মাঠ থেকে সশস্ত্র বাহিনীর অর্ধেক সদস্য সরিয়ে নিচ্ছে সরকার
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পলায়নের পর ৮ আগস্ট প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। এ সময়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীকে মাঠে নামায় সরকার। তবে এবার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ৫০ শতাংশ সদস্যকে মাঠ থেকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্বান্ত নিয়েছে সরকার।
সেনাসদর থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৫০ শতাংশ সদস্যকে মাঠ থেকে সরিয়ে নিতে অনুমতি চেয়ে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে চিঠি দেওয়ার পর এ সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কোর কমিটির সভায় গতকাল মঙ্গলবার এ সিদ্ধান্ত হয়।
গত ৪ নভেম্বর সপ্তাহে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক উল্লেখ করে ৫০ শতাংশ সেনা সদস্য তুলে নিতে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগকে চিঠি দিয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে মাঠে কর্তব্যরত সেনাবাহিনীর ৫০ শতাংশ সদস্য তুলে নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কোর কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। বর্তমানে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক রয়েছে। পুলিশের পক্ষে চলমান পরিস্থিতি কতটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব এবং মাঠ পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মাঠে মোতায়েন থাকবে। এ পর্যায়ে তাদেরও বিশ্রামের প্রয়োজন রয়েছে, যোগ করেন এ কর্মকর্তা।
প্রধান উপদেষ্টার কাছে সেনাসদরের চিঠিতে যা বলা হয়েছে
‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’এর আওতায় নিয়োজিত সশস্ত্র বাহিনী সদস্যদের ৫০% প্রত্যাহার শিরোনামে প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারের পক্ষে লে. কর্নেল মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান ফয়সাল স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ‘নির্দেশনা মোতাবেক বর্তমানে মোতায়েনকৃত জনবলের ৫০% (পঞ্চাশ শতাংশ) প্রত্যাহার কার্যক্রম অনতিবিলম্বে সম্পাদন করার জন্য অনুরোধ করা হলো। এ প্রেক্ষিতে মোতায়েনকৃত জনবল সব জায়গা থেকে সমভাবে প্রত্যাহার না করে অপেক্ষাকৃত গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর স্থান/এলাকা/স্থাপনা সমূহের ক্ষেত্রে অগ্রগণ্যতা প্রদান করত স্থানীয় প্রশাসন ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসমূহের সাথে সমন্বয়পূর্বক প্রত্যাহার পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে, যাতে করে সার্বিকভাবে দায়িত্বপূর্ণ এলাকার বিদ্যমান স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা ও স্বাভাবিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখা সম্ভব হয়।
যা বলা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. আবদুল হাই স্বাক্ষরিত সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার বরাবরে দেওয়া চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জননিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে ইন-এইড-টু সিভিল পাওয়ারের আওতায় সারাদেশে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ইন-এইড-টু সিভিল পাওয়ারের আওতায় নিয়োজিত সশস্ত্র বাহিনী, জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশে স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা ও স্বাভাবিক জনজীবন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদক