পিআর নিয়ে গণভোটের দায়িত্ব কে দিয়েছে, আমীর খসরুর প্রশ্ন

সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর) নির্বাচনের বিষয়ে গণভোট করার দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোকে কে দিয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
আজ শনিবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে এক আলোচনা সভায় আমীর খসরু এই প্রশ্ন তোলেন। রাজধানীর মৌচাকে কসমস সেন্টারে কসমস গ্রুপ ও ইউনাইটেড নিউজ এজেন্সি অব বাংলাদেশ-এর যৌথ উদ্যোগে ‘ইলেশন ২০২৬ : এ ক্রিটিকাল লুক এট প্রোপরশনাল রিপ্রেজেনটেশন’শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের মামুন আল মোস্তফা।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, পিআরের জন্য আমাকে গণভোটে যেতে হবে কেন? আমাদের তো… প্রত্যেকটি দলের অনেকগুলো ইস্যু আছে যেগুলো ঐক্যমত হয় নাই। তাহলে যদি গণভোটের প্রক্রিয়ায় আপনি যেতে চান আগামী দুই বছর যাবত আপনাকে গণভোটই করতে হবে। ফার্স্ট অফ অল, এই দায়িত্ব আমাদেরকে কে দিয়েছে? আমাদেরকে জনগণ গণভোট করার এই দায়িত্ব দেয় নাই।
আমীর খসরু বলেন, বাংলাদেশে একটি অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে কিসের ভিত্তিতে? সংবিধানের ভিত্তিতে হয়েছে। বর্তমান সংবিধানের ভিত্তিতেই সরকার চলছে। সুতরাং বর্তমান সংবিধানের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকার চলে, আমাদের গণতান্ত্রিক অর্ডারকে যদি ফিরিয়ে আনতে হয় এবং পরবর্তীতে পরিবর্তন করতে হয় প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে আমাদের বর্তমান সংবিধানের আওতায় নির্বাচন করে গণতান্ত্রিক অর্ডারে আমাকে আসতে হবে আগে।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আপনি ডেমোক্রেটিক অর্ডারে আসার পরে পাবলিক ডিসকাস বলেন, পার্লামেন্টারি ডিবেটে বলেন, পার্লামেন্টের ভেতরে-বাইরে বহু আলোচনার একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশে ফেরত যাবেন। এখন তো আপনি গণতান্ত্রিক অর্ডারের মধ্যে নাই। ১৪ মাস ধরে একটা সরকার আছে যে সরকার সেটা জনগণের নির্বাচিত কোনো সরকার না। তাই আগে আমার একটি নির্বাচিত সরকার, নির্বাচিত সংসদ গঠন করতে হবে। তারপর প্রত্যেকটি দলের অধিকার আছে তাদের বিষয়গুলো নিয়ে জনমত সৃষ্টি করার, জনগণের কাছে যাওয়ার। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, ডেমোক্রেসি ইজ এ কারেকশন প্রসেস।
আমীর খসরু বলেন, মান্না ভাই (মাহমুদুর রহমান মান্না) বললেন, জনগণ কিছুই জানে না পিআর সম্বন্ধে। যারা পিআরের পক্ষে এটা তাদের দায়িত্ব হবে তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে এনে জনগণের কাছে নিয়ে জনগণের ম্যান্ডেট নেওয়া। জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনে যেটা কনসেন্সাসে হয়েছে অর্থাৎ যতটুকু ঐক্যমত হবে আমরা তা নিয়ে এগোবো। আর যেটাতে ঐক্যমত হবে সেটা ক্লোজ করার দরকার নাই। সেটা প্রত্যেকটি দলকে জনগণের কাছে নিয়ে যেতে হবে, ম্যান্ডেট নিতে হবে।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এবার ঐকমত্য যেসব হয়েছে সেটাও তো ম্যান্ডেট লাগবে… বাংলাদেশের জনগণ আমাদের ২০ থেকে ৩০টা রাজনৈতিক দলকে কোনো দায়িত্ব তো দেয় নাই যে, আপনারা বসে বাংলাদেশের ভবিষ্যত ঠিক করবেন। হু আর ইউ? বাংলাদেশের মানুষ কী এই কমিশনকে বা ২০ থেকে ৩০টা রাজনৈতিক দলকে দায়িত্ব দিয়েছে যে, আগামীর বাংলাদেশ কেমন হবে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র কী হবে, গণতন্ত্রের প্রক্রিয়া কীভাবে হবে। এটা তো জনগণ দেয় নাই।
আমীর খসরু বলেন, ডেমোক্রেসি হচ্ছে, কনভারসেশন, ডায়লগ, ইন্টারেকশন ইজ দা প্রসেস… ওটার মাধ্যমে …এই কাজটা আমরা করছি। সুতরাং ওই লিমিটেশনটা আমাদের বুঝতে হবে যে, এখানে কিন্তু সব জায়গায় ঐকমত্য হবে না… আমরা তো বাকশাল করছি না। আমরা সকলে আলোচনা করছি, আমরা ভিন্ন ভিন্ন দল করছি। সুতরাং এই ঐকমত্য কমিশন যে সবকিছু ডিসাইড করে দিতে পারবে এটা বোঝার কোনো কারণ নাই। যতটুকু কনসেন্সাস বা ঐক্যমত হবে ততটুকু ক্লোজ করে বাকিটা নিয়ে আমরা জনগণের কাছে যাবো ম্যান্ডেট নিতে। এটা ছাড়া তো হবে না।
কসমস গ্রপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনায়েতউল্লাহ খানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অংশ নেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ, এবি পার্টির মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল, গণঅধিকারের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, নির্বাচন কমিশনের সাবেক সচিব সম জকরিয়া প্রমূখ।