পালিয়ে বিদেশে অথবা কারাগারে আ.লীগনেতাদের ঈদ

ছাত্রজনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের। ছোটবোন শেখ রেহানাকে নিয়ে পাশের দেশ ভারতে আশ্রয় নেন তারা। পরে জানা যায়, তাদের আগে পরে দলটির অনেক জ্যেষ্ঠ নেতারাও পালিয়েছেন ভারতসহ অন্য দেশে। যারা পালাতে পারেননি, তারা জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি, হত্যা এবং বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতি ও মানিলন্ডারিংসহ নানা মামলায় আছেন কারাগারে। ক্ষমতাচুত্যির পর এবারই তারা প্রথমবারের মতো ঈদ পালন করবেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, স্বৈরসরকারের শীর্ষ নেতাদের কেউ ঈদ করবেন কারাগারে, কেউ পলাতক হয়ে বিদেশে।
বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলেন আলোচিত ফ্যাসিস্ট সরকারপ্রধান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঈদ করবেন ভারতে। তার ছোট বোন শেখ রেহানা লন্ডনে ঈদ করবেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছেন। তবে এ দুই বোনের কারোই ঈদে সন্তানদের সাথে দেখা হচ্ছে না।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সমপাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম ও শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, আইন সম্পাদক কাজী নজিবুল্লাহ হীরু, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবদুস সবুর ভারতে ঈদ করবেন।
এ তালিকায় আরও রয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
এ ছাড়া বেলজিয়ামে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সিডনিতে প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান ঈদ করবেন। আর দক্ষিণ সিটির সাবেক মেয়র ফজলেনূর তাপস ঈদ করবেন সিঙ্গাপুরে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সমপাদক জাহাঙ্গীর আলম, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সমপাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজ মাহমুদ, সাধারণ সমপাদক সাগর আহমেদ শামীম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি রাজিবুল ইসলাম বাপ্পি, সাধারণ সম্পাদক সজল কুণ্ডু, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম ,সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেন ভারতে ঈদ করবেন।
ভারতে আরও ঈদ করবেন নেত্রকোনা-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, ঢাকা-১৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান খান নিখিল, সাবেক সংসদ সদস্য ও যুব মহিলা লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল।
পালাতে গিয়ে আটক হওয়াসহ বিভিন্ন মামলায় কারাগারে আছেন অনেকে। তাদের মধ্যে কারাগারে ঈদ করবেন সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, সাবেক সংসদ সদস্য হাজি সেলিম, বিএম ফজলে করিম চৌধুরী, এম এ মালেক, আব্দুর রহমান বদি, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক এমপি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও সাবেক এমপি আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি আহমদ হোসেন, সাবেক এমপি ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত।
এ তালিকায় আরও আছেন সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় মহাজোটের মুখপাত্র আমির হোসেন আমু, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক মন্ত্রী ও বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সাবেক ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক খাদ্য উপমন্ত্রী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, সাবেক বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, সাবেক ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক সংসদ সদস্য সাদেক খান, পুলিশের সাবেক আইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাবেক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শাহ কামালসহ অনেকে।
নারীদের মধ্যে কারাগারে ঈদ করবেন শিক্ষা ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক এমপি ও হুইপ মাহবুব আরা বেগম গিনি, সাবেক এমপি মাসুদা সিদ্দীক রোজী, সাংবাদিক ফারজানা রুপা, ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক বেনজীর হোসেন নিশিসহ অনেকেই।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন আইনজীবীদের থেকে জানা গেছে, পরিবারে স্বজনদের সঙ্গে ঈদের দিন দেখা করার সুযোগ পাবে আওয়ামী লীগের কারাবন্দিরা। এদিন আসামিরা স্বজনদের পাঠানো ঘরে বানানো খাবারের স্বাদ নিতে পারবেন। এছাড়া ভিআইপি আসামিরা ফোনে কথা বলার সুযোগ পাবেন।
কারাগারের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের বন্দিরা ঈদের পরে দিন পাবেন উন্নত মানের খাবার । এরমধ্যে রয়েছে, পায়েস, পোলাও, গরুর মাংস, ডিমের কোর্মা, মুরগির রোস্ট, মাছসহ থাকবে আরও নানা পদের খাবার। খাবার শেষে আথিতেয়তার জন্য থাকবে মিষ্টি, পান-সুপারিও।
এরই মধ্যে কারা অধিদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি উন্নয়ন ও গণমাধ্যম) জান্নাত-উল ফরহাদ জানিয়েছেন, সাধারণ দিনে বন্দিরা মাসে দুইবার স্বজনদের সাথে দেখা করা সুযোগ পান। তবে ঈদ উপলক্ষে ভিআইপিসহ সব আসামি একবার স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাবেন। ঈদের দিন ও ঈদের পরের দুদিনে এই একবার দেখা করার সুযোগ পাবেন আসামিরা। এ ছাড়া এই তিন দিনে যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে একবার কারাগারের বাইরে থেকে স্বজনদের দেওয়া খাবার পাবেন ভিআইপিসহ সব আসামি। খাবার নিরাপদ কি না, তা যাচাইয়ের সুযোগ থাকবে। তিনি বলেন, নিরাপত্তার জন্য ডিভিশনপ্রাপ্ত ভিআইপি বন্দিদের আলাদা সেলে রাখা হয়। ঈদের দিন প্রতিটি কারাগারে এসব ভিআইপি বন্দিকে একসঙ্গে নামাজের ব্যবস্থা থাকবে। তবে সাধারণ কয়েদিদের সঙ্গে নয়। কারাগারে খোলা মাঠে ঈদের নামাজ পড়ার ব্যবস্থা থাকবে বলে জানান তিনি। তবে নারীদের ঈদের নামাজের কোনো ব্যবস্থার নির্দেশনা এখনো পর্যন্ত নেই বলে জানান তিনি।