‘হাসিনার ফাঁদে পা দিতে চায় না বলেই বিএনপি নির্বাচনের দাবি করছে’
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/10/dudu.jpg)
হাসিনার ফাঁদে পা দিতে চায় না বলেই বিএনপি নির্বাচনের দাবি করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। তিনি বলেছেন, অনেকেই নির্বাচনের বিরোধিতা করছে। বিএনপির নামে অপবাদ দিচ্ছে, অপপ্রচার চালাচ্ছে। তবে বিএনপি এদেশের মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে চায়। দেশের বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র ধ্বংস করতে চায়। দেশের জনগণের জন্য কাজ করতে চায়।
আজ সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নির্বাচন বাধাকারীদের উদ্দেশ্যে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, যারা নির্বাচনে বাধা দিচ্ছে তারা তো অনেক বড় নেতা, অনেক বড় আন্দোলনকারী। নির্বাচন দিলে তো আপনারা জয়ী হওয়ার কথা। নির্বাচন দিলে সমস্যা কোথায়? আমি ব্যক্তিগতভাবে একটা কথা বলি, আগামী নির্বাচনে বিএনপি তো জিতবেই। তারপরের নির্বাচনও বিএনপি জিতবে। কেন জিতবে? কারণ বিএনপি জনগণের মধ্যে থাকতে চায়।
সাবেক এই সদস্য সংসদ আরও বলেন, বিএনপি যে ৩১ দফা দিয়েছে তা গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে দিয়েছে। এই ৩১ দফা পরেন তাহলে সংস্কার কি এক ঘণ্টার মধ্যে জেনে যাবেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, উদ্দেশ্য সৎ থাকলে বিএনপি'র ৩১ দফা পরতেন। তা না করে শুধু সংস্কার সংস্কার করেন। একজন শুধু উন্নয়ন উন্নয়ন করেছে। আর আপনারা শুধু সংস্কার সংস্কার করছেন। এগুলো বাদ দিতে হবে। মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের পরে শেখ মুজিবুর রহমান ব্যর্থ হয়েছিলেন একটি ভালো নির্বাচন দিতে। যে কারণে ৭৩ সাল থেকে সংকট শুরু হয়েছিল। সে সংকট কাটিয়েছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। এরপরে সংকট কাটিয়েছিলেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এবার সংকট কাটাবেন তারেক রহমান।
উপদেষ্টাদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করতে পারেন না। আমাদের যারা সমন্বয়ক আছে তারা গাজীপুরে গিয়েছিল তাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। লজ্জা থাকা উচিত আপনারা সরকারে থাকা অবস্থায় এ ধরনের ঘটনা ঘটে।
কৃষক দলের সাবেক এ আহ্বায়ক বলেন, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপি লড়াই করছে। যারা মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছে, দেশ থেকে লক্ষ লক্ষ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে, তাদের বিচারের দাবিতে এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে বিএনপি কর্মসূচি দিয়েছে। প্রয়োজন পড়লে তারা রাজপথে নামবে এবং মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করবে। ঐক্যবদ্ধ ছাড়া আমাদের মুক্তির কোনো পথ নেই।
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ১৯৯১ সালে একজন প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি হয়ে তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে একটি রাজনৈতিক দলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে আবার প্রধান বিচারপতি পদে ফিরে গিয়েছিলেন। এ রাজনৈতিক দলের নেত্রী ছিলেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তিনি স্বৈরাচার এরশাদের যত আবর্জনা ছিল তা পরিষ্কার করেছিলেন। শেখ মুজিব আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা চালু করেছিল। তিনি (বেগম খালেদা) রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থা থেকে সংসদীয় ব্যবস্থায় এনেছিলেন।
ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, বাংলাদেশে যত অপকর্ম হয়েছে তা শেখ মুজিবুরের আমলে এবং শেখ হাসিনার আমলে। শেখ মুজিবুর রহমান রক্ষী বাহিনী তৈরি করেছিল। বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছিল। দেশের দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করে লাখ লাখ মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিল। দেশে এক দল কায়েম করেছিল। সেই ব্যবস্থা থেকে বাংলাদেশকে পুনরায় মুক্ত করেছিলেন স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তিনি একটা একটা করে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। যিনি রাজনৈতিক নেতা ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান তিনি দেশে স্বৈরশাসক প্রতিষ্ঠা করেন। আর যিনি মুক্তিযুদ্ধ করে চাকরিতে ফিরে গিয়েছিলেন। যার কাছে আশা করেনি তিনি জিয়াউর রহমান দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। সকল রাজনৈতিক দলকে রাজনীতি করার ব্যবস্থা করেন। সকল বন্ধ সংবাদপত্র খুলে দেন। এই জাতিকে উদ্বুদ্ধ করে কৃষি খাতে অমুল পরিবর্তন আনেন। বিদেশে চাল রপ্তানির ব্যবস্থা করেন।
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কাছে শেখ হাসিনা ১৯৯১ সালে পরাজিত হয়েছে এবারও বেগম খালেদা জিয়ার কাছে শেখ হাসিনা পরাজিত হয়েছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শত নির্যাতনের মধ্যেও দেশ ছেড়ে পালায়নি। প্রমাণ করেছে তিনি দেশের নেত্রী, দেশের মানুষের নেত্রী। অপরদিকে শেখ হাসিনা এই দেশের মানুষের নেত্রী তো না, সে একজন ডাকাত, খুনি, লুটেরা। তিনি ভারতে আশ্রয় নিয়ে এখনও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন। যে ষড়যন্ত্রের কারণে বাংলাদেশে অবস্থানরত আওয়ামী লীগরা অনিরাপদ হয়ে গেছে। বিশৃঙ্খলা বিএনপি পছন্দ করে না। কিন্তু আওয়ামী লীগ উস্কানি দিলে তার পরিণতি তাকে ভোগ করতে হবে।
আয়োজক সংগঠনের মহাসচিব হুমায়ূন কবির বেপারীর সভাপত্বিতে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের ডাইরেক্টর আমিরুল ইসলাম কাগজী, জাসাস সাবেক সভাপতি রেজাবুদ্দৌলা চৌধুরীসহ প্রমুখ।