৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাইয়ে পাঁচ জরিপের তথ্য তারেক রহমানের হাতে
আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের তোড়জোড় চলছে। অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন আয়োজনের সকল প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। যদিও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র বিতর্ক চলছে। তবে একইসঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলো সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বেশ জোরেশোরেই।
দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপিও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে ৫টি জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সরাসরি তত্ত্বাবধানে এ জরিপগুলো সম্পন্ন করা হয়। অতি গোপনীয়তার সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে জরিপগুলো করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
আরও পড়ুন : সরকারের কাছে জমা দেওয়া ‘জুলাই সনদে’ যে কারণে আপত্তি বিএনপির
জানা গেছে, প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে দলের সাংগঠনিকভাবে প্রক্রিয়া মেনে জরিপ করা হয়। একটি জরিপে দলের কেন্দ্র থেকে প্রতিটি আসনে দায়িত্বশীল নেতাদের মাধ্যমে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা চাওয়া হয়। সেই মোতাবেক দায়িত্বশীল নেতারা প্রতিটি আসনে একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম কেন্দ্রে পাঠান।
আরেকটি জরিপের মাধ্যমে কোন প্রার্থীর কেমন জনসমর্থন আছে সেই তথ্য যাচাই করা হয়।
এছাড়া দেশের অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর ভোটের পরিসংখ্যান ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। প্রতিটি জরিপ খুবই গোপনীয়তার সঙ্গে পরিচালনা করা হয়। কারা বা কোন কোন সংস্থা এ জরিপ করেছেন তা প্রকাশ করা হয়নি।
তথ্যমতে, ৫টি জরিপের মধ্যে দুটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে, দুটি দলের সাংগঠনিক টিমের মাধ্যমে এবং একটি বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিস থেকে করা হয়েছে। সব জরিপের তথ্য একসঙ্গে করে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে ‘সিলগালা’ করে রাখা হয়েছে। জরিপের তথ্য-উপাত্তসহ ৩০০ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীর পূর্ণাঙ্গ তালিকা এখন রয়েছে তারেক রহমানের হাতে। শিগগিরই দলীয় এসব প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
তারেক রহমান বলেছেন, শিগগিরই পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন আসনে বিএনপির মনোনীত দলীয় প্রার্থীদের নাম দলের পক্ষ থেকে আমরা জানিয়ে দেব। দল যাকে যে আসনে নমিনেশন দেবে বা দেয় অনুগ্রহপূর্বক তাকে বিজয়ী করে আনার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষ কাজ করবেন।
আরও পড়ুন : ড. ইউনূসের ওপরই ‘আস্থা’ রাখতে চায় বিএনপি ও মিত্ররা
বিএনপির কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা এনটিভি অনলাইনকে জানান, দলের কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডের একাধিক বৈঠক শেষে বিভাগ ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের পরামর্শ, মাঠপর্যায়ের জরিপ এবং স্থানীয় কমিটির মতামতের ভিত্তিতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। যাদেরকে প্রাথমিকভাবে তালিকায় রাখা হয়েছে বা ফোন দেওয়া হয়েছে, তাদের সবাইকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ লিখা বা মিষ্টি বিতরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে।
বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা বলেন, তারেক রহমান প্রার্থীদের যোগ্যতা, ত্যাগ, জনভিত্তি ও গ্রহণযোগ্যতা— সব দিক বিবেচনা করে চূড়ান্ত অনুমোদন দেবেন। জনগণের প্রত্যাশা ও পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হবে এবারের তালিকায়। তিনি ধাপে ধাপে প্রার্থীদের ফোন করে নিজ নিজ এলাকায় সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদারের নির্দেশনা দিয়েছেন।
এদিকে নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বিএনপি ইতিমধ্যে ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ, নির্বাচন কেন্দ্রভিত্তিক টিম গঠন এবং ইশতেহার প্রস্তুতির কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে।
জানতে চাইলে কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ও ঢাকা উত্তর মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক শরিফ উদ্দিন জুয়েল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে। দীর্ঘ ১৭ বছর বাংলাদেশের জনগণ ফ্যাসিস্ট হাসিনার জন্য ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। এবার যেন প্রতিটি মানুষ তার মূল্যবান ভোটটি ধানের শীষে দিতে পারে সেই লক্ষ্যে বিএনপি কাজ করছে।
তিনি বলেন, জাতির স্বার্থে, দেশের স্বার্থের প্রয়োজনে আমরা সব আত্মত্যাগে প্রস্তুত। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। কারণ এখনও বিএনপির বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র চলছে। দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও-পাগলা) আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী আক্তারুজ্জামান বাচ্চু এনটিভি অনলাইনকে বলেন, আমি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা মেনে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমাদের বলেছেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে বলছেন।
আরও পড়ুন : চারপাশে গুপ্ত স্বৈরাচার ওত পেতে আছে : তারেক রহমান
তিনি বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ত্যাগের কথা চিন্তা করে, উনার দিকে তাকিয়ে, দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে, দলের নেতাকর্মীদের অতীত নির্যাতন-অত্যাচারের কথা মনে করে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে বলেছেন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি বারবার বলছেন, দেশে বিরোধী ষড়যন্ত্র চলছে। আগামী নির্বাচন কঠিন হবে। এমন কিছু করবেন না যাতে দলের ভারমূর্তি নষ্ট হয়। অন্যরা যাতে দলের বিরুদ্ধে কিছু বলতে সুযোগ না পান— এই বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
দলীয় মনোনয়ন প্রশ্নে তিনি জানান, আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন, দলের একাধিক যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন কিন্তু প্রতিটি আসনে একজনই মনোনয়ন পাবেন। যারা পাবেন না তাদের দল থেকে মূল্যায়ন করা হবে। দল থেকে যাকে প্রার্থী করা হবে তার পক্ষেই সবাইকে কাজ করতে হবে। অনেক সময় দলের পছন্দ ভুলও হতে পারে। এখানে দলের সিদ্ধান্ত মেনে কাজ করতে হবে। অনেকেরই দীর্ঘ ত্যাগ আছে। কিন্তু সবাইকে তো আর প্রার্থী করার সুযোগ নেই। তাই ঐক্যবদ্ধ থেকে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করে আনতে হবে।

মাহমুদুল হাসান