কেরানীগঞ্জে ট্রিপল মার্ডার : প্রধান আসামি গ্রেপ্তার

ঢাকার কেরানীগঞ্জে ট্রিপল মার্ডারে ঘটনায় প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ সোমবার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কেরানীগঞ্জ সার্কেল) মো. জাহাঙ্গীর আলম।
মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আসামি জানিয়েছে, সাবেক স্ত্রী ও তাঁর সন্তানসহ অন্য এক নারীকে প্রথমে গলা টিপে হত্যা করে মরদেহ গোপন করার জন্য টুকরো টুকরো করে বস্তায় ভরে বিভিন্ন এলাকায় ফেলে দেয় সে।
গ্রেপ্তার করা ব্যক্তির নাম মো. মহিউদ্দিন ওরফে শিমুল (৩১)। তার বাড়ি বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জ থানার গোয়ালবাড়ি গ্রামে। সে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের মীরেরবাগ আসাদুল্লাহর বাড়িতে ভাড়ায় থাকত। কদমতলী থানার জুরাইন এলাকায় দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করে বলে জানিছে।
২৫ এপ্রিল রাতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জ এলাকায় মাকসুদা টাওয়ার ও টোকিও মার্কেটের সামনে থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় এক নারীর মাথাবিহীন খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় তদন্ত শুরু করলে ২৭ এপ্রিল বিকেলে বুড়িগঙ্গা নদী থেকে মরদেহের হাত ও পায়ের কিছু অংশ উদ্ধার হয়। এরপর ধারণা করা হয় এই অংশগুলোও আগের উদ্ধার করা মরদেহের অংশই হবে। সে অনুযায়ী তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ মো. মহিউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, খণ্ডিত মরদেহের টুকরোগুলো একজনের নয়,দুই নারীর। সে আরও জানায় এ সময় একটি শিশুকেও হত্যা করেছে সে।
মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমাদের একটি চৌকস দল সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে রহস্য উৎঘাটনের কাজ শুরু করে। রাজধানীর জুরাইন এলাকা থেকে শিমুলকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকার করে বীথি আক্তার নামে তাঁর সাবেক স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যার কথা। এরপর ঘটনা দেখে ফেলায় বীথির পরের ঘরের ছেলে রাফসানকেও (৪) শ্বাসরোধে হত্যা করে সে। এ সময় পাশের ঘর থেকে বীথির সাবলেট নূপুর (২৫) নামে এক মেয়ে ছুটে এলে তাকেও সে হত্যা করে।
জিজ্ঞাসাবাদে আসামি শিমুল আরও জানায়, বীথি তার আগের স্ত্রী। তার সঙ্গে ডিভোর্স হয়ে গেলে অন্যত্র বিয়ে হয়। সেখানে তার রাফসান নামে একটি ছেলে সন্তান হয়। সম্প্রতি বীথির সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আবার সম্পর্ক হয়। এরপর বীথি বর্তমান স্বামীর কাছে কাপড়ের কারখানা ভাড়া নেওয়ার কথা বলে মীরেরবাগ এলাকায় বাসা ভাড়া নেয়। সেখানে শিমুল ও বীথির নিয়মিত দেখা-সাক্ষাৎ হতো। বীথি তাঁকে আবারও বিয়ের জন্য চাপ দেওয়ায় তাদের মধ্যে ঝগড়া হতো। ঘটনার দিনও তাদের মধ্যে ঝগড়া হলে শিমুল বীথির গলায় গামছা পেঁচিয়ে হত্যা করে।
মো. জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন,শিমুল তিনজনকে হত্যার পর ছুড়ি ও প্লাস্টিকের বস্তা এনে লাশগুলো বাথরুমে নিয়ে প্রথমে শিশুর মরদেহ ছয় টুকরো করে। পরে অন্য দুটি মরদেহও টুকরো টুকরো করে। এরপর শিশুটির মরদেহ বেয়ারা এলাকায় একটি ঝোপের মধ্যে ফেলে দেয়। বীথির মরদেহের কিছু অংশ আগানগর এলাকার মাকসুদা গার্ডেন মার্কেটের সামনে ফেলে দেয়। আর লাশের হাত-পাগুলো পোস্তগোলা সেতু থেকে বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে দেয়। সবশেষে একটি বস্তায় দুই নারীর মাথা ও নূপুরের দেহ একটি বস্তায় ভড়ে বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে দেয়। এ সময় মরদেহ টুকরো টুকরো করার চাকুটিও বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন,মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় এর আগেও মামলা হয়েছে। যেহেতু আসামির দেখানো স্থান থেকে আজ শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে সেহেতু আজ আরও একটি হত্যা মামলা হচ্ছে। আশা করি আগামীকাল আসামি আদালতেও স্বীকারোক্তি দেবে।
বীথি আক্তার ও নূপুরের মাথা এখনও উদ্ধার করা যায়নি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাজাহারুল ইসলামও।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বীথির বর্তমান স্বামী মো. রুবেল বলেন, আমাদের বাড়ি শুভাঢ্যা উত্তরপাড়া এলাকায়। কিছু দিন আগে আমার স্ত্রী বলল সে কাপড়ের করাখানা চালু করবে, তাই মীরেরবাগ এলাকায় বাসা ভাড়া নিবে। তাই আমি তাকে না করিনি। সেখানে সে একটি সাবলেট বাসা ভাড়া নিয়ে আমার ছেলেকে নিয়ে থাকত। কিন্তু সেখানে যে তার আগের স্বামীর যাতায়াত ছিল আমি জানতাম না। আমি এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।