যুক্তরাজ্যে সালমান এফ রহমান পরিবারের ১৪৭৯ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দ

ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান রহমান ও ভাতিজা আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের ৯ কোটি পাউন্ড (১ হাজার ৪৭৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা) মূল্যের সম্পত্তি জব্দের আদেশ জারি করেছে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ)। এই আদেশের ফলে তারা এই দেড় হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি বিক্রি করতে পারবেন না।
আজ শনিবার (২৪ মে) ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই সম্পত্তির মধ্যে লন্ডনের অভিজাত গ্রোসভেনর স্কয়ারে অবস্থিত অ্যাপার্টমেন্টও রয়েছে।
দ্য গার্ডিয়ান ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের যৌথ অনুসন্ধানে জানা গেছে, শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের যুক্তরাজ্যে প্রায় ৪০ কোটি পাউন্ড (৬ হাজার ৫৭৫ কোটি ২০ লাখ টাকা) মূল্যের সম্পত্তি রয়েছে। এর মধ্যে নয়টি সম্পদ জব্দ করেছে এনসিএ।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্পত্তিগুলো ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, আইল অব ম্যান অথবা জার্সির মতো অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে কেনা হয়েছিল।
এর আগে গতকাল শুক্রবার (২৩ মে) ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, জব্দের আদেশপ্রাপ্ত সম্পত্তিগুলোর মধ্যে উত্তর লন্ডনের গ্রেশাম গার্ডেনসে অবস্থিত একটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে, ২০১১ সালে যার মূল্য ছিল ১২ লাখ পাউন্ড (১৯ কোটি ৭২ লাখ ৫৬ হাজার টাকা)।
যুক্তরাজ্যের ভোটার তালিকা অনুযায়ী, শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা—যিনি সাবেক ব্রিটিশ মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের মা—গ্রেশাম গার্ডেন্সের সম্পত্তিতে বসবাস করেছেন বলে উল্লেখ রয়েছে, যদিও বর্তমানে তিনি সেখানে আছেন কি না তা স্পষ্ট নয়।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইউকে-এর পরিচালক (পলিসি) ডানকান হেমস বলেন, ‘আমরা যুক্তরাজ্যের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে তাদের তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার এবং দেরি না করে সকল সন্দেহভাজন সম্পত্তি জব্দের আহ্বান জানাচ্ছি।’
বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, সালমান এফ রহমান ও তার ছেলে আহমেদ শায়ান দুর্নীতির মামলার সন্দেহভাজন।
আহমেদ শায়ানের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘আমাদের মক্কেল তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ জোরালোভাবে অস্বীকার করেন। যুক্তরাজ্যে যেকোনো তদন্তে তিনি অবশ্যই সহযোগিতা করবেন।’
তারা আরও যোগ করেন, বাংলাদেশে বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। সেখানে শত শত ব্যক্তির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠছে। আমরা আশা করি, যুক্তরাজ্যের কর্তৃপক্ষ এসব প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নেবে।

উল্লেখ্য, শেখ হাসিনা ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশ থেকে পালানোর চেষ্টা করেন সালমান এফ রহমান। পরে শেখ হাসিনা সরকারের আইনমন্ত্রী আনিসুল হকসহ তিনি গ্রেপ্তার হন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে আছেন, যারা সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত এবং অর্থ উদ্ধারে কাজ করছে। যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মিলিতভাবে তারা এসব কার্যক্রম চালাচ্ছে।
আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক কার্যক্রম সম্প্রতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। সমালোচকরা বলছেন, নতুন সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করছে। তবে সরকার বলছে, তারা দেশ থেকে দুর্নীতি দূর করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।