বাণিজ্য বাধা কমাতে সামুদ্রিক যোগাযোগ বৃদ্ধিতে জোর পররাষ্ট্র উপদেষ্টার

পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ভারত মহাসাগর এবং এর বাইরে থাকা সব জাতির জন্য একটি উজ্জ্বল, আরও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে সামুদ্রিক যোগাযোগ সহজতর করা এবং বাণিজ্য বাধা হ্রাস করার ওপর জোর দিয়েছেন।
ওমানের রাজধানী মাসকাটে আজ রোববার ৮ম ভারত মহাসাগর সম্মেলনে ‘মেরটাইম সাপ্লাই চেইন শক্তিশালীকরণ : বাধা অতিক্রম এবং স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক অধিবেশনে বক্তৃতাকালে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের সামুদ্রিক সংযোগ সহজতর করতে হবে, বাণিজ্য বাধা কমাতে হবে।’
উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, পণ্য, সেবা ও জনগণের দক্ষ চলাচলের সুবিধার্থে, খাদ্য নিরাপত্তা, জ্বালানি নিরাপত্তা, পানি সহযোগিতা, দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস এবং বৈশ্বিক জনসাধারণের পণ্যের ন্যায্য প্রবেশাধিকারের অগ্রগতির জন্য বাংলাদেশ সামুদ্রিক সহযোগিতাকে জোরালো গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ভারত মহাসাগর অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য একটি স্থিতিশীল এবং উন্নত ভবিষ্যত নিশ্চিতে সম্ভাব্য সমস্ত ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার সুযোগগুলো খুঁজে বের করা অপরিহার্য। তিনি বলেন, ‘আমরা (বাংলাদেশ) ভারত মহাসাগরজুড়ে আমাদের অংশীদারিত্ব জোরদার, উদীয়মান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং এই অঞ্চলের অসাধারণ সুযোগগুলো গ্রহণ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
তৌহিদ হোসেন বলেন, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সমস্ত উপকূলীয় দেশ, সেইসঙ্গে আশপাশের সাগর-উপসাগরের প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য বিশ্বাস, সম্মান এবং অভিন্ন স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করা উচিত।
মূল সামুদ্রিক রুটে দুর্বলতার কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতি, খাদ্য নিরাপত্তা ও জ্বালানি সরবরাহ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে ইঙ্গিত করেন উপদেষ্টা।
নিয়ন্ত্রক ও প্রশাসনিক বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘জলদস্যুতা, সশস্ত্র ডাকাতি, মানব পাচার, অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা এবং অন্যদের মধ্যে অবৈধ ও অনিয়ন্ত্রিত মাছ ধরার সামুদ্রিক নিরাপত্তা হুমকি মোকাবিলা করার জন্য আমাদের যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।’
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ভিসা ব্যবস্থাকে বিশেষ করে পদ্ধতি এবং সমুদ্রযাত্রীদের জন্য অন্যান্য প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সহজ করার মাধ্যমে ভিসা উদারীকরণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
বন্দর জট, ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা, নিয়ন্ত্রক, অপারেশনাল ও প্রশাসনিক সমস্যা, সাইবার আক্রমণ, জলদস্যুতা এবং ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার মতো অনেক চ্যালেঞ্জের জন্য সামুদ্রিক সরবরাহ শৃঙ্খল ঝুঁকিপূর্ণ, যা মেরিটাইম সাপ্লাই চেইনের দক্ষতাকে ব্যাহত করতে পারে বলে সতর্ক করেন তৌহিদ হোসেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এসব চ্যালেঞ্জ এবং অন্যান্য ভূ-অর্থনৈতিক ও ভূ-কৌশলগত কারণগুলোর জন্য দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই দুর্বলতাগুলো মোকাবিলা করতে এবং সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।’
‘মহাসাগরগুলো কেবল বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চালিকা শক্তি নয়, খাদ্য নিরাপত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস, এটাও আমাদের মনে রাখতে হবে’ বলেও উল্লেখ করেন উপদেষ্টা।
তৌহিদ হোসেন বলেন, মেরিটাইম সাপ্লাই চেইনকে শক্তিশালী করার জন্য প্রযুক্তি, অবকাঠামোগত উন্নতি, কৌশলগত পরিকল্পনা, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার কৌশল এবং আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতার সমন্বয়ে একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি জড়িত। তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই সংরক্ষণ এবং সমুদ্র ও উপকূলীয় সম্পদের টেকসই ব্যবহারকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, যাতে এই সম্পদের ব্যবহার সমুদ্র ও উপকূলীয় পরিবেশের স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ না হয়।’
একটি সমুদ্র উপকূলীয় রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ দীর্ঘকাল ধরে সামুদ্রিক কার্যকলাপের কেন্দ্র ছিল, কারণ এটি ভারতীয় মহাসাগর রিম অ্যাসোসিয়েশন এবং আন্তর্জাতিক সমুদ্রতল কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক প্ল্যাটফর্মে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে বলেও জানান উপদেষ্টা।
ওমানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের অষ্টম ভারত মহাসাগর সম্মেলন। এ বছর ভারত মহাসাগর সম্মেলনের থিম হলো—‘সমুদ্র অংশীদারিত্বের নতুন দিগন্তের যাত্রা’।