বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠায় প্রস্তাব সুপ্রিম কোর্টের

মামলা ঝট নিষ্পত্তি ও গ্রাহকের ভোগান্তি কমাতে সারা দেশে বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠা করতে আইন মন্ত্রণালয় প্রস্তাব পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি বিচার বিভাগের সংস্কারের অংশ হিসেবে এ প্রস্তাব পাঠান। দেশের বাণিজ্যিক বিরোধগুলো দ্রুত ও কার্যকরভাবে নিষ্পত্তির মাধ্যমে বিনিয়োগ পরিবেশকে আরও গতিশীল ও স্বচ্ছ করে তুলতে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
আজ সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের জনসংযোগ কর্মকর্তা শফিকুল আলমের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া প্রস্তাব অনুযায়ী—ব্যবসায়ী, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বণিকদের সাধারণ লেনদেন থেকে শুরু করে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম, বিমান ও নৌপরিবহণ, নির্মাণ ও অবকাঠামোগত প্রকল্প, ফ্র্যাঞ্চাইজ চুক্তি, বিতরণ ও লাইসেন্সিং, প্রযুক্তি উন্নয়ন, ট্রেডমার্ক, কপিরাইট, পেটেন্ট, শিল্প নকশা, ডোমেইন নাম, ভৌগলিক নির্দেশক, বিমা এবং অংশীদারিত্ব চুক্তি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, পরিষেবা খাত এবং শেয়ারহোল্ডার বা যৌথ উদ্যোগ সম্পর্কিত বিরোধকে বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালতের এখতিয়ারভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। আশা করা যায়, এর ফলে আধুনিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্কিত প্রায় সব ধরনের বিরোধ একটি বিশেষায়িত আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তির সুযোগ সৃষ্টি হবে।
এতে আরও বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের প্রস্তাবে জেলা জজদের মধ্য থেকে বাণিজ্যিক আদালতের বিচারক নিয়োগ করার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। একইসঙ্গে প্রধান বিচারপতি কর্তৃক হাইকোর্ট বিভাগে বাণিজ্যিক আপিল বেঞ্চ গঠনের বিষয়টিও প্রস্তাবে উঠে এসেছে। সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক প্রেরিত প্রস্তাবে মামলা দায়েরের পূর্বে মধ্যস্থতাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আশা করা যায়, এর ফলে মামলা দায়েরের পূর্বেই অনেক বিরোধ আদালতের বাইরে নিষ্পত্তি হবে এবং এর ফলে আদালতের ওপর মামলার ক্রমবর্ধমান চাপ অনেকাংশে হ্রাস পাবে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রস্তাবে কোনো বাণিজ্যিক মামলা বা আবেদন এর মূল্যমান ৫০ লাখ টাকা হলে তা বাণিজ্যিক আদালতে বিচার্য হবে। তবে প্রয়োজন অনুযায়ী সরকার সময়ে সময়ে এই নির্ধারিত মূল্যমান সীমা পুনঃনির্ধারণ করতে পারবে মর্মেও প্রস্তাবে উল্লেখ রয়েছে।
এতে বলা হয়, বিচার প্রক্রিয়াকে দ্রুত ও কার্যকর করার জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বিচার কার্যক্রম শেষ করার বিষয়ে প্রস্তাবে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। প্রস্তাবে উল্লেখ রয়েছে, চূড়ান্ত শুনানি অবশ্যই ৯০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। এ ছাড়া অপ্রয়োজনীয় বিলম্ব এড়াতে সংক্ষিপ্ত বিচারের সুযোগও প্রস্তাবে রাখা হয়েছে। আপিল নিষ্পত্তির ক্ষেত্রেও সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাণিজ্যিক আপিল আদালত ছয় মাসের মধ্যে এবং সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তিন মাসের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তির প্রচেষ্টা গ্রহণ করবে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ছাড়া প্রস্তাবে বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠা ও কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন, বিচারক ও আইনজীবীদের জন্য প্রশিক্ষণ এবং ধারাবাহিক পেশাগত উন্নয়নের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।