ক্ষমতা থাকুক বা না থাকুক, বিএনপি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে : মির্জা ফখরুল
ক্ষমতা থাকুক বা না থাকুক বিএনপি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে থাকবে বলে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ রোববার (৪ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে সম্পাদক পরিষদ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের এই অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা নির্দ্বিধায়, দৃঢ়চিত্তে, স্পষ্ট করে বলতে পারি, আমরা বরাবরই সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে ছিলাম, আছি এবং ভবিষ্যতে থাকব। এতে সরকারে থাকি আর না থাকি- এই ব্যাপারে আপনাদেরকে আমরা নিশ্চয়তা দিতে পারি।’
একই সঙ্গে গণমাধ্যমের ওপর অতীতের নিপীড়ন-নির্যাতন ও বিভিন্ন কালা-কানুনের বিরুদ্ধে দলের শক্ত অবস্থানের কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই ব্যাপারে আমরা লড়াই করে চলেছি, এখনো করছি। খুবই স্পষ্ট ভাষায় আমরা বলতে চাই, আমরা কখনোই অন্যায়ভাবে অন্যের মতকে (গণমাধ্যমের ওপর) চাপিয়ে দেওয়া সমর্থন করব না।
সংবাদপত্রের স্বাধীনতার বিষয়টি ২০১৬ সালে ঘোষিত ‘ভিশন-২০৩০’ এবং ২০২৩ সালে প্রণীত ৩১ দফার রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতে সংস্কার কর্মসূচিতে রয়েছে বলে উল্লেখ করেন বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে একরকম প্রচারণা চালানো হয় যে, আমরা নাকি সংস্কারের বিরুদ্ধে। আমরা সংস্কার না, নির্বাচন চাই। অথচ সংস্কার বিষয়টা শুরু হয়েছে আমাদের দ্বারা।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, চারটি সংবাদপত্র ছাড়া সবগুলো সংবাদপত্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাহেব যখন ক্ষমতায় আসলেন তিনি নিষিদ্ধ সংবাদপত্রগুলো আবার চালু করেছেন, স্বাধীনতা দিয়েছেন। আমরা বলি না যে, আমরা একেবারেই ধোয়া তুলশি পাতা। কিন্তু এই কথা নিঃসন্দেহে বলতে পারি যে, আমরা নিঃসন্দেহে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য অনেক বেশি কাজ করেছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা একটা ট্রানজিশনাল পিরিয়ডে আছি। অনেক রকম ঘটনা চলছে, অনেক রকম টানা-হেঁচড়া চলছে। তবে গণতন্ত্র যদি আমরা সত্যিকার অর্থে প্রতিষ্ঠা করতে চাই, চিন্তা-ভাবনাগুলোকে গণতান্ত্রিক করতে হবে।
নিজের বাবা সাবেক মন্ত্রী মির্জা রুহুল আমিনের কথা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমার বাবা মুসলিম লীগ করতেন। কিন্তু তিনি চিন্তাভাবনায়, কথা-বার্তায় তখনকার দিনের তুলনায় অনেক আধুনিক ছিলেন। তিনি সংস্কৃত পড়েছেন, ফার্সিও পড়েছেন। তিনি বলতেন, ‘আমি ছাড়া আর কেউ নেই, আমিই আছি সর্বত্র- আমাদের এই ‘আমি’ থেকে বেরিয়ে আসার দরকার।’ আমাদের সংবাদমাধ্যমে এই চর্চাটা বেশি করা দরকার। কোনো কোনো সংবাদ মাধ্যম আছেন তারা ভাবছেন, তারা যা বলছেন ওইটাই সঠিক। এর বাইরে কেউ বলতে গেলে তিনি হয়ে যাচ্ছেন ফ্যাসিস্টদের দোসর অথবা ভারতীয় দোসর, অথবা আওয়ামী লীগের দোসর।
জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে সম্পাদক পরিষদের উদ্যোগে এই আলোচনা সভা হয়। এতে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকরা অংশ নেন।
সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামের সভাপতিত্বে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বনিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জনসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, নিউ এইজের সম্পাদক নুরুল কবির, কালের কণ্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজ বক্তব্য দেন।
এই অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক এএমএম বাহাউদ্দিন, সমকালের সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলীসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন।