জানুয়ারিতে শুরু হচ্ছে ভোলা-বরিশাল সেতুর নির্মাণ কাজ

ভোলাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যাচ্ছে ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মাণের কাজ। সরকার ঘোষণা দিয়েছে, ১৭ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের অন্যতম বৃহৎ এই সেতু প্রকল্পের কাজ শুরু হবে ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে। নির্মাণ কাজ শেষ হবে ২০৩৩ সালের মধ্যে। সেতুটি হলে ভোলা জেলার মানুষ সরাসরি দেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হবে। এতে বদলে যাবে এ অঞ্চলের অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ ও মানুষের জীবনমান।
ভোলা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গ্যাসসমৃদ্ধ দ্বীপ জেলা। জেলার আয়তন প্রায় ৩ হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যা প্রায় ২২ লাখ। এত বড় একটি জেলা হলেও বরিশালসহ দেশের অন্য অংশের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ নেই। এখন ভোলা থেকে বরিশালে যেতে লঞ্চে প্রায় দুই ঘণ্টা ও স্পিডবোটে ৪০ মিনিট লাগে, তাও খরচ বেশি। ফলে ভোলা এক ধরনের বিচ্ছিন্ন জনপদ, যেটা দেশের উন্নয়নের ধারার বাইরে রয়ে গেছে।
ভোলার তেঁতুলিয়া ও বরিশালের কালাবদর নদীর ওপর দিয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হবে। সেতুর মোট দৈর্ঘ্য হবে ১৬ দশমিক ৩৬৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে মূল চার লেনের সেতু ১০ দশমিক ৮৭৬ কিলোমিটার এবং বাকি অংশ সংযোগ সড়ক। সেতু নির্মাণের পাশাপাশি নদীশাসনের জন্য ৫.৫ কিলোমিটার জায়গা থাকবে। সেতুতে গ্যাস পাইপলাইন বসানোর ব্যবস্থাও রাখা হবে, যাতে ভোলার গ্যাস দেশের অন্য এলাকায় সরবরাহ করা যায়।
জানা যায়, সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ প্রথম শুরু হয় ২০১৩ সালে। পরে ২০২০ ও ২০২৪ সালে নতুন করে সমীক্ষা করা হয়। চলতি বছরেই প্রকল্পের প্রাথমিক প্রস্তাব (DPP) পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে ভোলা-বরিশাল সেতু প্রকল্প এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করেছে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. শেখ মইনউদ্দিন এবং সেতু বিভাগের সচিব মোহাম্মদ আবদুর রউফ ভোলায় এসে জানিয়েছেন, ২০২৬ সালে সেতুর কাজ শুরু হবে। বিনিয়োগের জন্য জাপানের একটি কোম্পানির সাথে আলোচনা চলছে, প্রয়োজনে কোরিয়া বা বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নেই সেতু নির্মাণ করা হবে।
স্থানীয়রা বলেন, সেতু হলে আমাদের আর্থিক, সামাজিক সব ধরনের উন্নয়ন হবে। এখনও সবকিছু নদীর উপর নির্ভর করে করতে হয়। কৃষিপণ্য, মাছ, সবকিছু সরাসরি দেশের অন্য প্রান্তে পাঠানো যাবে। ভোলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এই সেতু। সেতু হলে আমাদের জীবন বদলে যাবে।
ভোলা জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান জানান, স্বপ্নের ভোলা-বরিশাল সেতু বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই শুরু হতে পারে। সেতু নির্মিত হলে ভোলার আর্থসামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হবে।