প্রবাসী ভোটের ২৫ শতাংশ ব্যালট নষ্ট হয় : ইসি সানাউল্লাহ

পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণের বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এক-চতুর্থাংশ ব্যালট নষ্ট হয়। পৃথিবীতে এই পদ্ধতিতে প্রবাসী ভোট নষ্ট হওয়ার হার ২৪ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি চারটি ব্যালটের মধ্যে একটিই সময় মতো পৌঁছায় না। তারপরও দেড় কোটি প্রবাসীর আগ্রহের কারণে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগটি সৃষ্টি করা হচ্ছে।
আজ বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন ভবনে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ এমন কথা বলেন।
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, প্রবাসে আমাদের বসবাসকারী বাংলাদেশির সংখ্যা কোনো কোনো হিসাব অনুযায়ী ১৪ থেকে ১৫ মিলিয়ন। এত বড় সংখ্যক একটা জনগোষ্ঠীকে বাদ রেখে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন হবে! তাই আমরা মনে করলাম এটা আমাদের শুরু করতে হবে। যে স্কেলেই হোক না কেন। তবে আমাদের প্রত্যাশাকে হয়তোবা একটু লিমিটেড স্কেলে রাখতে হবে। কিন্তু আমরা ডেফিনেটলি ফেল করবো না এবং ইনশাআল্লাহ আস্তে আস্তে সবাই এটার সাথে সম্পৃক্ত হবেন।
এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমাদের অঞ্চলের অভিজ্ঞতা যদি আমি বলি, ভারত লোকসভা নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোট শুরু করেছে। লাস্ট নির্বাচনটা যদি বলি, তাদের প্রায় চার কোটি প্রবাসী ভোটারের মধ্যে ভোটের জন্য নিবন্ধন করেছিলেন মাত্র ১ লাখ ১৯ হাজার এবং ভোট দিয়েছিলেন মাত্র দুই হাজার ৯০০ জন। এটা ভারতের অভিজ্ঞতা। পাকিস্তান আজ পর্যন্ত সেইভাবে বাস্তবায়ন করতে পারে নাই। শ্রীলঙ্কাও সেইভাবে এখনো বাস্তবায়ন করতে পারে নাই। তারা অনলাইন বেশ কিছু সিস্টেম নিয়ে ট্রায়াল ফেজে আছে। মালয়েশিয়ার কথা যদি বলি, মালয়েশিয়াতে প্রায় ১৮ লাখ প্রবাসী আছে। তারা গত তিনটা নির্বাচন ধরে চেষ্টা করে সর্বশেষ নির্বাচনে নিবন্ধন করতে পেরেছিলেন ৫৪ হাজার। যদিও বা তাদের নিবন্ধনে একটা নেগেটিভ ইনসেন্টিভ কাজ করে। কারণ তাদের এই খরচটা বহন করতে হয় ইন্ডিভিজুয়াল ভোটারের। দেশ এই খরচটা বহন করে না।
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, আমি এই উপপাদ্যগুলো তুলে ধরছি, যাতে করে আপনারাও বুঝতে পারেন যে চ্যালেঞ্জটা কোন জায়গায়। আরেকটা চ্যালেঞ্জ হচ্ছে পোস্টাল ব্যালটের। বিশেষ করে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে গ্লোবাল ওয়েস্টেজ রেট ২৪ শতাংশ। প্রতি চারটা পোস্টাল ব্যালটের একটা দেশে এসে পৌঁছায় না। এটা বিভিন্ন কারণে হয়। তার মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে ইন্ডিভিজুয়াল ভোটার যখন ওসিবির জন্য রেজিস্ট্রেশন করেন, সেই রেজিস্ট্রেশনে তিনি যে ঠিকানাটা দেন সেই ঠিকানায় দেখা যায় ঠিকভাবে লেখেননি। তখন ডাকটা পৌঁছায় না। অনেকে আছেন ডাক পৌঁছায় কিন্তু তিনি আর সময়মতো ভোটটা দিয়ে পোস্ট করেন না। এই সময় মতো পোস্টটা ফেরত না আসার কারণে এটা গণনার মধ্যে নেওয়া সম্ভব হয় না।
আবুল ফজল মো. সানাউল্লহ বলেন, আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ মূলত দুইটা। পোস্টাল ব্যালটের ব্যাপারে অন্য চ্যালেঞ্জগুলো তো আছেই। এক নম্বর চ্যালেঞ্জ হচ্ছে গোপনীয়তার চ্যালেঞ্জ এবং যেটা নিয়ে আমি মনে করি সবাইকে কাজ করতে হবে। ইন্ডিভিজুয়াল ভোটাররা যেন এই গোপনীয়তাটা রক্ষা করেন এবং সময় মতো ভোটটা দেন। কেউ যেন তার ভোটে তাকে ইনফ্লুয়েন্স করতে না পারে। তার ভোটটা তিনি কাকে দিয়েছেন, এটা যেন ডাইভার্স না হয় এবং এটা তার ডিক্লারেশনের মধ্যেও থাকবে। তিনিও একটা আন্ডারটেকিং দেবেন, ইন্ডিভিজুয়াল ভোটার।
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ আরও বলেন, আমাদের এখানে সচেতনতা সৃষ্টির একটা জায়গা আছে। আর দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হলো, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা নিশ্চিত হওয়ার পরে কিন্তু আমাদের ভোট শুরু হয়ে যাবে। কিন্তু যদি কোনো আসনে শেষ মুহূর্তে আদালতের আদেশে প্রার্থী তালিকা পরিবর্তন হয়ে যায়, সেই ক্ষেত্রে সেই আসনে বিদেশ থেকে সংগৃহীত সব ভোট বাদ পড়ে যাবে। এই একটা চ্যালেঞ্জ আমাদের আছে। এটাও একটা স্ট্রাকচারাল চ্যালেঞ্জ হিসেবে আমাদের একটা সীমাবদ্ধতা নিয়ে এগোতে হচ্ছে।
পোস্টাল ব্যালটে প্রবাসীদের ভোট প্রতি নির্বাচন কমিশনের ব্যয় ৭০০ টাকা। এজন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৪০০ কোটি টাকা। আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্থে ভোটের লক্ষ্য নিয়ে ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আর এবারই প্রথমবারের মতো বড় পরিসরে প্রবাসীদের ভোটের আওতায় আনা হচ্ছে।
দেশের বাইরে থেকে ভোট দেওয়ার বিষয়ে লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশন ও প্রবাসীদের সঙ্গে অনলাইনে এই মতবিনিমিয় সভার আয়োজন করে ইসি ও লন্ডন হাইকমিশন। নির্বাচন ভবনে ইসি সচিব, এনআইডি মহাপরিচালকসহ অন্য কর্মকর্তারা এবং হাইকমিশনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।