প্লাস্টিক পাদুকা শিল্পে ভ্যাট অব্যাহতি পুনর্বহালের দাবিতে মানববন্ধন
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/09/keraniganj_news_pic.jpg)
প্লাস্টিক পাদুকা শিল্পে ভ্যাট অব্যাহতি পুনর্বহালের দাবিতে বাংলাদেশ পাদুকা প্রস্তুতকারক সমিতির উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্লাস্টিক ও রাবারের তৈরি হাওয়াই চপ্পল এবং প্লাস্টিক পাদুকা (১৫০ টাকা মূল্য সীমা পর্যন্ত) উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি ও পূর্বের ভ্যাট পুনর্বহালের দাবিতে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকা, কেরানীগঞ্জসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা বিভিন্ন কারখানার মালিক, শ্রমিক ও পাদুকা প্রস্তুতকারক সমিতির নেতারা হাওয়াই চপ্পলের ওপরে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন সরকারের কাছে। অন্যথায় তাঁরা বৃহত্তর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
মানববন্ধনে সমিতির নেতারা বলেন, প্লাস্টিক পাদুকার আগের অব্যাহতির সুবিধা বাতিল করে ১৫ পার্সেন্ট ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পাদুকা শিল্প মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবে ।
মানববন্ধনে সমিতির উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, প্লাস্টিক ও রাবারের তৈরি হাওয়াই চপ্পল এবং পাদুকার ওপরে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করার প্রস্তাব অযৌক্তিক ও দুঃখজনক। গরিব মানুষের পণ্যের ওপর এই ধরনের ভ্যাট আরোপ করা মড়ার উপরে খাঁড়ার ঘায়ের মতো । এই প্রস্তাব কার্যকর হলে এই সাশ্রয়ী পণ্য সাধারণ জনগণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। বিশেষ করে শ্রমজীবী দিনমজুর কৃষক রিকশা-ভ্যানচালক ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রায় এর বিরূপ প্রভাব পড়বে।
সাখাওয়াত হোসেন আরও বলেন, ভ্যাট অব্যাহতির ফলে সরাসরি পণ্যের উৎপাদন খরচ উল্লেখযোগ্য হারে কমে গিয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় নিম্ন আয়ের ক্রেতা সাধারণের ক্রয় ক্ষমতা বিবেচনায় এত উচ্চমূল্য স্থিতি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে ১৫০ টাকা মূল্যের রাবার ও প্লাস্টিকের চপ্পল সরবরাহ অব্যাহত রেখেছেন বাংলাদেশ পাদুকা প্রস্তুতকারক সমিতির সদস্যরা। এর মাধ্যমে দেশে নিম্নের মানুষ সাশ্রয়ী দামে তাদের প্রয়োজনীয় হাওয়াই চপ্পল ও পাদুকা ক্রয় করতে পারছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য এই পণ্যগুলো অত্যাবশ্যকীয়। কারণ এগুলো গরিবের সাশ্রয়ী পণ্য।
সাখাওয়াত হোসেন আরও বলেন, পাদুকা শিল্পের এই কম মূল্যের পণ্যের কাঁচামাল হচ্ছে পরিত্যক্ত রাবার ও প্লাস্টিকের চপ্পল জাতীয় অপচনশীল দ্রব্যাদি, যা সংগ্রহ করা হয় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে। এসব সংগ্রহের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য তথা জমির ঊর্বরতা বৃদ্ধি ও জলাবদ্ধতা রোধে সহায় ভূমিকা পালন করে। ভ্যাট অব্যাহতির ফলে তারা রিসাইক্লিং কার্যক্রম আরও সম্প্রসারিত করতে পেরেছিল। এতে একদিকে যেমন উৎপাদন খরচ কমেছে অন্যদিকে পরিবেশ দুষণমুক্ত রাখতে পেরেছে।
সাখাওয়াত হোসেন আরও বলেন, এসব বিবেচনায় ভ্যাট আইনের শুরু থেকেই আমাদের উৎপাদিত প্লাস্টিক ও রাবারের পাদুকা শিল্পকে ভ্যাট অব্যাহতির সুযোগ দিয়ে আসা হয়। ফলে গরিব জনগোষ্ঠীর জন্য সাশ্রয়ী দামে পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করছে প্লাস্টিক পাদুকা শিল্প।
পাদুকা শিল্পে ভ্যাট আরোপ করা হলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে এবং বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে উল্লেখ করে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, তাই বাংলাদেশ পাদুকা প্রস্তুতকারক সমিতি মনে করছে, গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে দেশে যেখানে উচ্চমূল্য স্থিতি বিরাজ করছে সেখানে ভোক্তার কাছ থেকে কোনোভাবেই ১৫% ভ্যাট আদায় করা সম্ভব নয়। গরিবের এই পণ্যের দাম বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়। কারণ গরিব মানুষের পণ্যের দাম বাড়লে তারা এই পণ্যটি ক্রয় করতে হিমশিম খাবে এবং পণ্যের উৎপাদন কমে যাবে। উৎপাদন কমে গেলে কারখানা মালিক ও শ্রমিক উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এই পাদুকা শিল্প ব্যবসা ৪০ থেকে ৫০% কমে গেছে মন্তব্য করে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এই অবস্থায় ভ্যাট বাড়লে পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। এই হাওয়াই চপ্পল পণ্যের ওপর কেন বা কী কারণে ভ্যাট আরোপ হবে সে ব্যাপারে সরকার পরিষ্কার কোনো ধারণা দিতে পারেনি ব্যবসায়ীদের ।
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/very_big_1/public/images/2025/02/09/keraniganj_news_pic_in.jpg)
ব্যবসায়ীদের মতে নিম্ন আয়ের এই পণ্যের ওপর ভ্যাট ও করের বোঝা চাপানো হলে দেশের শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের বৃহৎ জনগোষ্ঠী যথা কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশা-ভ্যানওয়ালাসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর ভোক্তারা ক্রয় ক্ষমতা আড়ালে এই পণ্যের কারখানা কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে বাংলাদেশ পাদুকা প্রস্তুতকারক সমিতি।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পাদুকা প্রস্তুতকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস রানা, সিনিয়র সহসভাপতি মো. রেজাউল করিম, সহসভাপতি আশরাফ উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান রহমান সাজু, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আতিকুর রহমান, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যসহ অন্যান্য নেতা এবং বিভিন্ন পাদুকা প্রতিষ্ঠানের মালিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কারখানা শ্রমিকরা।