গোটা সংস্কার কার্যক্রমই ভন্ডুল হয়ে যেতে পারে : নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করার দাবিতে অনড় অবস্থান নিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটি আজ বুধবার (২৯ অক্টোবর) এক সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, ঐকমত্য কমিশন কর্তৃক সুপারিশকৃত ‘প্রস্তাব-১’ কে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে গোটা সংস্কার কার্যক্রমই ভন্ডুল হয়ে যেতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে আজ বুধবার (২৯ অক্টোবর) এনসিপির মুখ্য সংগঠক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এসব কথা বলেন।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী তার লিখিত বক্তব্যে আরও বলেন, জুলাই সনদ শুধু রাজনৈতিক সমঝোতার ফাঁকা বুলি নয়, এর অবশ্যই আইনি ভিত্তি থাকতে হবে। এই আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করার দাবিতে এনসিপি শুরু থেকেই সনদে স্বাক্ষর করা থেকে বিরত থেকেছে। এনসিপির এই আপসহীন অবস্থানের ধারাবাহিকতায়ই গতকাল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সরকারের কাছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা সুপারিশ করেছে। এনসিপি এই প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানায়।
এনসিপি নেতা বলেন, দুই ধরনের সংস্কারের জন্য স্বতন্ত্র বাস্তবায়ন রূপরেখা কমিশন পেশ করেছে। সংবিধান সম্পর্কিত নয় এমন সংস্কার সাধনের লক্ষ্যে প্রজ্ঞাপন ও অধ্যাদেশের খসড়া কমিশন সরকারের কাছে সুপারিশ করেছে। আমরা মনে করি, কালবিলম্ব না করে অতি সত্ত্বর এই সংস্কার প্রস্তাবসমূহ বাস্তবায়নের উদ্যোগ অন্তর্বর্তী সরকারকে নিতে হবে। তবে অন্তত ৪৮টি সংস্কার প্রস্তাব সংবিধান সম্পর্কিত। এই সংস্কারসমূহের বাস্তবায়ন রূপরেখা নিয়েই এতদিন আলাপ-আলোচনা চলছিল। সংবিধান সম্পর্কিত এ সকল সংস্কার বাস্তবায়নের নিমিত্তে কমিশন দুটি স্বতন্ত্র খসড়া সুপারিশ দিয়েছে।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, এনসিপি মনে করে, প্রথম খসড়া তথা প্রস্তাব-১ বাস্তবায়নের পথে সরকারকে যেতে হবে। কারণ এখানে ৮(ঙ) ধারায় বলা হয়েছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংবিধান সংস্কার পরিষদ কার্য সম্পন্ন করতে না পারলে সংবিধান সংস্কার বিল পরিষদ কর্তৃক গৃহীত হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে এবং সংবিধান সংস্কার আইনরূপে কার্যকর হবে। সনদের ওপর গণভোটের ম্যান্ডেট বাস্তবায়নে বাধ্যবাধকতা তৈরির লক্ষ্যে এটি একটি অত্যাবশ্যকীয় সুপারিশ, যার নজির বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে।
এনসিপি নেতা আরও বলেন, কমিশন প্রস্তাবিত প্রস্তাব-২ এ বিষয়টি নিয়ে কোনো স্পষ্ট বক্তব্য নেই। যার দরুন গোটা সংস্কার কার্যক্রমই ভন্ডুল হয়ে যেতে পারে৷ অর্থাৎ, প্রস্তাব-২ নয়; সরকারকে কমিশন প্রস্তাবিত প্রস্তাব-১ কে বাস্তবায়ন রূপরেখা হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি প্রস্তাব-১ এর বেশ কিছু জায়গায় ভাষিক অস্পষ্টতা বিদ্যমান যা নিরসন করতে হবে। যেমন ৮ (ক) ধারায় বর্ণিত আগামী নির্বাচিত সভা সংবিধান সংস্কার বিষয়ে গাঠনিক ক্ষমতা প্রয়োগ করিতে পারিবে নয়, ‘করিবে’ — এভাবে উল্লেখ থাকা প্রয়োজন। ৮ (ঘ) ধারায় সংবিধান সংস্কার বিলের বিষয়াদি ‘বিবেচনা করিবে’ এক ধরনের অস্পষ্টতা তৈরি করে, যা দূর করা প্রয়োজন।
সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এনসিপি সরকারের প্রতি মোটাদাগে তিনটি দাবি জানিয়েছে-
১. ঐকমত্য কমিশন কর্তৃক সুপারিশকৃত জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের প্রথম খসড়াটি (প্রস্তাব-১) গ্রহণ করার মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করতে হবে। ২. গণভোটে প্রদত্ত ‘সংবিধান সংস্কার বিল’ এর খসড়া দ্রুত প্রণয়ন এবং জনগণের নিকট উন্মুক্তকরণের উদ্যোগ নিতে হবে। ৩. জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তিসম্পন্ন আদেশের খসড়া সরকার গ্রহণ করলে সনদ স্বাক্ষরের ব্যাপারে অগ্রগতি তৈরি হবে বলে এনসিপি মনে করে।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক