স্ট্রবেরি চাষে নজরুলের সাফল্য দেখে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন অন্যরাও

পাবনার ঈশ্বরদীর সলিমপুর ইউনিয়নের এক কৃষকের জমিতে স্ট্রবেরির ব্যাপক ফলন হয়েছে। শীতপ্রধান দেশের ফল হিসেবে স্ট্রবেরির প্রচলন থাকলেও প্রান্তিক কৃষকের কল্যাণে এখন স্ট্রবেরি বাংলাদেশেও সবার মধ্যে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। বাজারে চাহিদা অনুযায়ী ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় ঈশ্বরদীর কৃষকদের মাঝে জনপ্রিয় হচ্ছে স্ট্রবেরি চাষ।
কৃষি সংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী, গন্ধ, বর্ণ ও স্বাদে আকর্ষণীয় স্ট্রবেরি ফলের রস, জ্যাম, আইসক্রিম, মিল্কশেকসহ শিল্পজাত খাদ্য তৈরিতে স্ট্রবেরির সুগন্ধ ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। স্ট্রবেরি শীতপ্রধান দেশের ফল হলেও বর্তমানে বাংলাদেশের যেসব এলাকায় শীত বেশি সেসব এলাকায় বিভিন্ন জাতের স্ট্রবেরি চাষ হচ্ছে। অনেকে শখে বাড়ির টবে বা ছাদবাগানে চাষ করলেও এখন বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরির চাষ শুরু করেছেন ঈশ্বরদীর কয়েকজন কৃষক।
রাজশাহীর এক কৃষককে দেখে ২০১৪ সালে স্ট্রবেরি চাষে উদ্বুদ্ধ হন ঈশ্বরদীর কৃষক নজরুল ইসলাম। তখন থেকেই তিনি স্ট্রবেরি চাষ শুরু করেন। প্রথমে দুই বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি আবাদ করলেও বর্তমানে চার বিঘা জমিতে আবাদ করছেন। ধীরে ধীরে এ কাজে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন। বর্তমানে তিনি নিজেই স্ট্রবেরি চারা উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছেন। তার সফলতা দেখে গ্রামের অন্যান্য কৃষকরাও স্ট্রবেরি চাষে আগ্রহী হয়েছেন। বর্তমানে ঈশ্বরদীর সলিমপুর ইউনিয়নে পলিথিন মালচিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্ট্রবেরি চাষ করছেন নজরুল ইসলাম।
কৃষক নজরুল ইসলাম স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় সফলতা অর্জন করেছেন। এবার চার বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষে তার খরচ হয়েছে ছয় লাখ টাকা। যেখানে বীজ, সার, কীটনাশক ও শ্রমখরচ রয়েছে। বর্তমানে তিনি ১৮ হাজার স্ট্রবেরি চারা লাগিয়েছেন। আমেরিকান ফেস্টিভ্যাল, উইন্টার ডন, থাইল্যান্ড ও বার-৩ জাতের স্ট্রবেরি চাষ করছেন তিনি। এসব জাত উচ্চ ফলনশীল এবং সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। নজরুল ইসলাম বলেন, অক্টোবরে চারা লাগানো হয়। ডিসেম্বরের দিকে ফুল আসে। মার্চ মাসে ফল পাকে। এবারের আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন আরও ভালো হতে পারে। প্রতি বিঘায় তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি করতে পারবেন। মোট ১৮ থেকে ২১ লাখ টাকার মতো আয় হতে পারে। ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা লাভ হতে পারে বলে তিনি আশা করছেন।
নজরুল ইসলাম আরও জানান, দুই-তিন বছর আগেও ঈশ্বরদীতে কোনো ব্যবসায়ী স্ট্রবেরি কিনতে আসতেন না। কিন্তু এখন ঢাকা, খুলনা, সিলেট, বগুড়া, কুষ্টিয়াসহ অন্যান্য শহর থেকে ব্যবসায়ীরা স্ট্রবেরি কিনতে আসেন।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা প্রহ্লাদ কুমার কুণ্ডু বলেন, ফল ও সবজি উৎপাদনকারী এলাকা হিসেবে ঈশ্বরদীর সুখ্যাতি রয়েছে। নজরুল ইসলাম বর্তমানে স্ট্রবেরি চাষে সফলতা পেয়েছেন। কৃষি বিভাগ তাকে সহায়তা দিয়েছে। তার এ সফলতা দেখে অন্য কৃষকরাও স্ট্রবেরি চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।