১৫ বছরে শত শত কোটি ডলার বিদেশে পাচার করা হয়েছে : ড. ইউনূস
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দেশের পাচার হওয়া অবৈধ সম্পদ পুনরুদ্ধার করা বর্তমানে আমাদের অন্যতম শীর্ষ অগ্রাধিকার। গত ১৫ বছরে দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি ডলার অবৈধভাবে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। আমরা নিরলসভাবে এই সম্পদ ফেরত আনার চেষ্টা করছি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর আইনি প্রক্রিয়া এবং অন্যান্য নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার কারণে আমাদের এই প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
আজ শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর দৃঢ় সদিচ্ছা ছাড়া আমরা পাচার হওয়া অবৈধ সম্পদ পুনরুদ্ধারে সফল হব না। বিশ্বের বিদ্যমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থা উন্নয়নশীল দেশ থেকে সম্পদের এই অবৈধ পাচার কার্যকরীভাবে প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিধি-বিধানগুলো বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ট্যাক্স হেভেন এ বিপুল অবৈধ অর্থ স্থানান্তরে উৎসাহিত করছে। তাই, যেসব দেশ ও প্রতিষ্ঠান এ পাচারকৃত সম্পদ গচ্ছিত রাখবার সুযোগ দিচ্ছে, তাদের আমি আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যেন এই অপরাধের শরিক না হয়—এ সম্পদ তার প্রকৃত মালিককে, অর্থাৎ কৃষক, শ্রমিক ও সাধারণ করদাতাদের নিকট ফিরিয়ে দিন। আমি উন্নয়নশীল দেশ হতে সম্পদ পাচার রোধে কঠোর আন্তর্জাতিক বিধি-বিধান প্রণয়ন এবং এর প্রয়োগ নিশ্চিতের প্রস্তাব করছি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, রাজস্বখাতের ঐতিহাসিক সংস্কারের পাশাপাশি আমরা বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার চালু করেছি, ব্যাংক খাতে অ্যাসেট কোয়ালিটি রিভিউ, নতুন ব্যাংক রেজোলিউশন অধ্যাদেশ ও আসন্ন ডিপোজিট প্রটেকশন অধ্যাদেশের মাধ্যমে শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা আনছি; পুঁজিবাজারে সংস্কার টাস্কফোর্স ও শক্তিশালী তদন্ত ব্যবস্থার মাধ্যমে তদারকি আধুনিকীকরণ করেছি। সরকারি ক্রয় ব্যবস্থায় ডিজিটাল টেন্ডারিং বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং স্বার্থের সংঘাত সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পাশাপাশি নতুন পাবলিক অ্যাকাউন্টস অডিট অধ্যাদেশের মাধ্যমে জবাবদিহিতা আরও জোরদার করা হয়েছে। শুধু আর্থিক স্থিতিশীলতা অর্জনের সীমাবদ্ধ না থেকে আমরা বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলছি: বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডো এখন ১৯টি সংস্থাকে একীভূত করে কাস্টমস প্রক্রিয়া সহজ করছে; দ্রুত বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য বিশেষায়িত বাণিজ্য আদালত গঠিত হয়েছে; বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ওয়ান-স্টপ সার্ভিস সাবলীলভাবে প্রদানের জন্য সমন্বয় কমিটি গঠন করেছে, নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষগুলোকে একই ছাদের নীচে নিয়ে আসা হয়েছে এবং ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে; এবং এফডিআই হিটম্যাপ ও জাতীয় সেমিকন্ডাক্টর টাস্কফোর্স বিনিয়োগকারীদের কাছে উচ্চ সম্ভাবনাময় খাতগুলোর তথ্য সহজ ও স্বচ্ছভাবে তুলে ধরছে। বাণিজ্য লজিস্টিকসেও উন্নতি ঘটছে—চট্টগ্রাম বন্দরে গত আগস্টে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ঘটেছে, যা দক্ষতার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নির্দেশ করে। এসব উদ্যোগ অর্থনৈতিক শাসনব্যবস্থাকে যেমন সুদৃঢ় করছে, তেমনি বিনিয়োগকেও নিরাপদ করছে। এসব সংস্কারের ফলে বাংলাদেশ এখন টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নতুন একপর্যায়ে প্রবেশ করেছে।
ড. ইউনূস বলেন, এর পাশাপাশি, এত স্বল্প সময়ে অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর পিছনে আমাদের প্রবাসীরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তাঁরা বিদেশের মাটিতে কঠোর পরিশ্রম করে প্রতি মাসে দেশে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। শুধু বাংলাদেশেই নয়, স্বাগতিক দেশগুলোতেও তাদের বিশাল অবদান রয়েছে। তাঁরা সেখানে বহুল চাহিদাসম্পন্ন সেবা প্রদান করছেন। এটি তাই আমাদের জন্য যেমন, তেমনি স্বাগতিক দেশগুলোর জন্যও সমানভাবে লাভজনক। উভয় দেশের জন্যই তা উপকারী।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, এ প্রসঙ্গে জানাতে চাই, আমরা শ্রম অধিকার সংস্কার এগিয়ে নিচ্ছি। ইতোমধ্যেই স্বাধীন শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে একটি কমিটি গঠিত হয়েছে; বাংলাদেশ শ্রম আইন সংশোধনের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, যেখানে ট্রেড ইউনিয়ন প্রক্রিয়া সহজ করা, মাতৃত্বকালীন ছুটি বৃদ্ধি, এবং আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক উভয় খাতের শ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা সম্প্রসারণের পদক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। ট্রেড ইউনিয়নের জন্য অনলাইন নিবন্ধন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে এবং নিবন্ধন প্রক্রিয়াকে আরও সহজতর করার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি, শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষায় আমাদের অঙ্গীকারের নিদর্শনস্বরূপ সম্প্রতি আমরা ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার লেবার সেন্টারের সংবিধিতেও স্বাক্ষর করেছি। এই কারণেই আমরা নিরাপদ, সুশৃঙ্খল ও নিয়মিত অভিবাসনকে সমর্থন করি এবং যেসব দেশে প্রবাসী শ্রমিকরা যান, সেই সব দেশে তাঁদের জন্য সহমর্মিতা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানাই।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, উন্নত বিশ্ব যেখানে বয়স্ক জনসংখ্যার চাপে ভুগছে, বাংলাদেশ সেখানে সৌভাগ্যবান—আমাদের ৬০ শতাংশেরও বেশি মানুষের বয়স ৩৫ বছরের নিচে। তাই অভিবাসন প্রক্রিয়াকে সহজ করলে তা উভয় পক্ষের জন্যই উপকারী হবে। তরুণ জনসংখ্যার এই সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে আমরা উন্নত বিশ্বের শ্রম সমস্যার সমাধান ও প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম হবো।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম ইতোমধ্যেই প্রমাণ করেছে যে তারা সমাজ পরিবর্তনের চালিকাশক্তি। আমরা তাদের দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগ করছি—তথ্যপ্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, নবায়নযোগ্য শক্তি, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য হলো—প্রত্যেক তরুণকে শুধু চাকরিপ্রার্থীর পরিবর্তে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা।
ড. ইউনূস বলেন, এ উদ্দেশ্যে আমরা জাতিসংঘের সঙ্গে অংশীদারিত্বে, মাঠ পর্যায়ের তরুণদের সঙ্গে সরকারের শীর্ষ নীতিনির্ধারকদের যুক্ত করার একটি স্থায়ী মাধ্যম চালু করছি। ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে সারা দেশে একাধিক পরামর্শ সভার আয়োজন করা হয়েছে। আজকের তরুণরা স্থানীয় পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে—অনলাইন ও অফলাইন ফোরাম, জরিপ এবং প্রচারণার মাধ্যমে তাদের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকতে চায়। তারা নেতৃত্ব বিকাশ, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং ডিজিটাল সক্ষমতা উন্নয়নের জন্য আরও বেশি সুযোগ চায়। তারা চায় এই প্রক্রিয়ায় জবাবদিহিতা অন্তর্ভুক্ত থাকুক—নিয়মিত অগ্রগতি প্রতিবেদন এবং অব্যাহত সংলাপের প্রতিশ্রুতি থাকুক। সর্বোপরি, প্রক্রিয়াটি হোক অন্তর্ভুক্তিমূলক যাতে নারী, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, প্রতিবন্ধী, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সকলের অংশগ্রহণ ও নেতৃত্বের সমান সুযোগ থাকবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তরুণদের নিয়ে পরিকল্পনার ক্ষেত্রে এ বছরটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এ বছর আমরা বিশ্ব যুব কর্মপরিকল্পনার ৩০তম বার্ষিকী পালন করছি। শুধু বর্তমান প্রজন্মের তরুণদের চ্যালেঞ্জ নয়, এ বছর তাই ভবিষ্যতেও তারা যে সংকট ও সমস্যার মুখোমুখি হবে, তা অনুধাবন করে তার সম্ভাব্য সমাধান খুঁজে বের করবারও সুযোগ এনে দিয়েছে। দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির এই যুগে উন্নয়নশীল বিশ্বের তরুণদের জন্য আরও গভীর এক ডিজিটাল বিভাজন তৈরি হওয়ার ঝুঁকি আজ আমাদের একটি বড় উদ্বেগ। কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ভাষা-ভিত্তিক বৃহৎ মডেল কিংবা আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থা—এসব প্রযুক্তি যেন তাই পক্ষপাতদুষ্ট না হয়, এবং এর সুফল যেন ন্যায্যভাবে সবার কাছে পৌঁছায় তা আজ আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায়, বিশ্বব্যাপী এমন একটি প্রজন্ম তৈরি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে যারা নিজেদের বঞ্চিত, প্রান্তিক, অন্যায় ও অবিচারের শিকার হিসেবে বিবেচনা করবে। তারা সব ধরনের ক্ষতিকারক প্রলোভনের সহজ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে। আমরা মনে করি, প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সুফল বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়ে তরুণদের ঝুঁকিমুক্ত রাখার জন্য শুধু প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন যথেষ্ট নয়; প্রয়োজন সামাজিক উদ্ভাবন।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, প্রায় অর্ধ শতাব্দী আগে আমরা ক্ষুদ্রঋণের ধারণা নিয়ে এসেছিলাম। তখন সেটি ছিল প্রথাগত ধারণার বিরুদ্ধে এক বৈপ্লবিক নিরীক্ষা—কিন্তু আজ বিশ্বব্যাপী তা মূলধারার হাতিয়ার হিসেবে স্বীকৃত। ক্ষুদ্রঋণ, লক্ষ লক্ষ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করেছে। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গ্রামীণ আমেরিকা বছরে এখন চার বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ঋণ নিম্ন-আয়ের নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিতরণ করেছে, এবং এর প্রায় শতভাগ নিয়মিতভাবে পরিশোধ করে যাচ্ছে।
ড. ইউনূস আরও বলেন, বাংলাদেশ ও বিশ্বজুড়ে আমরা আজ ‘সামাজিক ব্যবসা’র ধারণা প্রসার করছি। এটি এক ব্যবসা যার সম্পূর্ণ মুনাফা সামাজিক কল্যাণেই পুনর্বিনিয়োগ করা হয়। ‘সামাজিক ব্যবসা’ প্রমাণ করছে যে প্রতি মানুষের উদ্যোক্তা সত্ত্বা সামাজিক কল্যাণে ও সামাজিক সমস্যা সমাধানে কাজে লাগানো সম্ভব। এর ফলে পৃথিবীর যাবতীয় সমস্যার সমাধানের একটি সৃজনশীল পদ্ধতি সকলের হাতে এসে যায়—যেটি পরিবেশের সমস্যা হোক, সম্পদ কেন্দ্রীভূত হওয়ার সমস্যা হোক, স্বাস্থ্যের সমস্যা হোক, বেকারত্ব দূরীকরণের সমস্যা হোক, দারিদ্র্য দূরীকরণের সমস্যা হোক—সব কিছুতে এই পদ্ধতি টেকসই বা কাজে লাগানো যায়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জলবায়ু সংকট চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায় বিশ্বজনীন তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখার লক্ষ্যমাত্রা আজ আমাদের হাতছাড়া হয়ে গেছে। প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার জলবায়ু সহায়তার প্রতিশ্রুতিও পূরণ হয়নি। বরং যে ক্ষুদ্র অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ হয়ে থাকে, তাও কাগজে কলমে দেখানো হচ্ছে বহুগুণ হিসেবে। এটি সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড’ পুরোপুরি চালু করতে হবে। জলবায়ুর পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রশমনের উদ্যোগ যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি অভিযোজনেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে। আর অভিযোজন প্রচেষ্টা হতে হবে দেশজ, স্থানীয়ভাবে নির্ধারিত ও পরিচালিত। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে স্থানীয়ভাবে সংবেদনশীল অভিযোজনের নীতিকে মূল ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করেছে। আসন্ন কপ-৩০ সম্মেলনে আমরা তৃতীয়বারের মতো জলবায়ু পরিবর্তন রোধকল্পে আমাদের জাতীয় প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করব, যেখানে জলবায়ুর পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রশমন লক্ষ্যের পাশাপাশি অভিযোজন উদ্যোগও থাকবে—বিশেষ গুরুত্ব পাবে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল রক্ষা ও জলাভূমি পুনরুদ্ধার। একইসঙ্গে আমরা আশা করি যে বৈশ্বিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে উচ্চ-কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলো, তাদের দায়িত্বটুকু আন্তরিকভাবে পালন করবে।
ড. ইউনূস আরও বলেন, বর্তমানের আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো বিশ্ব বাণিজ্যে সংরক্ষণবাদের উত্থান। আমাদের সময়ে আমরা দেখেছি বাণিজ্য ও বিশ্বায়নের সুফল মাত্র তিন দশকে একশ কোটির মত মানুষকে দারিদ্র্য মুক্ত করেছে। এখন যদি আমরা উল্টো পথে হাঁটি, তবে আমাদের সন্তানদের আর সেই সুযোগ থাকবে না। এটা অনস্বীকার্য যে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে, প্রতিটি দেশের সার্বভৌম স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে হবে এবং কোনো দেশকে তার সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা বইতে দেয়া যাবে না। কিন্তু বৈশ্বিক শান্তি ও সমৃদ্ধি টিকিয়ে রাখার স্বার্থে উন্মুক্ত, ন্যায়সঙ্গত ও নিয়মভিত্তিক বৈশ্বিক বাণিজ্যের কোনো বিকল্প নেই। তাছাড়া বৈশ্বিক বাণিজ্যে দ্রুত সামাজিক ব্যবসার প্রসার ঘটাতে হবে। উন্নয়ন সহায়তার একটি বড় অংশ সামাজিক ব্যবসা প্রসারে বিশ্বময় ক্রমাগতভাবে জোরদার করতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমার প্রজন্ম দেখেছে কীভাবে একটি পারস্পরিক নির্ভরশীল বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যেকোনো সংঘাতকে ব্যয়বহুল করে তুলেছে এবং বিশ্বে শান্তি টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করেছে। আজ বিশ্বব্যাপী ১২০টিরও বেশি সশস্ত্র সংঘাত চলছে—পারস্পরিক অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা ভেঙে গেলে এ রকম সংঘাত আরও বাড়বে, ব্যাহত হবে উন্নয়ন, বিনষ্ট হবে বিশ্ব শান্তি।