প্রতীক নিয়ে এনসিপি অনড় শাপলায়, অস্বস্তিতে ইসি?

নির্বাচন কমিশন বলছে, তফসিলে না থাকায় শাপলা প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া যাচ্ছে না। আর জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বারবার বলছে, তারা শাপলার ব্যাপারে অনড়। শাপলা ছাড়া আর কোনো প্রতীক নেবে না। প্রয়োজনে দলটি নিবন্ধনও নেবে না।
আজ বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) বিকেলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকে বসে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বৈঠকে ইসি সচিবও ছিলেন। আড়াই ঘণ্টার বৈঠক শেষে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বিষয়টি পুনরায় ব্যক্ত করেছেন।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, শাপলা পেতে আইনি বাধা এবং রাজনৈতিক বাধা কোথাও দেখছি না। এজন্য আমরা আশাবাদী শাপলা পাব। সে বিষয়টা আমরা জানিয়ে এসেছি উনাদের। আমরা নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্ন করেছিলাম, প্রতীক প্রশ্নে যদি শাপলা না দিতে চান সেটাতে আপনার ব্যাখ্যা কী? দুই ঘণ্টা উনারা নিশ্চুপ ছিলেন। কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেন নাই।
এনসিপির এই নেতা বলেন, আপনি (ইসি) যদি শাপলা না দেন তাহলে আপনাকে ব্যাখ্যা দিতে হবে। যেহেতু সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে উনি আছেন, আর উনি যদি রাষ্ট্রীয় কোনো প্রতীকের দায়িত্ব নেন যেটাকে রক্ষা করবেন। নির্বাচন কমিশনের সামনে আপাতত দুইটি রাস্তা আছে। একটি হল ধান বাতিল করা, তারা বাতিল করা, সোনালী আঁশ বাতিল করা অথবা শাপলা দেওয়া।
পাটওয়ারী বলেন, আমরা আজ নির্বাচন কমিশনকে বলেছি, এনসিপি শাপলা ছাড়া নিবন্ধন নেবে না। শাপলা ছাড়া নিবন্ধন হবে না। শাপলার অবস্থানে আমরা রয়েছি। দলটির এমন বক্তব্যের পর সাংবাদিকরা ইসি সচিব আখতার আহমেদের কাছে গেলেও তিনি কথা বলতে চাননি।
এ ব্যাপারে ইসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এনসিপির প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে জটিলতার কারণে নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে দেরি হচ্ছে। ইসি বারবার বলছে, তাদের সুযোগ নেই। কিন্তু, এনসিপি পুরোপুরি অনড় শাপলার ব্যাপারে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, এই প্রতীক নিয়ে আরও জল ঘোলা হবে। একটি প্রতীকের কারণে পুরো নিবন্ধন প্রক্রিয়াটাই বন্ধ হয়ে আছে। এভাবে যত সময় গড়াবে, তত কাজে দেরি হবে। এর সমাধান দরকার। নতুন নিবন্ধন পাওয়া দলগুলোকে সংলাপে ডাকবে ইসি। কিন্তু, নিবন্ধন প্রক্রিয়া তো শেষ হচ্ছে না। শেষ না করে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপেও ডাকতে পারছে না ইসি।
জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপির নির্বাচনি প্রতীক নিয়ে জটিলতা চলছেই। ক্রমাগত তারা শাপলা ফুলের ব্যাপারে জোর দিয়ে আসছে, যদিও নির্বাচন কমিশন প্রতীক সংরক্ষণের যে প্রজ্ঞাপন দিয়েছে তাতে এই প্রতীক নেই। সর্বশেষ গত ৩০ সেপ্টম্বর প্রতীকের ব্যাপারে একটি চিঠি পাঠায় এনসিপিকে।
গত ৭ অক্টোবরের মধ্যে তালিকাভুক্ত প্রতীক থেকে পছন্দ করে তা জানানোর জন্য চিঠিতে জানায় ইসি। চিঠিতে বলা হয়, দলটির প্রথম পছন্দ ‘শাপলা’ বর্তমানে নির্বাচন পরিচালনার বিধিমালার তালিকায় নেই, তাই এটি বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
জবাবে গত ৭ সেপ্টম্বর ইসি সচিবের কাছে ইমেইলে ভিন্ন ভিন্ন নয়টি শাপলার ছবি এঁকে পুনরায় শাপলা, সাদা বা লাল শাপলার দাবি করেছেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
বারবার শাপলা চেয়ে ইসিকে অস্বস্তিতে ফেলেছে এনসিপি। বেগুন, বালতি, হেলিকপ্টারসহ প্রায় অর্ধশত তালিকা থেকে পছন্দের প্রতীক বেছে নিতে এনসিপিকে প্রস্তাব দিয়েছিল ইসি। কিন্তু, দলটি এবার আঁকা চিত্রের শাপলা চেয়ে চিঠি দিয়েছে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানকে।
অন্যদিকে ইসি ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ কখন হবে তা এখনও নির্ধারণ করতে পারেনি কমিশন। কারণ যে কয়টি নতুন দল নিবন্ধন পাবে সে সব দলকেও সংলাপে আমন্ত্রণ জানাবে ইসি।
জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপি নিবন্ধন আবেদনপত্র জমা দিয়ে শাপলার পাশাপাশি বিকল্প প্রতীক হিসেবে কলম এবং মোবাইল ফোনও চেয়েছিল। পরে দলটি তাদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় পছন্দের তালিকাতে সাদা ও লাল শাপলা যুক্ত করে ইসিকে জানায়।
কিন্তু ইসির সংরক্ষিত তালিকায় শাপলা নেই। তাই এনসিপির দ্বিতীয় বা তৃতীয় পছন্দের কলম এবং মোবাইল ফোনসহ প্রায় অর্ধশতটি প্রতীকের তালিকা থেকে একটি বেছে নেওয়ার জন্য এনসিপিকে চিঠি পাঠায় ইসি।
কিন্তু গত মঙ্গলবার বিকেলে কমিশনের সেই চিঠি প্রত্যাখ্যান করে শাপলাতেই অনড় থেকে আরেকটি চিঠি পাঠায় এনসিপি। এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম স্বাক্ষরিত ইসি সচিবকে দেওয়া চিঠিতে দলটি ভিন্ন ভিন্ন ৯ টি ভার্সনে আঁকা শাপলার নমুনা ছবি যুক্ত করেছে। এদিকে ইসি সচিব দেশে না থাকায় এনসিপির এই চিঠির সিদ্ধান্তের ব্যাপারে এখনও কিছু জানা যায়নি।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের গঠিত কমিটি ১৫০টি নতুন প্রতীক অন্তর্ভুক্ত করার চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তুত করে। তালিকায় ‘শাপলা’ প্রতীক রয়েছে বলে এনসিপিকে আশ্বস্ত করেন কমিটির একজন সদস্য। এ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমেও সংবাদ প্রকাশিত হয়। ২২ জুন এনসিপি রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন দাখিল করে এবং দলের অনুকূলে ‘শাপলা’ প্রতীক সংরক্ষণের জন্য আবেদন জানায়।
৩ আগস্ট শাপলা, সাদা শাপলা অথবা লাল শাপলাকে প্রতীক হিসেবে দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেয় এনসিপি। এছাড়া শাপলার ভিন্ন ভিন্ন ভার্সন গ্রহণ করার ক্ষেত্রে এনসিপি সবসময় আলোচনায় প্রস্তুত রয়েছে বলে জানানো হয়। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এনসিপির পরবর্তী বৈঠকে প্রতীক হিসেবে শাপলাকে দৃশ্যমান করার ক্ষেত্রে জাতীয় প্রতীকে দৃশ্যমান শাপলার পরিবর্তে ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ভার্সনে আঁকা শাপলার নমুনা ছবি নির্বাচন কমিশনের কাছে উপস্থাপন করা হয়।
পরবর্তীতে গত ২৪ সেপ্টেম্বর এনসিপি নির্বাচন কমিশনের কাছে সংশ্লিষ্ট বিধিমালা সংশোধন করে শাপলা প্রতীক তালিকাভুক্ত করে দলের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে চিঠি দেয়। কিন্তু দুটি চিঠির বিষয়ে নির্বাচন কমিশন আজ পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে অভিযোগ তোলা হয়।