কমলগঞ্জে উৎসবমুখর পরিবেশে শুরু হলো মণিপুরীদের মহারাসলীলা
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় ঢাক-ঢোল, খোল-করতাল ও শঙ্খধ্বনির তালে তালে আনন্দ-উৎসবের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে মণিপুরী সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় ও ঐতিহ্যবাহী উৎসব মহারাসলীলা।
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে মাধবপুরের শিববাজার উন্মুক্ত মঞ্চে রাখাল নৃত্যের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এই উৎসবের সূচনা হয়। শিশুশিল্পীদের প্রাণবন্ত রাখাল নৃত্যে মুগ্ধ হয়ে দর্শনার্থী ও ভক্তরা তাদের বাতাসা ও টাকা উপহার দেন। উৎসব উপলক্ষে মণিপুরীপাড়াগুলোতে দেখা গেছে রঙিন সাজসজ্জা ও উৎসবের আমেজ।
এ বছর মাধবপুরের জোড়া মণ্ডপে পালিত হচ্ছে ১৮৩তম রাসোৎসব (বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী)। অন্যদিকে, কমলগঞ্জের আদমপুরে মণিপুরী মৈতেই সম্প্রদায়ের আয়োজনে পালিত হচ্ছে ৪০তম রাসোৎসব। উৎসবকে ঘিরে মাধবপুর ও আদমপুরের মণ্ডপগুলো সাদা কাগজের নকশায় করা হয়েছে নিপুণ কারুকাজে সজ্জিত। চারদিকে ঝলমলে আলোকসজ্জা, আর প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ জানান, এবার মাধবপুর জোড়া মণ্ডপে ১৮৩তম মহারাসলীলা উপলক্ষে আজ বুধবার (৫ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টায় শুভেচ্ছা বিনিময় ও প্রদীপ প্রজ্বালন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথিসহ বিভিন্ন অতিথি উপস্থিত ছিলেন। রাত ১১টা থেকে শুরু হবে রাসের মূল আকর্ষণ ‘মহারাসলীলা’, যা চলবে ভোর পর্যন্ত। বাঁশ ও কাগজ কেটে কারুকার্যমণ্ডিতভাবে সাজানো হয়েছে রাসের মণ্ডপ। মণ্ডপের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে বসবেন রাসধারী বা রাসের গুরু, সূত্রধারী ও বাদকরা। পাশাপাশি তিনটি মণ্ডপে তরুণীরা অংশ নেবেন এই মহারাসলীলার নৃত্যনাট্যে।
রাসলীলার ক্রম অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে সূত্রধারীর রাগালাপ ও বন্দনা, বৃন্দার কৃষ্ণ-আবাহন, কৃষ্ণ-অভিসার, রাধা ও সখীদের অভিসার, রাধা-কৃষ্ণের সাক্ষাৎ, মান-অভিমান, ভঙ্গীপারেং, রাধার কৃষ্ণ-সমর্পণ, যুগলরূপ প্রার্থনা ও আরতি প্রভৃতি পর্ব।
প্রতি বছরের মতো এবারও রাসোৎসবকে কেন্দ্র করে কমলগঞ্জে মণিপুরী সংস্কৃতির এক বিশাল মিলনমেলা তৈরি হয়েছে।

আহাদ মিয়া, মৌলভীবাজার (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ)