‘খতিব মোহেববুল্লাহ অপহণ নয়, স্বেচ্ছায় গিয়েছিলেন পঞ্চগড়’
গাজীপুরের টঙ্গী টিঅ্যান্ডটি বাজার জামে মসজিদের খতিব মুফতি মোহাম্মদ মোহেববুল্লাহ মিয়াজিকে অপহরণের ঘটনায় করা মামলার তদন্তে নাটকীয় মোড় এসেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে গাজীপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ৪-এর বিচারক জুবায়ের রশিদের আদালতে তাঁকে হাজির করা হলে তিনি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। জবানবন্দি তিনি আদালতে বলেন, শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতার কারণেই তিনি স্বেচ্ছায় পঞ্চগড়ে গিয়েছিলেন।
আজ মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
আরও পড়ুন : রক্তাক্ত ২৮ অক্টোবর আজ, ২০০৬ সালের এদিনে কী ঘটেছিল?
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মুফতি মোহেববুল্লাহ বলেছেন, তিনি কোনো ব্যক্তির দ্বারা অপহৃত হননি, তার কিডনি, লিভার, হৃদরোগ এবং মাথায় নানাবিধ সমস্যার পাশাপাশি মানসিক কিছু জটিলতা এবং ব্যক্তিগত কারণে নিজেই গাজীপুর ছেড়ে গিয়েছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক অসুস্থতা ও মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন, যা তাকে এক ধরনের অবচেতন সিদ্ধান্ত নিতে প্ররোচিত করে। বিচারক তার বক্তব্য শুনে মামলাটি তথ্যগত ভুল উল্লেখ করে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার নির্দেশ দেন এবং পরে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ তাঁকে তাঁর পরিবারের জিম্মায় বুঝিয়ে দেয়।
এর আগে গত ২২ অক্টোবর সকাল ৭টার দিকে মুফতি মোহেববুল্লাহ মর্নিং ওয়াকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। তার পরিবার অভিযোগ করে, একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে অজ্ঞাতপরিচয় চার–পাঁচজন ব্যক্তি তাঁকে অপহরণ করেছে। পরে ২৪ অক্টোবর টঙ্গী পূর্ব থানায় অপহরণের মামলা করা হয়।
আরও পড়ুন : আজ যে দামে বিক্রি হচ্ছে স্বর্ণ
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, পুলিশের তদন্তে সিসিটিভি ক্যামেরা যাচাই করে ঘটনার দিন সকালে এলাকায় কোনো অ্যাম্বুলেন্স চলাচলের প্রমাণ মেলেনি। ফুটেজে দেখা যায়, মুফতি মোহেববুল্লাহ নিজেই মাজুখান, মীরের বাজার, ভোগরা বাইপাস হয়ে রাজধানীর গাবতলী পর্যন্ত যান। সেখানে তিনি পঞ্চগড়গামী শ্যামলী পরিবহণের বাসের টিকিট কেটে দুপুর ২টার দিকে রওনা দেন। যাত্রাপথে বগুড়ার পেন্টাগন হোটেলে নামাজ আদায় করে তিনি পুনরায় বাসে ওঠেন এবং রাতে পঞ্চগড়ে পৌঁছান। পরে অসুস্থ অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মোহাম্মদ তাহেরুল হক চৌহান বলেন—একজন আলেমকে ঘিরে সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছিল, কিন্তু তদন্তের মাধ্যমে সত্য এখন স্পষ্ট। এটি অপহরণ নয়, ব্যক্তিগত ও মানসিক কারণে তাঁর স্বেচ্ছায় গমন ছিল। আমরা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব ও পেশাদারত্বের সঙ্গে তদন্ত করেছি।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ জনগণের আস্থা ও সহযোগিতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। আমরা অনুরোধ করছি, কেউ যেন গুজব ছড়িয়ে সমাজে বিভ্রান্তি না তৈরি করেন। আইনগত প্রক্রিয়া অনুযায়ী সবকিছু সম্পন্ন হয়েছে।
আরও পড়ুন : নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোটে এগিয়ে মামদানি
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন উপপুলিশ কমিশনার (সদর অর্থ) মো. জাহিদ হোসন ভূঁইয়া, উপপুলিশ কমিশনার (অপরাধ দক্ষিণ) মহিউদ্দিন আহমেদ এবং উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া ফোকাল পয়েন্ট) এস এম শফিকুল ইসলাম।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কমিশনার জাহিদুল হাসান বলেন, খতিককে নিয়ে কোনো মহল যেন চক্রান্ত করতে না পারে সেজন্য গত রাতেই তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল। ১৬৪ ধরায় আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার পরে তাকে তার পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। মুফতি মোহেববুল্লাহ বর্তমানে পরিবারের জিম্মায় আছেন এবং তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ হওয়ার প্রক্রিয়ায় আছেন। তদন্ত টিম মামলার প্রক্রিয়া অনুযায়ী পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

নাসির আহমেদ, গাজীপুর