গণতন্ত্র ফেরানোর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীরা ঘাপটি মেরে আছে : ডা. জাহিদ

গণতন্ত্র ফেরানোর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীরা ঘাপটি মেরে আছে উল্লেখ করে সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন।
আজ শুক্রবার (১৮ জুলাই) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক সমাবেশে তিনি এই আহ্বান জানান।
জাহিদ হোসেন বলেন, আমাদের ভেতরে যারা আজকে গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করতে চায় সেই ষড়যন্ত্রকারীরাও ঘাপটি মেরে আছে। তাদের চরিত্র উন্মোচন করা আজকে আমাদের দায়িত্ব। মিটফোর্ডের ঘটনার পর দ্রুততার সঙ্গে বিএনপি ও তার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং দাবি তুলেছে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের।
তারপরেও আমাদের নেতা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ট্যাগিং করা হচ্ছে। আপনারা একবারও ভাবেন না আপনারা কী করছেন। আপনারা কেনো আগুন নিয়ে খেলার চেষ্টা করছেন, অন্যের ক্রীড়ানক হয়ে কেনো আপনারা দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে বিনষ্ট করার চেষ্টা করছেন। সকলকে সতর্ক থাকতে হবে, সকলকে ধৈর্য ধরতে হবে। ওদের (ষড়যন্ত্রকারীদের) উসকানিতে পা দেওয়া যাবে না।
ঐক্যবিনষ্টকারীদের উদ্দেশ্যে অধ্যাপক ডা. জাহিদ বলেন, রাজনীতি করুন, ময়দানে আসুন। বিএনপি ও সমমনা দলগুলো একত্রিত কর্মসূচি নিয়ে এসেছে। আপনাদের কী কর্মসূচি আছে সেটি নিয়ে আসুন। কর্মসূচির নামের খবর নাই। কথায় কথায় পিআর (সংখ্যানুপাতিক হারে ভোট ব্যবস্থা) বলবেন, কথায় কথায় স্থানীয় সরকার নির্বাচন চাই।
আরে ভাই, গণতন্ত্রের লড়াই জাতীয় নির্বাচনের জন্য। স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের জন্য গণতন্ত্রের লড়াই হয় না। আর পিআর পদ্ধতি বাংলাদেশে ৫৪ বছর কেনো ১৫৪ বছরেও কোনো প্র্যাকটিস হয় নাই। আজকে কেনো এই সমস্ত কথা বলে বিবাদ-দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করছেন। তার অর্থ হচ্ছে আপনারা গণতন্ত্রকে প্রলম্বিত করতে চান, গণতন্ত্র যাতে ফিরে না আসে তাহলে হয়ত আপনাদের অন্য সুবিধা আছে-যোগ করেন ডা. জাহিদ।
তিনি বলেন, মনে রাখবেন, জনগণকে ক্ষমতাহীন করে বেশিদিন বেশি দিন যদি রাখতে চান, এই জনগণ কিন্তু ফুঁসে উঠবে। তখন সেই আগুনে আপনারা জ্বলের পুড়ে ছারখার হয়ে যাবেন। আমি সকলকে উদাত্ত কণ্ঠে আহ্বান জানাতে চাই, ধৈর্য ধরুন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে স্বৈরাচারকে যেমন রুখেছি, তারা পালিয়ে গেছে এবং একইভাবে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার যে লড়াই সেই লড়াইয়ে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। কোনো অবস্থাতেই ষড়যন্ত্রকারীরা কামিয়াবি হবে না।
গোপালগঞ্জে হামলা প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, আমিতো বলি, সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকার নিদারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ এই গোপালগঞ্জ আপনাদের খেয়াল আছে, কোটালিপাড়ায় বোমার হামলার কথা। প্রধানমন্ত্রী(শেখ হাসিনা) থাকা অবস্থায় উনার এখানে এতো কিছু থাকার পরে কীভাবে বোমা ফুটলো? সেখানে তখন কোথায় ছিল গোয়েন্দা বাহিনী। অর্থাৎ ষড়যন্ত্র যদি না হয় তাহলে এরকম ঘটনা ঘটানো যায় না।
তিনি আরও বলেন, গতকালকতো ফরিদপুরে সুন্দর প্রোগ্রাম হলো সেখানে তো কিছু হলো না। গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ি সবইতো কাছাকাছি। আপনারা নড়াইল গেলেন কিছু হলো না, সারা বাংলাদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছেন কোথাও কিছু হয় নাই ওখানে কেনো হচ্ছে? কাজেই মনে রাখতে হবে স্বৈরাচারের দোসরদের ওপর দোষ চাপাচ্ছি ঠিকই আছে। কিন্তু আমাদের ভেতরে যারা আজকে গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করতে চায় সেই ষড়যন্ত্রকারীরাও ঘাপটি মেরে আছে তাদের চরিত্র উন্মোচন করা আজকে আমাদের দায়িত্ব।
ঐক্য বিনষ্ট করলে কী হয় কিছু আলামত পাওয়া যাচ্ছে উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে পেশাজীবীদের অবদানকে ছোট করে দেখার সুযোগ নাই। আজকে মনে রাখতে হবে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে রাজনীতিবিদরাও ছিলেন, পেশাজীবীরাও ছিলেন এবং আছেন। এই অবস্থায় আমরা যখন দেখতে পাই রাজনীতিবিদদের মধ্যে ছোট ছোট স্বার্থের জন্য অনৈক্য তখন আমরা হতাশাগ্রস্ত হই। আমরা সাবধান করে দেই আপনারা(রাজনীতিবিদরা) দ্বিধা-বিভক্তি হবেন না।
মব জাস্টিস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে কথাগুলো মাঠে এসেছে মবোক্রেসি অথবা মব জাস্টিস। যখনই কোনো বিনা বিচারে কিছু হচ্ছে বলা হচ্ছে, কঠোরভাবে দমন করা হবে। কিন্তু কঠোরতার কিছুই দেখা যাচ্ছে না।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের উদ্যোগে দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিনষ্টের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে এই সমাবেশ হয়। সমাবেশের পর মৌন মিছিল কদম ফোয়ারা চত্বর ঘুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এসে শেষ হয়।
সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য আবদুল কাদের চৌধুরী সঞ্চালনায় সমাবেশে সৈয়দ আলমগীর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক লুৎফুর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুল আলম সেলিম, অবসরপ্রাপ্ত সচিব আবদুল বারী, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশসের অধ্যাপক রফিকুল কবীর লাবু, এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের শামীমুর রহমান শামীম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের রফিকুল ইসলাম, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের জাকির হোসেন, নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের জাহানারা সিদ্দিকী, সাংবাদিক মোরসালিন নোমানি,রাশেদুল হক, সাঈদ খান প্রমুখ বক্তব্য দেন।