প্রতিবেশির আক্রোশের শিকার শখের ছাদবাগান, কাঁদছেন শামীমা
সাভারে কান্না থামছে না নিঃসন্তান শামীমা আলমের। শখের ছাদবাগান ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে প্রতিবেশি সাবেক এক শিক্ষকের তাণ্ডবে। সেই থেকে গাছের জন্যে আহাজারি করছেন তিনি। সন্তান হারানো শোকের মতই যেন শোকে বিহ্বল প্রকৃতিপ্রেমী ওই গৃহিণী। রোববার (১২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সাভারের জাহাঙ্গীরনগর কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ঘটে এ ঘটনা। এরপর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা মানুষের প্রতিবাদী স্ট্যাটাসে বিষয়টি হয়ে দাঁড়ায় টক অফ দ্য সাভার।
ছাদবাগানের মালিকের অভিযোগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক আলী আহমেদ হাওলাদারের বিরুদ্ধে। শামীমা বলেন, ওই শিক্ষক আক্রোশে সন্ধ্যায় ছাদবাগানে গিয়ে ভেঙে তছনছ করেছেন গাছের টব। লণ্ডভণ্ড করেছেন আমার সাজানো বাগান।
শামীমা আলম আরও বলেন, আমি ও আমার স্বামী সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম তুহিন জাহাঙ্গীরনগর কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি এলাকায় নিজের এভিনিউ গার্ডেনের আটতলা ভবনের সাত তলায় বসবাস করি। নিজেদের কোন সন্তান না থাকায় আমরা আটতলার ছাদে বিভিন্ন রকমের গাছ দিয়ে ছাদবাগান গড়ে তুলি। নানা জাতের দুই শতাধিক ফুল গাছের পরিচর্যা করেই আমাদের অবসর সময় কাটে। দোলনচাঁপা, মাধবীলতা, ছয় রকমের কলাবতী, জুঁই, টগর, রক্তকরবী, চেরি, গোলাপ, গন্ধরাজসহ নানা প্রজাতির গাছগুলোকে আমি পরিচর্যা করেছি সন্তানের আদরে।
সাজানো গোছানো ছাদবাগান নিয়ে ভবনটির বিভিন্ন ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের অনেকের প্রশংসা কুড়িয়ে ছিলেন শামীমা। অনেকে আবার তাকে অনুপ্রেরণার পাশাপাশি ছাদবাগানে নানা জাতের ফুলের সৌরভে নিজেদের অবসর সময়টুকু কাটাতেন নিজেদের মতো করে।
বিপত্তি বাধে ফ্ল্যাটের অপর বাসিন্দা আলী আহমেদ হাওলাদারের আপত্তিতে। ছাদবাগানের কারণে তাঁর কেনা ফ্ল্যাটের দেওয়াল নষ্ট হবে- এমন আশঙ্কার কথা জানিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই বাগান সরিয়ে নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন তিনি। শেষমেষ ছাদবাগান থাকবে কি থাকবে না এই সিদ্ধান্তে ওই ভবনের বাসিন্দাদের মধ্যে তৈরি হয় বিরোধ। সন্ধ্যায় ছাদবাগানে গিয়ে লণ্ডভণ্ড আর ভেঙে ফেলা নানান গাছের উপড়ানো দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন শামীমা। একপর্যায়ে তার আহাজারি শুনে ছুটে যান বিভিন্ন ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা। তারাও গিয়ে দেখেন, গাছের টবসহ গাছগুলো ভেঙে তছনছ। যেন কালবৈশাখীর ঝড় বয়ে গেছে ছাদবাগানের ওপর দিয়ে।
এ সময় ওই ভবনে থাকা বিভিন্ন ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা ছাদে গিয়ে গাছের ওপর নির্বিচার আক্রমণে ক্ষোভ প্রকাশ করে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান। ভবনের একাধিক বাসিন্দা জানান, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি ইট-কাঠের শহুরে জীবনে সৌন্দর্যবর্ধনে ছাদবাগানটি ছিল অনেকের কাছে একটি প্রিয় জায়গা। কিন্তু মানুষ হয়ে গাছগুলোর ওপর আক্রমণের বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না তারা।
এ বিষয়ে এভিনিউ গার্ডেন ওনার্স ওয়েল ফেয়ার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ইয়াছিন বলেন, গাছ ভাঙার বিষয়টি তারা শুনেছেন। অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয়টি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আলী আহমেদ হাওলাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
২০১৯ সালের ২০ অক্টোবর সাভারের সিআরপি রোডের একটি বহুতল ভবনের ছাদে গড়ে তোলা সুমাইয়া হাবিব বাগানের সব গাছ কেটে সাবাড় করে দেয় পাশের এক প্রতিবেশি। লালমাটিয়া কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া হাবিব বিষয়টি ফেসবুকে লাইভ করলে দেশজুড়ে হইচই পড়ে যায়। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান তৎকালীন নির্বাহী হাকিম ও সাভার সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল্লাহ আল মাহফুজ। আটক করা হয় প্রতিবেশি ফ্ল্যাটের মালিক অভিযুক্ত খালেদা আক্তারকে।

জাহিদুর রহমান