‘৩১ অক্টোবরের মধ্যেই সরকারের কাছে সুস্পষ্ট ও পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ দেওয়া হবে’

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, দ্রুততার সঙ্গে জাতীয় জুলাই সনদের বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যেই সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট সুস্পষ্ট ও পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ জমা দেবে কমিশন। বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি বিষয়ক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি একথা বলেন।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার ও ড. মো. আইয়ুব মিয়া।
ড. আলী রীয়াজ বলেন, ‘আপনার ইতোমধ্যেই জানেন যে কমিশনের মেয়াদ আগামী ৩১ তারিখ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। কমিশনের এই মেয়াদের মধ্যেই কমিশনের পক্ষ থেকে সনদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট, সুনির্দিষ্ট ও পূর্ণাঙ্গ একটি সুপারিশ আমরা সরকারের কাছে উপস্থাপন করবো।’
আলী রীয়াজ আরও বলেন, ‘কমিশন মনে করে এটা আমাদের দায়িত্ব যে, যেই জাতীয় সনদ প্রণীত হয়েছে সেই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যেন কোনো রকম ব্যত্যয় না ঘটে। তাই কমিশনের এই মেয়াদের মধ্যে আমরা সরকারের কাছে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনটা জমা দেবো যাতে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ার তথ্য থাকবে।’
শুক্রবার জালাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ‘জাতীয় সনদ কেবল একবছরের প্রচেষ্টার ফসল নয়। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের মানুষের যে গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষাও। রাষ্ট্র সংস্কারের প্রচেষ্টায় বারবার হোঁচট খেয়েছে, কিন্তু তারপরও সবাই মিলে নাগরিকরা যে লড়াই সংগ্রাম করেছেন, যে স্বপ্ন দেখেছেন, যে প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করেছেন, যেটাকে আমরা আংশিকভাবে হলেও ধারণ করার চেষ্টা করেছি এই জাতীয় সনদে।’
বিভিন্ন রকম মতভেদ থাকা সত্ত্বেও এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন সে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা শুক্রবার উপস্থিত থাকবেন ও সনদ ও সাক্ষর করার মধ্য দিয়ে আরেকটি পর্যায় অগ্রসর হতে পারবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।
এনসিপি এই সনদের আইনি ভিত্তি নেই জানিয়ে এ সনদ এ স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করার বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে আলী রীয়াজ বলেন, এনসিপি যে বক্তব্য দিয়েছে সেটা আমরা অত্যন্ত গভীরভাবে পর্যালোচনা করেছি। এনসিপি থেকে যারা থেকেছেন তারা জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের অগ্রগামী সৈনিক ছিলেন। তাদের উদ্যোগ, নেতৃত্ব, তাদের প্রচেষ্টার জন্য জুলাই অভ্যুত্থান বেগবান হয়েছে।
ড. আলী রীয়াজ আরও বলেন, আমরা মনে করি জুলাই জাতীয় সমাজের আইনি ভিত্তি দেয়া অবশ্যই করণীয় ও প্রয়োজনীয় এবং এটা দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কমিশনের মেয়াদকালেই অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে আমরা সুস্পষ্ট, সুনির্দিষ্ট ও পূর্ণাঙ্গভাবে একটি সুপারিশ সরকারকে দেবো যেন এর বাস্তবায়নে প্রক্রিয়াটা এ সময়ের মধ্যে শুরু করা যায়।
ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, আমরা আশা করছি এনসিপিসহ সব রাজনৈতিক দল স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দেবে এবং সনদ বাস্তবায়নে একটা বড় ভূমিকা পালন করবে। কেননা সনদ ও তার পটভূমি তৈরিতে তারা সবারই বিশাল ভূমিকা পালন করেছেন।
স্বাক্ষর উৎসবটি করার পর্যায়ে পোঁছাতে অনেক বড় মূল্য দিতে হয়েছে জানিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, একটা রাজনীতিক সমঝোতার দলিলকে আইনি ভিত্তি দেওয়া যাবে না- তেমন কোনো কথা নেই। ভিন্নমত আছে, থাকবে।
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে আলী রীয়াজ বলেন, এই প্রক্রিয়ায় আমরা যখন উপনীত হয়েছি, পুরো প্রক্রিয়াটা খুব স্বচ্ছভাবে এগিয়েছে। লাইভ টেলিভিশন এ দেখে সবাই জানেন যে কে কোন অবস্থানে আছেন এবং এটি সন্নিবেশিত করেই সনদটা হচ্ছে। তাহলে বলা যেতে পারে প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার সেদিনই করা হয়েছে। এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
আলী রীয়াজ বলেন, আমরা এমন একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়েছি যেখানে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল তাদের মতামত ব্যক্ত করেছেন একমত হয়েছেন ক্ষেত্র বিশেষে দ্বিমত হয়েছেন, সেটা হয়েছে সবার সামনে। প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল রাষ্ট্র সংস্কার ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ। সেজন্য কমিশন আশা করে যে এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে এবং এটি কেবল একটি সনদ স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে শেষ হবে না।
উল্লেখ্য, ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকেল চারটায় রাজধানীর জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।