লালনের আখড়াবাড়িতে লাখো মানুষের ভিড়, তিলধারণের ঠাঁই নেই

আধ্যাত্মিক সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ১৩৫তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ায় অবস্থিত বিখ্যাত আখড়াবাড়িতে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা ও মেলা। শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) রাতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রবেশপথ, আখড়াবাড়ি, মাজার প্রাঙ্গণ এবং মেলার মাঠ—সবখানেই বাউল ভক্ত, অনুরাগী, ফকির, সাধুসহ দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত; কোথাও যেন তিলধারণের ঠাঁই নেই।
তিরোধান দিবস উপলক্ষে আখড়াবাড়ি প্রাঙ্গণ এখন লাখো লালনভক্ত ও অনুসারীদের ভিড়ে মুখরিত। চলেছে গুরু-শিষ্যের ভাব বিনিময় এবং অধিবাস। বয়োজ্যেষ্ঠ আব্দুর রাজ্জাক শাহ জানান, শনিবার সকালে বাল্যসেবা ও দুপুরে পূর্ণ সভার মধ্য দিয়ে এই সাধুসঙ্গ শেষ হবে। তিনি বলেন, প্রথম দিনেই লাখো মানুষের পদচারণায় মুখরিত আখড়াবাড়ি। পা ফেলানোর জায়গা নেই। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে বিভিন্ন এলাকা থেকে ভক্তবৃন্দরা ছুটে আসছেন। লালন শাহর মাজারের সহকারী খাদেম রিপন শাহ বলেন, মানবতা ও অসাম্প্রদায়িকতার যে বাণী লালন সাঁইজি প্রচার করে গেছেন, তা আজও ফাল্গুন ধারার মতো প্রবহমান। তিরোধান দিবস ঘিরে কয়েক লাখ মানুষ ইতোমধ্যে ছুটে এসেছেন আখড়াবাড়িতে।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় আয়োজিত এ উৎসব শুক্রবার বিকেলে আখড়াবাড়ির বাইরে কালী নদীর পাড়ঘেঁষা মূল মঞ্চে উদ্বোধন করা হয়। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ভিডিও বার্তার মাধ্যমে উৎসবের উদ্বোধন করেন। এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
উদ্বোধনী অনু্ষ্ঠানে লালন বক্তব্য দেন লেখক ও লালন বিশেষজ্ঞ ফরহাদ মজহার। জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমির এডহক কমিটির সভাপতি আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীনের সভাপতিত্বে অনু্ষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমান।
আখড়াবাড়ি প্রাঙ্গণের মূল মঞ্চে এদিন বাউল ও লালন একাডেমির শিল্পীরা মধ্যরাত পর্যন্ত লালনের গান পরিবেশন করেন। এছাড়া কালী নদীতীরে বিশাল মাঠে মেলা বসেছে, যেখানে গান শোনার ফাঁকে মানুষকে কেনাকাটা করতে দেখা যায়।
জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমির সভাপতি আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দেশ ও দেশের বাইরে থেকে লালন ভক্ত অনুরাগীরা আখড়াবাড়ি ও আশপাশের এলাকায় ভিড় জমিয়েছেন। তাদের নিরাপত্তায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। সবার সহযোগিতায় সুন্দরভাবে তিনদিনের আয়োজন শেষ করার প্রত্যাশা রয়েছে।