সাতকানিয়ায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আরও একজনের মৃত্যু

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া চন্দনাইশে সীমান্তবর্তী এলাকায় গ্যাস ক্রসফিলিং গুদামে ভয়াবহ সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতের নাম মোহাম্মদ আকিব (১৭)। বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টার দিকে ঢাকার জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ নিয়ে এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৭ জনে।
নিহত আকিব চন্দনাইশের হাশিমপুর ইউনিয়নের ছৈয়দাবাদ পর্দার ডেবা এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আমিনের ছেলে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও গাউছিয়া কমিটি বাংলাদেশের চন্দনাইশ মানবিক টিমের প্রধান মাওলানা সোলাইমান ফারুকী।
বর্তমানে আরও তিনজন দগ্ধ শ্রমিক—মোহাম্মদ কফিল (২২), মো. সৌরভ রহমান (২৫) ও মোহাম্মদ লিটন (২৮)—ঢাকার বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
জানা যায়, গত বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ভোর সাড়ে ৬টার দিকে চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া সীমান্তবর্তী চরতী ইউনিয়নের নির্জন এলাকায় একটি অবৈধ গ্যাস ক্রসফিলিং গুদামে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। গুদামের ভেতরে অবৈধভাবে গ্যাস সিলিন্ডার ভরার কাজ চলছিল। হঠাৎ এক পর্যায়ে সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হলে মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। অগ্নিকাণ্ডে গুদামঘরটি সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয় এবং ভেতরে থাকা ১০ শ্রমিক গুরুতর দগ্ধ হন।
খবর পেয়ে চন্দনাইশ ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পানি ছিটিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। স্থানীয়দের সহায়তায় আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে গুরুতর অবস্থায় ধাপে ধাপে সবাইকে ঢাকার জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করা হয়।
ঢাকায় স্থানান্তরের পর থেকে একে একে মৃত্যুর মিছিল শুরু হয়। শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাতে মারা যান শ্রমিক মো. ইদ্রিস (২৬) ও মো. ইউসুফ (৩০)। এরপর সোমবার ভোরে মারা যান গুদামটির মালিক মাহাবুবুল আলম (৪৭)। একইদিন সকালেই মারা যান শ্রমিক মোহাম্মদ ছালেহ (৩৩)। মঙ্গলবার সকালে মারা যান মোহাম্মদ হারেছ ওরফে হারুন (২২)। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার প্রাণ হারালেন কিশোর শ্রমিক আকিব (১৭)।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় অবৈধভাবে গ্যাস ক্রসফিলিং গুদাম পরিচালিত হচ্ছিল। কিন্তু প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন মালিকপক্ষ। প্রাণহানির এ ঘটনা ঘটার পর এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
এদিকে চন্দনাইশ ও সাতকানিয়ার সাধারণ মানুষ এ ঘটনার পেছনে কারা দায়ী, তা খতিয়ে দেখতে প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে অবৈধ গ্যাস ব্যবসার বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালানোর আহ্বান জানান তারা। বর্তমানে নিহতদের স্বজনেরা শোকে স্তব্ধ। আর হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন তিন শ্রমিক। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় মৃত্যু সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে চিকিৎসকরা।
এ বিষয়ে সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পর থেকেই আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতে তৎপর রয়েছি। কিন্তু গ্যাস সিলিন্ডার গুদামের মালিক নিজেও মারা যাওয়ায় মামলা করার জন্য কোন বাদী আমরা পাচ্ছি না। তারপরেও আমরা বিষয়টির আইনগত দিক বিবেচনা করে ব্যবস্থা নিচ্ছি।