বাবা হারানো আরিফুলের পাশে পুলিশ, হাত বাড়াল হাট কমিটিও

বাবাকে দাফন করেই রাজধানীর বছিলা পশুর হাটে গরু বিক্রি করতে ছুটে আসা নবম শ্রেণির ছাত্র আরিফুল ইসলাম গত তিন দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত।
গরু নিয়ে ঢাকায় আসার পথে গত শনিবার (৩১ মে) দিনগত রাতে টাঙ্গাইলে সড়ক দুর্ঘটনায় আরিফুলের বাবা কোহিনূর শেখ (৫৭) মারা যান। ওই দিনই বাবার লাশ নিয়ে ফিরে যান রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পদ্মার চর পলাশী ফতেপুরের নিজ বাড়িতে। দাফন শেষ করে গরু তিনটি বিক্রির লক্ষ্যে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বছিলা গরুর হাটে ফিরতে হয় আরিফলুককে।
গত সোমবার (২ জুন) থেকে তিনটি গরু নিয়ে বছিলা পশুর হাটে খোলা আকাশের নিচে। তিন দিন অপেক্ষার পর গতকাল বৃহস্পতিবার (৫ জুন) আরিফুলের তিনটি গরুই বিক্রি হয়। যেখানে হাট কমিটির পাশাপাশি পুলিশও সহযোগিতা করেন।
আরিফুলের সঙ্গে গরু বিক্রির সময় পাশে ছিলেন তার বড় ভগ্নিপতি দুলাল হোসেন। বৃহস্পতিবার তারা গরু তিনটি বিক্রি করেন ৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকায়। গরু বিক্রি করে বৃহস্পতিবার রাতেই বাড়ির পথে রওনা করে আরিফুল। যেখানে তাকে সহযোগিতা করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) জুবায়ের জুয়েল রানা। আরিফুল বাড়ি পৌছানো পর্যন্ত তার সঙ্গে সর্বক্ষণ যোগাযোগ রাখেন তিনি। যেহেতু নগদ অর্থ নিয়ে বাড়ি ফিরছে তাই পথে যেন কোনো ছিনতাইয়ের মুখে না পড়ে এর জন্য মনিটরিংও করেন জুয়েল রানা। এছাড়া নিজ উদ্যোগে হাট কমিটির সহযোগিতায় ৫০ হাজার টাকা প্রদান করা হয় আরিফুলকে।
এই বিষয়ে নিজের ফেসবুকে জুয়েল রানা লেখেন, আমাদের এলাকা রাজশাহীর বাঘা থেকে গরু নিয়ে আসার পথে রোড এক্সিডেন্টে বাবা কোহিনুর হোসেনকে হারানো ৯ম শ্রেণির ছাত্র ছোট ভাই আরিফুলের তিনটা গরু বিক্রিতে সহযোগিতার পাশাপাশি বছিলা হাটের সার্বিক নিরাপত্তা ইনচার্জ হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে কিছু ও হাট কমিটির মাধ্যমে আরো ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। পাশাপশি আরিফুলকে নিরাপদে রাজশাহী পৌঁছাতে পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সবাই আরিফুলের মৃত বাবা ও পরিবারের জন্য দোয়া করবেন। আমিন।
এ বিষয়ে জুয়েল রানা এনটিভি অনলাইনকে জানান, আরিফুলের সঙ্গে আমি সব সময় যোগাযোগ করছি, পথে যাতে কোনো সমস্যা না হয়। পাশাপাশি স্থানীয় পুলিশকেও সহযোগিতার জন্য বলা হয়েছে। আরিফুলসহ কয়েকজন গরু ব্যবসায়ী ট্রাকে করে রাজশাহী যাবে শুনে সবগুলো ট্রাক এক সঙ্গে পাঠিয়েছি। এক সঙ্গে গেলে পথে সমস্যা পড়বে না। রাস্তায় সর্বক্ষণ মনিটরিং করেছি। সবশেষ সাড়ে ১১টার দিকে তার সঙ্গে আমার কথা হয়। ওই সময় কাছিকাটা পৌছে নাস্তা করছে আরিফুল। ইতোমধ্যে বাড়ি পৌছে গেছে মনে হয়।
আর্থিক সহায়তার বিষয়ে জুয়েল রানা বলেন, হাট কমিটির সঙ্গে কথা বললাম। যেহেতু ছেলেটা বাবা হারা তার জন্য কিছু করতে পারলে ভালো লাগবে। হাট কমিটিও আমার কথার সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যায়। তারপর আমি ব্যক্তিগভাবে কিছু দিয়ে পাশাপাশি হাট কমিটির পক্ষ থেকে ভালো একটা অ্যামাউন্টের মাধ্যমে তাকে ৫০ হাজার টাকা সহয়তা করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত শনিবার রাতে আরিফুলের বাবা কোহিনূর শেখ গরুর সঙ্গে ট্রাকের ওপরে বসে ঢাকা আসছিলেন। আর ছেলে আরিফুল ছিল চালকের পাশে। কথা ছিল বছিলা পশুর হাটে বাবা গরু বিক্রি করে বাড়ি চলে যাবেন। আর আরিফুল যাবে বিমানবন্দরে, প্রবাসী খালাকে রিসিভ করতে। রাত একটার দিকে গাড়ি টাঙ্গাইলে দাঁড়ানো ছিল। এ সময় পেছন থেকে একটি সবজির ট্রাক এসে ট্রাকে ধাক্কা দেয়। কোহিনূর শেখের কাঁধে আঘাত লাগে। তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।