রংপুর অঞ্চলে ১১ লাখ টন সবজি উৎপাদনের টার্গেট
চলতি রবি মৌসুমে রংপুর কৃষি অঞ্চলে শীতকালীন সবজি চাষে বড় ধরনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই)। অধিদপ্তর এই অঞ্চলে ৪২ হাজার ১৩০ হেক্টর জমিতে মোট ১১ লাখ ১৯ হাজার ৮৯৩ টন শীতকালীন সবজি উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
ডিএই-এর তথ্য অনুযায়ী, গত বছর রবি মৌসুমে রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও নীলফামারী- এই পাঁচটি জেলায় মোট ৩৯ হাজার ৭৪২ হেক্টর জমিতে কৃষকরা ১০ লাখ ৩৯ হাজার ৬৯৯ টন শীতকালীন সবজি উৎপাদন করেছিলেন।
চলতি মৌসুমে রংপুর বিভাগে শীতকালীন সবজি চাষের সাফল্য নিশ্চিত করতে সরকার ইতোমধ্যে বিশেষ প্রণোদনা, উচ্চফলনশীল বীজ ও সার বিতরণসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো কৃষকদের মানসম্মত বীজ, কৃষি উপকরণ ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করবে। পাশাপাশি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকসহ বাণিজ্যিক ব্যাংক ও কয়েকটি এনজিও সহজ শর্তে কৃষিঋণ বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে, যাতে শীতকালীন সবজি চাষ কর্মসূচি সফল হয়।
রংপুরের রাণীপুকুর গ্রামের কৃষক নূর আলম, মোহাম্মদ আলী, আজিজুর রহমান, নারায়ণ চন্দ্র ও আফজাল হোসেন জানান, তারা আমন ধানের স্বল্পমেয়াদি জাত কেটে আগাম শীতকালীন সবজির বীজ বপন করেছেন।
কুড়িগ্রামের সাতভিটা গ্রামের আব্দুর রহমান ও সাইফুল ইসলাম এবং নয়াগ্রামের মাহবুবুর রহমান ও আবু বকরও জানান, তারা বন্যার পানি নামার পর আগাম জাতের শীতকালীন সবজি চাষ করেছেন। কৃষকরা আশা প্রকাশ করেন, নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে তারা আগাম মৌসুমি সবজি তুলতে পারবেন এবং এতে অধিক মুনাফা অর্জন করবেন।
রংপুর অঞ্চলের ডিএই-এর অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভালো উৎপাদন ও ন্যায্য মূল্য পাওয়ায় কৃষকরা শীতকালীন সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তিনি আরও বলেন, আমন ধান কাটার পর কৃষকরা ইতোমধ্যে ৫ হাজার ৫৬৫ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির বীজ বপন সম্পন্ন করেছেন এবং আগামী মাস থেকেই আগাম জাতের সবজি তোলার কাজ শুরু হবে। এতে কৃষকরা বেশি লাভবান হবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে অঞ্চলে ঐতিহ্যবাহী আমন ধান কাটার সময় পুরোদমে শীতকালীন সবজি চাষ শুরু হবে।
দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের পিএইচডি ফেলো ড. মো. মামুনুর রশিদ জানান, চলতি মৌসুমে কৃষকরা আগের তুলনায় আরও বেশি জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের কৃষকরা আগাম জাতের শীতকালীন সবজি চাষ শুরু করেছেন। পরিবর্তিত জলবায়ু পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে তৈরি হওয়া নতুন আবাদ ব্যবস্থায় এসব আগাম জাতের সবজি ইতোমধ্যে স্থানীয় বাজারে আসতে শুরু করেছে।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)