মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, আমদানিকারকরা প্রয়োজনীয় শুল্ক পরিশোধ করে গাড়িগুলো নিতে পারবে। অন্যথায়, সেগুলো নিলামে তোলা হবে।
জাপান থেকে আনা প্রতিটি গাড়ির আনুমানিক আমদানি মূল্য এক কোটি থেকে দেড় কোটি টাকা। শুল্ক সংযোজনের ফলে প্রতিটির বাজারমূল্য ১২ কোটি থেকে ১৫ কোটি টাকা দাঁড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বন্দরে জায়গা খালি করার জন্য নিলাম বা আমদানিকারক ছাড়পত্রের মাধ্যমে গাড়িগুলো সরিয়ে নেওয়ার ওপর জোর দেন। তবে নিলাম ছাড়াই গাড়ি আমদানিকারকদের কাছে হস্তান্তর করা হলে সম্ভাব্য আইনি জটিলতা নিয়ে উদ্বিগ্ন কোনো কোনো কর্মকর্তা।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস বিডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ‘এনবিআরের স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত হলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে গাড়িগুলো যথাযথ পদ্ধতিতে নিলাম করা উচিত।’
বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সহসভাপতি মো. গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী বিলাসবহুল এই গাড়িগুলো নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, কাস্টমস হাউসের উচিত জরুরি ভিত্তিতে আমদানিকারকদের চিঠি দেওয়া এবং নিলামের ব্যবস্থা করা।
একইসঙ্গে আমদানি করা ৪২টি বিলাসবহুল গাড়ির মধ্যে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনসহ হাই-প্রোফাইল ব্যক্তিদের সাতটি গাড়ি গত বছরের জুলাইয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়। অভিনেত্রী ও সাবেক এমপি তারানা হালিম ও জান্নাত আরা হেনরিসহ বাকিদের গাড়িগুলো এখনও বন্দরে আটকে আছে।