অপারেশন ডেভিল হান্টে পুলিশ কর্মকর্তারাও ছাড় পাননি : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/10/rajshahi_home_advisor_news_photo.jpg)
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ছোট শয়তান বড় শয়তান বলে কোনো ভেদাভেদ নেই। যারা শয়তানি করবে, তারাই অপারেশন ডেভিল হান্টের জালে ধরা পড়বে। আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও ছাড় দেইনি। অপারেশনের প্রথম দিনই পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আজ সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজশাহী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের বিভিন্ন বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সারা দেশে এই অভিযান চলছে, একজন শয়তান বাইরে থাকা পর্যন্ত এই অভিযান চলবে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘ডেভিল শব্দের অর্থ শয়তান। যারা শয়তান, তারাই ধরা পড়বেই।’
‘বড় শয়তান’ ধরা পড়ছে না এমন প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ডেভিল হান্ট ডিক্লিয়ার করার পর আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদেরও আমরা ছাড় দিইনি। প্রথমদিনই পাঁচজনকে আইনের আওতায় নেওয়া হয়েছে। সুতরাং, ছোট-বড় ব্যাপার না। যে আসবে এই জালে, সে ধরা পড়বে।’
অভিযানে কিংবা মিথ্যা রাজনৈতিক মামলায় কোনো নির্দোষ ব্যক্তি যেন শাস্তি না পায়, সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্দোষ ব্যক্তি কোনো অবস্থায় যেন শাস্তি না পায়, সেজন্য যত ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন আমরা নিচ্ছি। আইজিপি সাহেব এখানে আছেন। ওনার ওখানে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। এসপি, ডিসি, লিগ্যাল এইড অফিসার থাকবেন। এর পরও ওপরে আরেকটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। যারা মিথ্যা মামলা করেছে, আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আইনের ভেতরে থেকে যতটা সম্ভব তাদের জন্য করবেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘বিগত আওয়ামী সরকারের সময়ে যারা ভুক্তভোগী, তারা অবশ্যই আইনগত সহায়তা পাবে। শুধু আমাদের এখান থেকে না। লিগ্যাল এইড ডিপার্টমেন্ট আছে, ওই দিক থেকেও সহায়তা পাবে।’
চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা চাকরি ফিরে পাবেন কি না, জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘কেউ যদি দোষী হয়ে চাকরি হারায়, তারে কি ফেরানো উচিত? আপনারা যদি না বলেন, তাহলে আমিও না বলব। যদি নির্দোষ হয়ে থাকে, সেটা তো আদালতের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে।’
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে বাংলাদেশ নিয়ে গুজবের বিরুদ্ধে ‘সোচ্চার’ অবস্থান নেওয়ায় সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানান জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
উপদেষ্টা বলেন, ‘তারা (ভারতীয় সংবাদমাধ্যম) মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করেছে। ওটার বিরুদ্ধে আপনারা (বাংলাদেশি সাংবাদিকেরা) খুবই সোচ্চার ছিলেন। আপনারা সত্য সংবাদটা প্রকাশ করেছেন। সেজন্য আমি আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। সত্য সংবাদ প্রকাশ করার কারণে পাশের দেশ আর আগের মতো করে না (গুজব ছড়ায় না)।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে ভারতীয় নাগরিকদের প্রতিহত করায় চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসীকেও ধন্যবাদ জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আপনাদের এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসীকে ধন্যবাদ জানাই। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কাজ করে পাশের দেশকে জবাব দিয়েছেন। তার পরও আমি বলব, কেউ যেন আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়। এটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই দেখবে। কিন্তু ওই সময় যারা এগিয়ে এসেছেন, তাঁরা ভালো কাজই করেছেন।’
গরু আনতে গিয়ে বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রাণহানির বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের লোকদের একটু সচেতন করতে হবে। হরিয়ানা থেকে গরুটা কিন্তু হেঁটে হেঁটে আসে না। তাদেরই (ভারতীয়) চোরাকারবারীরা নিয়ে আসছে, কিন্তু তারা বর্ডারটা ক্রস করে না। আমাদের এরা ওদিকে যাচ্ছে। আমাদের মনে হয় গরু চোরাচালানি কমে যাবে, কারণ খামারিরা উৎপাদন বাড়িয়েছেন। হয়তো একটা সময় আসবে আমাদের ওই দিকের (ভারতের) গরু প্রয়োজনই হবে না।’
রমজানে নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির শঙ্কা নিয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘রমজানের ভেতর কিন্তু দুইটা দিক আপনাদের খেয়াল রাখতে হবে। রমজানটা কিন্তু মুসলমানদেরই। অন্যান্য ধর্মে দেখবেন, যখন তাদের উৎসব থাকে, তারা জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে দেয়। আমাদের সময় কিন্তু রমজানের সময় দাম বাড়িয়ে দেয়। দাম বাড়ানোটা তারা সওয়াব হিসেবে নেয় কি না আমি জানি না।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘দাম বাড়ানোটা কিন্তু সওয়াব না। এই যে তারা (ব্যবসায়ীরা) মানুষের ভোগান্তি করছে, এ জন্য শুধু জনগণের কাছে না, এ জন্য তারা উপরওয়ালার কাছেও দায়ী থাকবেন।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমি আশা করছি, এবার জিনিসপত্রের দাম সহনীয় থাকবে, যেহেতু আমাদের ডাল, ছোলার আমদানি পর্যাপ্ত। খেজুরসহ অন্য জিনিসপত্রেরও সরবরাহ খুবই ভালো।’
দেশে সারের কোনো সংকট নেই বলেও জানান স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘কোনো জায়গায় সারের সংকট দেখাতে পারবেন না। কোনো জায়গায় যদি সংকট হয়, ডিসি সাহেবের সঙ্গে কথা বলেন। ব্যবস্থা হবে। এখন কিছু কিছু ডিলার শয়তানি করছে। দামও হয়তো একটু বেশি নিচ্ছে। এদের ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ সময় পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ, জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতারসহ বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিকদের ব্রিফ করার আগে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে তাঁদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।