ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের দশম গ্রেডে বিএসসি ইঞ্জিনিয়াররা প্রবেশের চেষ্টা করলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে হুঁশিয়ার দিয়েছেন ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (আইডিইবি) আহ্বায়ক প্রকৌশলী কবির হোসেন।

আজ শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজশাহী নগরীর টুলটুলি পাড়ায় আইডিইবি ভবনে বাংলাদেশ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র-শিক্ষক-পেশাজীবী সংগ্রাম পরিষদের বিভাগীয় প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন কবির হোসেন।  

ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের দশম গ্রেডে প্রবেশের জন্য বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে কবির হোসেন বলেন, ‘ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা বাংলাদেশের সম্পদ। তাদেরকে পা ধরে টান দেবেন না, মাথার চুল ধরে টানেন। কারণ তারা উপরে উঠতে চায়। বিএসসি ইঞ্জিনিয়াররা কখনো ডিপ্লোমাদের জায়গায় আসতে পারবে না। কারণ তাদের চার বছরের ডিপ্লোমা ডিগ্রি নেই। যদি তারা এই জায়গায় আসতে চায়, তাহলে তাদের আবারো নিচে এসে চার বছরের ডিপ্লোমা সম্পন্ন করতে হবে।’

কবির হোসেন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘অবিলম্বে আপনারা এই দাবি প্রত্যাহার করুন, না হলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবে। আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ে অনড় ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা। আমরা আন্দোলনে আছি, থাকব ইনশা-আল্লাহ। তবে আমরা জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করতে চাই না।’

এ সময় কবির হোসেন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের পক্ষ থেকে সাত দফা দাবি তুলে ধরেন। তাদের দাবিগুলো হলো—

১. প্রকৌশল কর্মক্ষেত্র ডেস্ক ও ফিল্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভাগ করে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের কর্মক্ষেত্র নির্ধারণ এবং ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ১০ম গ্রেডভুক্ত উপসহকারী প্রকৌশলী/সমমান পদ শুধু বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট হতে উত্তীর্ণ চার বছর মেয়াদী (সার্ভেয়িংসহ সব টেকনোলজি) ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য সংরক্ষণ অব্যাহত রাখতে হবে।

২. সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রকৌশল সংস্থা, বিভাগ ও বিদ্যুৎ কোম্পানির জনবল কাঠামোতে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের হার ১ : ৫ করা। যা বর্তমানে অশুভ চক্রের কারণে ৫ : ১ এ রূপান্তরিত করার পাঁয়তারা চলছে।

৩. সব প্রকৌশল সংস্থায় উপসহকারী প্রকৌশলী হতে সহকারী প্রকৌশলী পদে বিদ্যমান ৩৩ শতাংশ পদোন্নতির বিধান ৫০ শতাংশে উন্নীতকরণ এবং সব প্রকৌশল সংস্থায় প্রশাসনিক পদে প্রশাসন ক্যাডার হতে নিয়োগ প্রদান করা।

৪. মেধার অপচয় রোধে প্রকৌশলীদের কারিগরি ক্যাডার ব্যতিত অন্য ক্যাডারে নিয়োগ বন্ধসহ প্রকৌশল পেশা পরিবর্তন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা।

৫. ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষাক্রমের গুণগত মান রক্ষার্থে কোর্স কারিকুলাম ইংরেজিতে প্রণয়নসহ আধুনিকায়ন করা এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীর আনুপাতিক হার ১ : ১২ নিশ্চিত করে শিক্ষক স্বল্পতা দূরীকরণের উদ্যোগ নিতে হবে। সব কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ল্যাব/ওয়ার্কসপ আধুনিকায়ন এবং কাঁচামালের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। সংযুক্ত এসএসসি ভোকেশনাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ট্রেড ইন্সট্রাক্টরকে সহকারী প্রধান শিক্ষক (কারিগরি) হিসেবে নিয়োগ প্রদান করতে হবে। বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের ও সংযুক্ত এসএসসি (ভোকেশনাল), দাখিল (ভোকেশনাল) কোর্সে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাটাচমেন্টের কাচাঁমাল, শিক্ষার্থী ভাতা ও প্রশিক্ষক ভাতা সরকারি প্রতিষ্ঠানের ন্যায় বরাদ্দ দিতে হবে।

৬. আন্তমন্ত্রণালয় কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা কোর্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের বৃত্তির টাকার পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে।

৭. ‘কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ’ কর্তৃক উত্থাপিত ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নসহ সব প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ক্রেডিট ট্রান্সফারের মাধ্যমে ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং সনদধারীদের ভর্তির সুযোগ প্রদান করে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র-শিক্ষক-পেশাজীবী সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি প্রকৌশলী মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল। এ সময় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ডিপ্লোামা ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র-শিক্ষক-পেশাজীবী সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক প্রকৌশলী নওশের আহমেদ তামান্না, কেনিক আইডিবি সদস্য (অর্থ) প্রকৌশলী মনিররুজ্জামান, কেনিক আইডিবি (মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক) সদস্য প্রকৌশলী তৈয়ব আলী মুকুল, প্রকৌশলী মীর হোসেন পাটোয়ারি মিলনসহ অন্যান্যরা।

সম্মেলনে রাজশাহী বিভাগের ৯টি সাংগঠনিক জেলা রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট, পাবনা ও ঈশ্বরদী জেলার আইডিইবি ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র-শিক্ষক, পেশাজীবী, সংগ্রাম পরিষদের প্রতিনিধি, বিভিন্ন জেলা থেকে আগত সদস্য সচিব ও আহ্বায়করা উপস্থিত ছিলেন।