আন্দোলনকারীদের বিষয়ে প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপের চিন্তাও করবেন না : ইশরাক হোসেন

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপিনেতা ইশরাক হোসেন বলেছেন, বর্তমানের যে স্থিতিশীল অবস্থা রয়েছে, তা বিনষ্ট করবেন না। কোনোক্রমেই কারও প্ররোচনায় বা নিজ সিদ্ধান্তে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিষয়ে প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপের চিন্তা ভুলক্রমেও করবেন না। এটা একটা সতর্কবাণী হিসেবে দিচ্ছি।’
আজ বুধবার (২৫ জুন) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ইশরাক হোসেন।
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার উদ্দেশে ইশরাক হোসেন আরও বলেন, ‘এর কোনো ব্যত্যয় ঘটলে নগরবাসী তা মেনে নেবে না এবং পুনরায় আন্দোলন শুরু হলে তা নগর ভবনের গণ্ডি পেরিয়ে আবারও রাজপথে গড়াবে। সেটি উচিত হবে না।’
গত ২৭ মার্চ ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করেন নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল। গত ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। এরপর সে গেজেট স্থগিত চেয়ে রিট করা হয়। আদালত সেই রিট খারিজও করে দেন। এরপর আপিল করলে আপিল বিভাগ থেকেও তা খারিজ করে দেন।
ইশরাক হোসেন বলেন, ‘২০২০ সালের মামলায় নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের রায়ে প্রমাণ হয়, তৎকালীন নির্বাচনের ফলাফল অবৈধভাবে ঘোষণা করা হয়েছিল। এই ঘোষণার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের আমলের অন্তত এই নির্বাচনকে আইনিভাবে অবৈধ বলে প্রমাণ করা হয়েছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, একদম শুরু থেকেই এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে মেয়র পদে বসে নগর পরিচালনা করার পরিকল্পনা আমার ছিল না। আমাদের শীর্ষ নেতৃত্বের পরামর্শক্রমে অবৈধ মেয়র তাপসের বিরুদ্ধে পাওয়া রায়টি একটি স্থায়ী দলিল হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য, আইনের শাসনের চূড়ান্ত বিজয়ের একটি প্রমাণ হিসেবে রাখার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই প্রক্রিয়ার সর্বশেষ ধাপ এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান, যা কেবলই একটি আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে পদে পদে বাধাগ্রস্ত করতে গিয়ে শেষবেলায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে নিরপেক্ষ নয়, আমাদের সেই আশঙ্কাটি চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হয়েছে। পরাজয় ঘটেছে এই সরকারের নিরপেক্ষতার পর্দার পেছনে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকা অগণতান্ত্রিক শক্তির। ভেস্তে গেছে জনগণকে ধোঁকা দিয়ে বিনা ভোটে রাষ্ট্রক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার সম্ভাব্য দেশি-বিদেশি চক্রান্ত।’
ইশরাক হোসেন বলেন, ‘আমরা জনগণকে সুসংগঠিত করে ফ্যাসিবাদ পরবর্তী বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের যাত্রাকে অবশ্যই সফল করব, ইনশাল্লাহ। অর্থাৎ, যেকোনো মূল্যে যেকোনো একটি সুষ্ঠু সঠিক নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবই। এর বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্রের চেষ্টা করা হলে যেকোনো মুহূর্তে জীবন দিয়ে হলেও লড়াই করে জনগণের ভোটের অধিকার আদায় করে নেব, ইনশাল্লাহ।’
বিএনপিনেতা ইশরাক হোসেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের জন্য সতর্ক করে বলেন, ‘আসিফ বলেছে, বিএনপির এক নেতার ইন্ধনে ইশরাকের আন্দোলন হয়েছে। তার এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ঢাকার হাজার হাজার ভোটারদের চরম অপমান হয়েছে। আসিফ আরেকটা কথা বলেছে, ইশরাককে মিসগাইড করা হয়েছে। এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন। তিনি নিজেকে অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ এবং আমাকে চরমভাবে হেয় করেছে। তিনি বলেছেন, বিএনপির একটি অংশের সঙ্গে সরকারের বোঝাপড়ার দূরত্ব তৈরি হওয়ার কারণে আমাকে ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি বিএনপির মতো ঐতিহ্যবাহী পুরনো বৃহৎ রাজনৈতিক দলকে হেয় করেছেন এবং একটি অসত্য অভিযোগ তুলেছেন। তিনি নিজেকে বিশাল কোনো মহামানব হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। উনি হয়তো ভুলে গেছেন, উনার জন্মের বহু আগেই বিএনপির জন্ম হয়েছে। আসিফ আরও বলেছেন, আমাকে তার নির্বাচনি এলাকা কুমিল্লার একটি উপজেলার জনৈক বিএনপিনেতা প্ররোচনা দিয়েছেন। এই আন্দোলনে অর্থ ও লজিসস্টিক দিয়েছেন এবং তার কাছে নাকি প্রমাণ আছে। এই প্রমাণ তিনি জাতির সামনে তুলে ধরবেন। অন্যথায়, তাকে এ ধরনের বিভ্রান্তমূলক বক্তব্যের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।’
আসিফ মাহমুদের আরও কিছু বক্তব্য উল্লেখ করে ইশরাক হোসেন বলেন, ‘আসিফ বলেছেন, আমার পক্ষ থেকে যারা নেগোশিয়েট করতে এসেছেন তারা আন্তরিকভাবে আমার পক্ষে নেগোশিয়েট করেন নাই। আমার বিষয়টি সম্পূর্ণ আইনি এবং এখানে নেগোশিয়েট করার কোনো সুযোগ নাই। তাহলে কারা নেগোশিয়েট করেছে তা আমাকে জানাতে হবে। কারণ একমাত্র আমাদের দলীয় প্রধানের বাইরে অন্য কোনো ব্যক্তিকে কোনো কথা বলার সম্মতি দেইনি।’
ইশরাক হোসেন আরও বলেন, ‘আসিফ বলেছেন, ইশরাক হোসেন অত্যন্ত দম্ভভরে ও অহংকারের সঙ্গে সরকার কর্তৃক প্রশাসক হওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। বরঞ্চ বিনয়ের সঙ্গে এটি প্রত্যাখ্যান করার কারণ হিসেবে বলতে হবে, একজন বৈধ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদের জন্যে এই প্রস্তাব অপমানজনক।’
বিএনপিনেতা ইশরাক হোসেন বলেন, ‘আসিফ মাহমুদ বলেছেন, সরকার আওয়ামী লীগ আমলের কোনো নির্বাচনকে বৈধতা দেবে না। তাহলে এটা কোন প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়ন করা হবে এবং কবে? এখন পর্যন্ত তারা কোন কোন নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা করতে পেরেছে? একটিও না। এর অর্থ এই দাঁড়ায়, বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কর্তৃক বৈধতা বহাল রাখা গেজেটকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বৈধতা দিচ্ছে না বা মানছে না। সেটা সরকার কর্তৃক উচ্চ আদালত অবমাননার শামিল নয় কি? এই একই আদালত বাংলাদেশের সংবিধানের আর্টিকেল ১০৬ এর ধারা অনুযায়ী বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কি বৈধতা দেয়নি?’
অনেক জায়গায় কোনো নিয়োগ প্রক্রিয়া ছাড়া ওয়ার্ড সচিব হিসেবে এনসিপি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ শোনা গেছে বলেও উল্লেখ করেন ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, ‘এটা আইনত এবং সরকার পরিচালনার যেকোনো মানদণ্ডে অবৈধ। এরা কারা এবং কাদের স্বার্থ রক্ষা করছে, এই প্রশ্ন নগরবাসীর পক্ষ থেকে আমি করছি। এই অভিযোগ সত্য হলে এর পূর্ণাঙ্গ তালিকা জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে।’
নগর ভবনের হামলার ঘটনা নিয়ে ইশরাক হোসেন বলেন, ‘হামালার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠ হিসেবে সুপরিচিত কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে। এরা কেউ কেউ নিজেদের বিএনপি ঘরানার পরিচয় দিলেও তারা দলের কোনো পদে নেই। উপরন্ত তারা আওয়ামী আমলের মেয়রদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে দুর্নীতি ও লুটপাট করেছে। তাদের মূল হোতা, গতকাল আন্দোলনকারীদের হত্যাচেষ্টা করা গোলাম কিবরিয়া রুবেলের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে রয়েছে। আসিফ মাহমুদ দায়িত্ব নেওয়ার পর রুবেল তার লুটপাটের হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল বলে নগর ভবনের আনাচে কানাচে কথা হচ্ছে। তাই মরিয়া হয়ে রুবেল গংকে নগর ভবনে পুনর্বহাল করার জন্যে এক ঢিলে দুই পাখি মারার চেষ্টা করা হয়েছে।’
প্রকৌশল বিভাগের কুখ্যাত রুবেল একদিনও আন্দোলনে ছিল না উল্লেখ করে বিএনপিনেতা ইশরাক হোসেন বলেন, ‘তিনি নিজেকে বিএনপি সমর্থক দাবি করেন। তদবির করে কাজ ভাগাভাগির মাধ্যমে অবৈধ অর্থনৈতিক সুবিধা করে দেয় এনসিপি ও রাজনৈতিক কিছু নেতাদের। শুরু থেকেই আন্দোলনকারীদের বিরোধিতা করেছে এবং গোপন সূত্রে জেনেছি, আন্দোলনের একপর্যায়ে কৃত্রিম গোলযোগ সৃষ্টি করে, সেই ডামাডোলের মধ্যে বাংলাদেশের সরকার কর্তৃক ঘোষিত এক শীর্ষ সন্ত্রাসীর মাধ্যমে আমাকেসহ আন্দোলনকারীদের কয়েকজনকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল বা চেষ্টায় ছিল। কথিত আছে, সে এনসিপিতে যোগদান করেছে বা করবে।’
আসিফ মাহমুদকে তার বক্তব্য ও কথাবার্তার লাগাম টেনে বর্তমানে যে কিছুটা স্থিতিশীল অবস্থা রয়েছে, তা বিনষ্ট না করার আহ্বান জানান বিএনপিনেতা ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, ‘কোনোক্রমেই কারও প্ররোচনায় বা নিজ সিদ্ধান্তে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিষয়ে প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপের চিন্তা ভুলক্রমেও করবেন না। এটা একটা সতর্কবাণী হিসেবে দিচ্ছি।’