অযত্নে অবহেলায় ভাষাশহীদ আবদুল জব্বারের নামে শহীদ মিনার

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের শিমুলকুচি গ্রামে ভাষাশহীদ আবদুল জব্বারের নামে একটি শহীদ মিনার, একটি মসজিদ ও পাঠাগার এবং আবদুল জব্বার স্মৃতি ফাউন্ডেশন, একটি স্কুল অ্যান্ড কলেজ রয়েছে। তবে মসজিদটি উপজেলা পরিষদের বরাদ্দে সংস্কার করা হলেও জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে তার নামে শহীদ মিনার। পাকা সড়ক থেকে শহীদ মিনার হয়ে জব্বারের বাড়ি যাওয়ার সড়কটিও বেহাল। যেতে হয় হেঁটে।
জব্বারের নামে করা বিভিন্ন স্থাপনা ও সড়ক সংস্কার করে এই ভাষাশহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনসহ নতুন প্রজন্মর কাছে তাঁর জীবনী তুলে ধরার দাবি পরিবার ও এলাকাবাসীর।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ভাষাসৈনিক শহীদ আবদুল জব্বারের জন্মস্থান ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায়। ১৯৫০ সালের শেষ দিকে হালুয়াঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী গাজিরভিটা ইউনিয়নের শিমূলকুচি গ্রামে পরিবারের সবাইকে নিয়ে চলে আসেন। তখন আবদুল জব্বার আনসার বাহিনীর প্লাটুন কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে তিনি হন। এরপর ছেলে নূরুল ইসলাম বাদল ও স্ত্রী আমেনা খাতুন বসবাস করতে থাকেন এই গ্রামে।
১৯৭৮ সালে মারা যান জব্বারের মা সাফাতুন্নেছা। পরে তাকে স্থানীয় কবরাস্থানে দাফন করা হয়। ভাষাশহীদের স্মৃতি রক্ষায় ২০০০ সালের দিকে ভাষাশহীদের ছোট ভাই আবদুল কাদিরের দেওয়া ২৫ শতাংশ জমিতে ‘ভাষাশহীদ আবদুল জব্বার জামে মসজিদ ও পাঠাগার’ নির্মাণ করা হয়। ২০০৭ সালে গড়ে তোলা হয় ‘ভাষাশহীদ আবদুল জব্বার ফাউন্ডেশন’। এই ফাউন্ডেশনটি ২০১০ সালে মন্ত্রণালয় থেকে নিবন্ধন পায়। বাড়ির পাশে ২০০৮ সালে জব্বারের স্ত্রী আমেনা খাতুন স্বামীর স্মৃতি রক্ষায় ব্যক্তিগত আট হাজার টাকা খরচ করে ছোট আকারে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করেন। এরপর থেকে স্থানীয়রা ২১ ফেব্রুয়ারির দিন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেন করতেন।
এই শহীদমিনারকে সংস্কারের জন্য ছেলে বীরমুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম বাদল জেলা পরিষদে আবেদন করেন। আবেদনের পরিপেক্ষিতে জেলা পরিষদ ২০১০ সালে একটি শহীদ মিনার স্থাপন করে। তবে দীর্ঘ ১৫ বছরে শহীদ মিনারটি সংস্কারের অভাবে এখন প্রায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে আছে। ২০১১ সালে মারা যান জব্বারের স্ত্রী আমেনা খাতুন। পরে তাঁর মরদেহ জব্বার জামে মসজিদের পাশেই সমাহিত করা হয়। এদিকে ছেলে বীরমুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম মারা যান ২০২১ সালে। তাঁর মরদেহ বাড়ির পাশেই কবর দেওয়া হয়। কবরটি বাঁশের বেড়া দিয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে। পরিবারে উদ্যোগে তাঁর কবর ঘিরে তৈরি করা হয়েছে পারিবারিক কবরস্থান। সেই সঙ্গে তৈরি করা হয়েছে ইটের দেয়াল।
শহীদ জব্বারের ভাতিজি রাশিদা বেগম (৫০) বলেন, ‘২১ ফেব্রুয়ারি ও আগের দিন মানুষজন ভাষাশহীদের খোঁজখবর নিলেও ২২ তারিখ থেকে মনে থাকে না কারও। পাকা সড়ক থাইকা ৮০০ মিটার কাঁচা সড়ক পারি দিয়া খেতের বাতুর (আইল) ধইরা হাইট্টা হাইট্টা ভাষাশহীদের ছেলের বাড়ি যাইতে অই। কতজনে কতবার কইল সড়কটা কইরা দিব, হেই সড়ক আর অয় নাই। তার মা, স্ত্রী ও সন্তানের কবর পড়ে আছে অযত্নে। কেউ দেখিয়ে না দিলে চেনার উপায় নেই। তার স্মৃতি রক্ষায় বাড়ির পাশে তৈরি শহীদ মিনারটি এখন জরাজীর্ণ। আমরা মরার আগে এই সড়ক আর স্মৃতি রক্ষায় এই ভাষাশহীদের নামে স্থাপনাগুলাইন সংস্কার অইবো বইলা মনে অয়না।’
রাশিদা বেগম জানান, আব্দুল জব্বারের ছেলে নুরুল ইসলাম বাদল মারা যাওয়ার পর এ গ্রামেই তাঁর দাফন হয়েছে। তাঁর স্ত্রী এবং এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছেন।
‘ভাষাশহীদ আবদুল জব্বার ফাউন্ডেশনের পরিচালক আতিক উল্লাহ বলেন, ভাষাশহীদের নামে পাঠাগার চালু রয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক বই পেয়েছি। এ ছাড়া ফাউন্ডেশনের জন্য এক একর জায়গা রাখা হয়েছে। বরাদ্দ পেলে অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আলীনূর খান বলেন, মসজিদে দোয়া মাহফিল করার জন্য একটি বরাদ্দ দেওয়া হয়ে থাকে। তবে রাস্তা তৈরির জন্য পরিবার থেকে আবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।