নারী সহকর্মী হয়রানিতে শাস্তি, দেনদরবারে ফের বহাল
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির নারী সহকর্মীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত হন মঈন উদ্দিন আহমেদ। মঈন উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে গঠিত হয় তদন্ত কমিটি। প্রমাণিত হয় অভিযোগ। তদন্ত কমিটির সুপারিশে মঈন উদ্দিন আহমেদকে তখন প্রধান কার্যালয়ের এইচআর (মানব সম্পদ ও প্রশাসন) বিভাগ থেকে পদ অবনতি করে টাঙ্গাইল রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ফিল্ড অফিসার করা হয়।
শাস্তিপ্রাপ্ত মঈন উদ্দিন আহমেদ প্রথমে চুপচাপ থাকলেও বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিতে নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে অধ্যাপক ডা. আজিজুল ইসলাম যোগদান করলে নতুন করে শুরু করেন দেনদরবার। অবশেষে সফল হয়ে ফেরেন প্রধান কার্যালয়ের মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগে। এরপর থেকে আবারও ওই ভুক্তভোগী নারীকর্মীকে নানাভাবে হয়রানি, ভয়ভীতি দেখাতে থাকেন।
মঈনুউদ্দিন আহমেদের এ ঘটনার সূত্রপাত ১৯ মে ২০২৪ তারিখে। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির এক নারী কর্মকর্তা প্রতিষ্ঠানটির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা মইন উদ্দিনের বিরুদ্ধে চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে বলা হয়, মইন উদ্দিন তার প্রতি কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক আচরণ, অনৈতিক প্রস্তাব ও সেই প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় মানসিক নির্যাতন চালিয়েছেন।
তৎকালীন চেয়ারম্যান ওই অভিযোগ আমলে নিয়ে ২১ মে ২০২৪ তারিখে একটি পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন, যাতে তিনজন ব্যবস্থাপনা পর্ষদ সদস্য এবং দুইজন পরিচালক ছিলেন। তদন্ত শেষে ২৫ জুন কমিটি অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে একটি সুপারিশমালা জমা দেয়।
কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ২৮ জুলাই ২০২৪ তারিখে মইন উদ্দিনকে উপ-সহকারী পরিচালক পদ থেকে পদাবনতি করে ফিল্ড অফিসার হিসেবে টাঙ্গাইলে বদলি করা হয়। তিনি সেখানে যোগদানও করেন। শাস্তিজনিত বদলির পর মইন উদ্দিনের তখন রিভিউ আবেদন করার সুযোগ থাকলেও তিনি তখন তা করেননি।
এক বছর পর অধ্যাপক ডা. আজিজুল ইসলাম নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করলে মইন উদ্দিন রিভিউ করেন ও স্বপদে বহাল হন।
ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ বর্তমানে মঈন উদ্দিন যে রিভিউ আবেদন করে পুনরায় প্রধান কার্যালয়ে এসেছেন তাতে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির পিজিআই নিয়ম মানা হয়নি। এছাড়া নতুন তদন্ত কমিটি আমার ও কোনো সাক্ষীর জবানবন্দিও নেননি।
এ বিষয়ে মঈন উদ্দিন আহমেদের মোবাইলফোনে একাধিকবার কল ও অভিযোগের বিষয়ে ম্যাসেজ দিলেও তিনি তার কোনো উত্তর দেননি।
এ বিষয়ে দ্বিতীয় তদন্ত কমিটিরে দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি পরিচালক সাবিনা ইয়াসমিন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, আমরা তদন্তে অভিযোগের বিষয়ে কোনো প্রমাণ পাইনি। আর সেটাই সুপারিশ করেছি। এখানে কোন নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেনি।
ভুক্তভোগী অভিযোগকারী নারী কর্মকর্তা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, তদন্তে প্রমাণিত হওয়ার পর দণ্ড দেওয়া হয়েছিল। রেড ক্রিসেন্টের নিজস্ব নীতিমালায় নারী নির্যাতনের বিচার হওয়া মাত্রই বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার কথা। সেটি এক বছর পরে রিভিউ করে বাতিল করা হলো; এটা কোনোভাবেই নিয়মতান্ত্রিক নয়। আমি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ও হতবাক।
একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির নিজস্ব নীতিমালায় নারী নির্যাতনের অভিযোগের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স অনুসরণ করার কথা বলা আছে। একবার তদন্তে সত্যতা প্রমাণিত হলে সেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গণ্য হওয়ার কথা। রিভিউ করার কোনো বিধান নেই। ফলে এই সিদ্ধান্তকে অনেকেই ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ এবং ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতি’ বলেই আখ্যা দিচ্ছেন।

ফখরুল ইসলাম (শাহীন)