দেশ বিরাট সংকটে, বিএনপিকেই ভূমিকা নিতে হবে : মান্না
 
‘দেশ এক বিরাট সংকটে, এখন বিএনপিকেই ভূমিকা নিতে হবে’ বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। আজ শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি এ কথা বলেন।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমি বাস্তবতায় মনে করি, দেশ এক বিরাট সংকটের মধ্যে পড়েছে। এখন নির্ভর করবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভাইয়েরা কী করেন? এই সংকট থেকে যদি মনে করেন, এই সরকার জাতিকে উদ্ধার করবে। এই সরকারের সেই ক্ষমতাই নেই।’
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, ‘আমি বলি, আজ সমস্ত দায়িত্ব বিএনপির ওপরে। আমি বিএনপি করি না, বিএনপির সব প্রস্তাব মানিও না, বিএনপি সবচাইতে ভালো দল আমি তা-ও বলি না। এর চাইতেও ভালো হতে পারে। তবে বর্তমান সময়ের জন্য এখন রিলে রেসের কাঠি বিএনপির হাতে। তাদের সেই ভূমিকা পালন করতে পারতে হবে।’
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘অনেকে জিজ্ঞাসা করেন আমাকে, ওরা (জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন) এরকম কাজ করল কেন? আমি মনে মনে বলি, ইট ইজ টু স্টুপিডিটি, বোকামি, নিবুদ্ধিতা, মূর্খতা। যদি বুঝতেন তাহলে এটা বদলাবার আগে বিএনপির সঙ্গে কথা বলতেন, আমাদের সঙ্গে কথা বলতেন। কারও সঙ্গে তো কথা বলেননি। নিজের মতো করতে গেছেন। এটা এখন হজম করতে পারবেন? যদি তারা মনে করেন, একই দিনে গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন করলেই বিএনপি খুশি হয়ে যাবে, তা আমার মনে হয় না। সিদ্ধান্ত নিতে হবে প্রধানত বিএনপির।’
মাহমুদুর রহমান মান্না আরও বলেন, ‘আমরা চেয়েছি, ডিসিশনগুলো, দ্বিমতগুলো জনগণের কাছে যাক। সরকার যে থুতু ফেলেছে সেই থুতু চাটবে আবার। আমি জানি না, কিন্তু তাদের তো চাটতে হবে। না হলে উনারা এভাবেই যদি করতে চান, বিএনপি যদি না মানে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভাই তো ভালো মানুষ, ভদ্রলোক। সাংবাদিকরা জিজ্ঞাসা করেছে আন্দোলন করবেন? উনি বলেছেন, না। জামায়াতের মতো আন্দোলন করব না।’
আরও পড়ুন : জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের কোনো সুযোগ নেই: মির্জা ফখরুল
নাগরিক ঐক্যের এই নেতা বলেন, ‘জামায়াত তো আবার আন্দোলন আন্দোলন খেলে। কর্মসূচির নামে সভা করে বড় প্রোগ্রাম দেয় না। তারা জানে যে, এই প্রোগ্রাম মানুষ খাবে না। পিআর লোক বুঝে? বুঝে না। আর সেগুলো নিয়ে কথা বললে বুঝে? বুঝে না। কিন্তু বিএনপি যেটা বলছে, সেই জায়গায় যদি দাঁড়ান তাহলে কী পরিস্থিতি হবে?’
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমি আবারও মনে করি, এই যে সংস্কার সংস্কার খেলা ড. মুহাম্মদ ইউনূস করলেন, এটার শেষ পরিণতি তিনি দিতে পারবেন না। এটা দিতে হবে এই মঞ্চে যারা আছে, তারা মিলে যথাযোগ্য পরিণতিতে গিয়ে একটা সফল নির্বাচনের আমাদের কাছে কোনো বিকল্প নেই।’
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, ‘যদি নিজেরা ঝগড়া করেন, নিজেদের মধ্যে মারামারি হয় তাহলে বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম বলে কবে কে হাজির হয়ে যাবে তা আপনারা জানেন না। দেশ এখন এমন একটা সংকটের মধ্যে তখন আমরা নিজেরা যত বেশি ঝামেলা করব, তত অন্ধকারের মধ্যে যেই শক্তি লুকিয়ে আছে তারা এসে আপনাদের অধিকার হরণ করবার চেষ্টা করে।’
মাহমুদুর রহমান মান্না আরও বলেন, ‘জামায়াতের বন্ধুদের বলি, তাদের সঙ্গে যারা জোট বেঁধেছে তাদেরও বলি, সেই পরিস্থিতি যদি হয় তাহলে ৫৪ বছর পরে আপনারা শামুকের খোলস ভেঙে বাইরে বেরুতে পেরেছেন। আরেকবার ওই খোলসের মধ্যে ঢুকতে হবে। বিএনপির অতবড় লোকসান হবে না, আমাদের অতবড় লোকসান হবে না। কিন্তু লোকসান আপনাদের বেশি হবে। এই কারণে সমস্ত রাজনৈতিক শক্তিগুলোর কাছে আমার আবেদন। আজ আপনাদেরই শুভবুদ্ধির পরিচয় দেওয়া দরকার। এই সংকট থেকে বেরিয়ে এসে যাতে আমরা যথাযথভাবে নির্বাচন করতে পারি, সেটা আমাদের করতে হবে।’
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মান্না বলেন, ‘আমাদের কাছে বর্তমান সংকট থেকে বেরিয়ে আসার জন্য নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। বিএনপি যখন গত বছর ৫ আগস্টে পরপরই বলেছি, নির্বাচন দিয়ে দেন তাড়াতাড়ি করে। তখন লোকে বিএনপিকে ভুল বুঝেছিল। তখন বলেছি, এখনও রক্তের দাগ শুকায়নি এরা এখনই নির্বাচন চায়।’
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘অথচ আজ এক বছর পরে সমস্ত মানুষ মনে করে নির্বাচন দরকার। এখন বিশ্বের যত শক্তি তারা মনে করে নির্বাচন দরকার। এই নির্বাচনের জন্য ওদের ওপরে নির্ভর না করে চলুন আরও বৃহত্তর ঐক্য করি।’
আরও পড়ুন : গণভোটের বিষয়ে যে সিদ্ধান্তই হোক, নির্বাচন ১৫ ফেব্রুয়ারির আগে : শফিকুল আলম
জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির ৫৩তম প্রতিষ্ঠবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। দলটির প্রতিষ্ঠাতা আ স ম আবদুর রব অসুস্থ থাকার জন্য অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আলোচনা সভায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, ভাসানী জনশক্তি পার্টির শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, এবি পার্টির সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনসহ অন্যান্যরা বক্তব্য দেন।

 
                   নিজস্ব প্রতিবেদক
                                                  নিজস্ব প্রতিবেদক
               
 
 
 
