অক্টোবরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪৬৯
অক্টোবর মাসে সারা দেশে ৪৬৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় মোট ৪৬৯ জন নিহত এবং ১২৮০ জন আহত হয়েছেন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এই উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে। আজ বুধবার (১২ নভেম্বর) সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অক্টোবরে শুধু সড়কপথেই নয়, রেলপথ ও নৌপথেও দুর্ঘটনা ঘটেছে। তথ্যমতে, সব মিলিয়ে মোট ৫৩২টি দুর্ঘটনায় ৫২৮ জন নিহত এবং ১৩১০ জন আহত হওয়ার তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
অক্টোবর মাসে দুর্ঘটনার সবচেয়ে বড় অংশজুড়ে ছিল মোটরসাইকেল। মোট দুর্ঘটনার ৩৬.২৪ শতাংশই (১৭০টি) ছিল মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা, যেখানে ১৭৬ জন নিহত এবং ১৩৭ জন আহত হয়েছেন। সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা বিভাগভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে। ঢাকা বিভাগে ১২৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৩০ জন নিহত ও ৩৪৩ জন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে, সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ছিল ময়মনসিংহ বিভাগে, যেখানে ২০টি দুর্ঘটনায় ২৭ জন নিহত ও ৩৭ জন আহত হন।
আরও পড়ুন : ঢাকা ও আশপাশের জেলায় বিজিবি মোতায়েন
দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বিভিন্ন পেশার মানুষের পরিচয় মিলেছে। নিহতদের মধ্যে ১৩৩ জন বিভিন্ন পরিবহণের চালক, ৯৯ জন পথচারী, ৫৮ জন নারী, ৩৫ জন শিশু এবং ৩৫ জন শিক্ষার্থী ছিলেন। এছাড়াও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য (৪ জন পুলিশ, ১ জন র্যাব, ১ জন বিজিবি), শিক্ষক, আইনজীবী ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীর মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও প্রাণ হারিয়েছেন। সংগঠিত ৭৭২টি যানবাহনের পরিচয় বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২৫.৯০ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২১.২৪ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি এবং ১৬.০৬ শতাংশ বাস দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল।
দুর্ঘটনার ধরন ও স্থান বিশ্লেষণে দেখা যায়, সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৪৯.৮৯ শতাংশই ছিল মূলত ‘গাড়ি চাপা দেওয়ার’ ঘটনা। এছাড়া, ২৫.১৫ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ এবং ১৯.৬১ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনা। দুর্ঘটনার স্থানগুলোর মধ্যে ৪২.৪৩ শতাংশই ছিল জাতীয় মহাসড়কে, যা সড়ক নিরাপত্তার দুর্বলতাকে প্রকট করে তুলেছে।
আরও পড়ুন : কারাগারে মেয়ের ব্যাগ ও মামলা নিয়ে মির্জা ফখরুলের আবেগঘন পোস্ট
যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে উঠে আসা দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে—বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়া, সড়ক-মহাসড়কে মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও সিএনজি অটোরিকশার অবাধ চলাচল, সড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিংয়ের অভাব, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা, উল্টোপথে যানবাহন চালানো এবং অদক্ষ ও বিশ্রামহীন চালকের মাধ্যমে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা।
সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধের জন্য যাত্রী কল্যাণ সমিতি বেশ কিছু সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে—ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক-মহাসড়ক জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করা, জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে রাতে অবাধে চলাচলের জন্য আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা, দক্ষ চালক তৈরি এবং যানবাহনের ফিটনেস প্রদানে ডিজিটাল পদ্ধতি অনুসরণ করা। এছাড়াও, গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মহাসড়কে ফুটপাত ও সার্ভিস লেইনের ব্যবস্থা রাখা এবং মেয়াদোত্তীর্ণ গণপরিবহণ স্ক্যাপ করার উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক