উপদেষ্টাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে : আজিজুল বারী হেলাল

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল বলেছেন, ‘১৫ অক্টোবর জুলাই সনদে স্বাক্ষর করার কথা ছিল। এই সনদে স্বাক্ষরের মধ্য দিয়েই আগামী জাতীয় নির্বাচন সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার পথ সুগম হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুটি চিহ্নিত রাজনৈতিক দল আজ নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য জুলাই সনদে স্বাক্ষর করছে না। আমরা সমস্ত রাজনৈতিক দলকে আহ্বান করছি গণতন্ত্রের স্বার্থে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করে নির্বাচনকে নিশ্চিত গন্তব্যে পৌঁছাতে দিন।’
খুলনার কয়রা মদিনাবাদ মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে বুধবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে উপজেলা যুবদল আয়োজিত এক যুব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে হেলাল এসব কথা বলেন।
এসময় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আজিজুল বারী হেলাল বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদের নিরপেক্ষতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে প্রশাসনের কেউ যেন কোনো রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ না করেন। আমরা চাই নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক ও নিরপেক্ষ হোক। নির্বাচন বানচালের পথে কেউ যাবেন না। গেলে ইতিহাসের কাঠগড়ায় আপনাদের দাঁড়াতে হবে।'
নির্বাচনকে সামনে রেখে ধর্মীয় ইস্যু ব্যবহার নিয়েও কড়া সমালোচনা করে হেলাল বলেন, “কিছু রাজনৈতিক দল ইসলাম ধর্মকে রাজনীতির ট্রাম্প কার্ডে পরিণত করেছে। আমাদের এলাকায় এক ভাবিকে চারজন মহিলা গিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল—‘আগামী নির্বাচনে কাকে ভোট দেবেন?’ ভাবি বললেন, ‘ধানের শীষে ভোট দেব।’ সঙ্গে সঙ্গে ওই চারজন জামায়াত সমর্থিত মহিলা বলে উঠল, ‘ধানের শীষে ভোট দিলে আপনি দোজখে যাবেন।’ ভাবি জিজ্ঞেস করলেন, ‘তাহলে কোন মার্কায় ভোট দিলে বেহেশতে যাওয়া যাবে?’ তারা উত্তর দিল, ‘জামায়াতের দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিলে বেহেশত পাবেন।’ এভাবেই জামায়াতে ইসলামী ইসলাম ধর্মকে ব্যবহার করে মানুষকে ভুল পথে চালিত করছে।”
আজিজুল বারী হেলাল আরও বলেন, ‘এমন মিথ্যাচার ইসলাম কখনো সমর্থন করে না। জামায়াত ইসলাম ধর্মকে রাজনৈতিক পুঁজিতে পরিণত করেছে, যা ধর্ম ও গণতন্ত্র—দুইয়েরই অপমান।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জামায়াত সমর্থিতদের অসহিষ্ণু আচরণের দিকে ইঙ্গিত করে আজিজুল বারী হেলাল বলেন, “টেলিভিশনের টকশোতে যখন আমরা কথা বলি, তখন জামায়াতের একটি বাহিনী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অকথ্য ভাষায় আমাদের গালাগালি করে। একবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বোন শুধু বলেছিলেন, ‘এক শিবির নেতা আগে ছাত্রলীগ করতেন।’ এই সত্য কথায় ওরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে গণধর্ষণের হুমকি দিয়েছিল। এটিই প্রমাণ করে, এরা ইসলাম নয়, বরং সন্ত্রাসের রাজনীতি করে।”
বিএনপির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরে আজিজুল বারী হেলাল আরও বলেন, “আমরা যদি আগামী নির্বাচনে ধানের শীষ মার্কায় জয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে পারি, তাহলে এক বছরের মধ্যে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করব। কয়রায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হবে, যাতে উপকূলের মানুষ নিরাপদ থাকে। আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি—গরিব মানুষের জন্য ফ্যামিলি কার্ড এবং কৃষকদের জন্য কৃষি কার্ড চালু করা হবে, যার মাধ্যমে তারা ন্যায্য দামে পণ্য ও সার কিনতে পারবেন।”
সমাবেশে খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু বলেন, জামায়াত ধর্মকে পুঁজি করে মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে, কিন্তু এখন তাদের মিথ্যাচার উন্মোচিত। তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরও ভোট চায়, তবে তাদের গঠনতন্ত্রে ইসলামী মূল্যবোধের কথা উল্লেখ থাকায় হিন্দুদের মর্যাদা রক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিএনপির গঠনতন্ত্রে সকল ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাস ও স্বাধীনভাবে ধর্ম পালনের কথা বলা হয়েছে।
খুলনা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোমরেজুল ইসলাম বলেন, খুলনা-৬ আসনে ১৯৭৯ সালে শেখ রাজ্জাক আলীর বিজয়ের পর জিয়াউর রহমানের উদ্যোগে কয়রা থানা প্রতিষ্ঠা ও রাস্তাঘাট–বিদ্যুতের উন্নয়ন শুরু হয়। বিএনপি আমলেই সেতু ও বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়। কয়রায় জামায়াতের কোনো উন্নয়ন নেই। বিএনপি ক্ষমতায় এলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, তিন ফসলি জমি পুনরুদ্ধার, কয়রার ২০ হাজার মানুষের বিদেশে কর্মসংস্থান ও সকল ধর্মের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
কয়রা উপজেলা যুবদলের সভাপতি মো. শরিফুল ইসলামের সভাপতিত্বে সদস্য সচিব মো. মোহতাসিম বিল্লাহ ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ইছানুর রহমানের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সদস্য এম এ হাসান, মনিরুজ্জামান বেল্টু, আবু সাঈদ বিশ্বাস, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক ইবাদুল হক রুবায়েদ ও সদস্যসচিব নাদিমুজ্জামান প্রমুখ।