১০ নিবন্ধন প্রত্যাশী দলের অধিকতর তদন্তে আরও ৭ কমিটি

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পেতে আবেদন করা দলগুলোর মধ্যে বাছাইয়ে উত্তীর্ণ নতুন ১০টি দলের কার্যক্রম মাঠপর্যায়ে পুনর্তদন্তের জন্য আরও সাতটি কমিটি গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে যুক্ত করা হয়েছে আরও ২১ কর্মকর্তাকে।
আজ মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) ইসির সিনিয়র সহকারী সচিব মো. নাজমুল কবীর স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি থেকে এ তথ্য জানা যায়।
চিঠিতে বলা হয়েছে, মাঠপর্যায়ের কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা কর্মকর্তাদের দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে—কিছু ক্ষেত্রে তথ্যের অপূর্ণতা ও মন্তব্যে ঘাটতি রয়েছে। যাচাই কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ওই ১০টি দলের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অস্তিত্ব ও কার্যকারিতার বিষয়ে অধিকতর তদন্তের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অস্তিত্ব ও কার্যকারিতার বিষয়ে অধিকতর তদন্তের জন্য সাত অঞ্চলে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি কমিটিতে থাকবেন একজন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, একজন অতিরিক্ত আঞ্চলিক/সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং একজন উপজেলা/থানা নির্বাচন কর্মকর্তা।
যে সাত অঞ্চলের জন্য অতিরিক্ত এ কমিটি গঠন করা হয়েছে—ঢাকা, কুমিল্লা, রাজশাহী, রংপুর, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ ও খুলনা।
দলের অধিকতর তদন্তের জন্য আগের ১০টি কমিটির পর পৃথকভাবে আরও সাতটি কমিটি গঠনের কারণ জানতে চাইলে ইসির সংশ্লিষ্ট শাখার এক কর্মকর্তা জানান, যেসব অঞ্চলে ৫০টির বেশি রাজনৈতিক দলের কার্যালয় তদন্ত করতে হবে, সেসব অঞ্চলের জন্য এ অতিরিক্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অর্থাৎ আগের ১০টি কমিটি ও এখনকার সাতটি কমিটি মিলিয়ে মোট ১৭টি কমিটিতে ৫১ জন কর্মকর্তা এ কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
যে দলগুলোর মাঠে পুনর্তদন্ত হবে—আমজনতার দল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি (বিজিপি), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ, জনতার দল, মৌলিক বাংলা, জনতা পার্টি বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ আমজনগণ পার্টি।
এর আগে গত ৯ অক্টোবর বাছাইয়ে উত্তীর্ণ নতুন ১০টি দলের কার্যক্রম মাঠপর্যায়ে পুনর্তদন্তের জন্য ইসি ১০ প্রশাসনিক অঞ্চলে ১০টি কমিটি গঠন করে।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, তদন্ত কার্যক্রমে সবকিছু ইতিবাচক থাকলে সংশ্লিষ্ট দলগুলোকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে দাবি-আপত্তি চেয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। কোনো দাবি-আপত্তি এলে শুনানি করে নিষ্পত্তি করা হবে। দাবি-আপত্তি না থাকলে দলগুলোকে দেওয়া হবে নিবন্ধন সনদ।
নিবন্ধনের জন্য ১৪৩টি দল আবেদন করলেও প্রাথমিকভাবে কেউ উত্তীর্ণ না হওয়ায় সবাইকে সময় দেওয়া হয়। পুনর্বাছাই শেষে শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়ে ১২১টি দলের আবেদন বাতিল হয়। পরে মাঠপর্যায়ে যাচাই করা ২২ দলের মধ্যে ৭টি বাদ পড়ে, ২টি দল (এনসিপি ও জাতীয় লীগ) নিবন্ধন পায়, ৩টি দলের বিষয় পর্যালোচনায় থাকে এবং বাকি ১০ দলের ওপর অধিকতর তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয় ইসি।
আইন অনুযায়ী, নিবন্ধনের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটি, এক-তৃতীয়াংশ জেলা ও ১০০ উপজেলা কমিটি এবং প্রতিটি কমিটিতে ২০০ ভোটারের সমর্থন থাকতে হয়। যাচাই ও দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তির পর সবকিছু ঠিক থাকলে দলগুলোকে নিবন্ধন সনদ দেয় নির্বাচন কমিশন।
বর্তমানে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৫২টি (আওয়ামী লীগসহ)। নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালে নিবন্ধন প্রথা চালু হয়। এ পর্যন্ত ৫৬টি দল ইসির নিবন্ধন পেলেও পরবর্তী সময়ে শর্ত পূরণে ব্যর্থতা ও আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের নিবন্ধন বাতিল হয়। দলগুলো হলো বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ফ্রিডম পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা। সম্প্রতি আদালতের আদেশে জামায়াতে ইসলামী ও জাগপা নিবন্ধন ফিরে পেলেও ইসি কেবল জামায়াতের নিবন্ধন ফিরিয়ে দিয়েছে।