এই সরকার এখন আর নিরপেক্ষ সরকার নয় : আবদুল্লাহ তাহের
অন্তর্বর্তী সরকারের তিনজন উপদেষ্টার অপসারণ দাবি করেছে জামায়াতে ইসলামীসহ আট দল। একইসঙ্গে দলগুলো আবারও আলাদাভাবে গণভোট ও নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে।
আজ শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর মগবাজারে আল ফালাহ মিলনায়তনে আন্দোলনরত আট দলের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এসব কথা বলেন।
সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য হচ্ছে, জাতির ভাগ্যাকাশে ঘোর অমানিশার অন্ধকারের অবসান হচ্ছে না। ৫৪ বছরের স্বাধীন বাংলাদেশে বারবার সরকার, শাসনের পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু শোষণের কোনো পরিবর্তন হয়নি। নেতৃত্বের ব্যর্থতাই এ জাতির সবচেয়ে বড় কলঙ্ক। আমরা আশা করেছিলাম বহু রক্ত, জীবন, ত্যাগের বিনিমিয়ে অর্জিত দ্বিতীয় স্বাধীনতা বা জুলাই বিপ্লবের পর এদেশে একটি স্থিতিশীল শাসন, একটি সুষ্ঠু রাজনীতি, মানবাধিকারের নিশ্চয়তা, গণতান্ত্রিক পরিক্রমায় একটি সুষ্ঠু ধারা এবং জনবান্ধব সুশাসন, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ—এসব কিছু অর্জনের জন্য একটি নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অবাধ, জনগণের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণে একটি নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারের পরিবর্তন হবে।
জামায়াতের এই নায়েবে আমির বলেন, আজকের অন্তর্বর্তী সরকারের যাত্রা তিনটি মৌলিক অঙ্গীকারের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল। এই সরকারকে বিপ্লবের পর জনগণের অভিপ্রায়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করানো হয়েছিল। তিনটি ওয়াদার একটি হলো পুর্ণাঙ্গ সংস্কারের ব্যবস্থা করা, যেটি আগামী দিনের সুশাসনকে নিশ্চিত করবে, জন-আকাঙ্ক্ষাকে পূরণ করবে। যারা অপরাধী ছিল, গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের জন্য দৃশ্যমান বিচারের ব্যবস্থা করা আর একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।
আরও পড়ুন : আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না : প্রধান উপদেষ্টা
সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, সংস্কারের জন্য সরকারের উদ্যোগেই জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়েছিল। ঐকমত্য কমিশন একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দিয়েছিল, যে সংস্কারগুলো করা হয়েছিল, সেগুলোর ব্যাপারে আমরা সব দল স্বাক্ষর করেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে একটি বড় দল এই সংস্কারের প্রশ্নে দ্বিমত পোষণ করছিলেন। শুরু থেকেই তারা সংস্কার চান না এমন একটি মনোভাব প্রকাশ করেছিলেন। আমরা আশা করেছিলাম, সরকার ও প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের মতো একজন বিশাল ব্যক্তিত্ব কোনো অন্যায় চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে জনগণের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে অটল থেকে সংস্কার কমিশনের দেওয়া সুপারিশের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। কিন্তু গতকাল (বৃহস্পতিবার) উনার ভাষণে আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, সরকারের নিয়োজিত কমিশনের সুপারিশ গ্রহণ না করে সরকার, সেখানে যথেষ্ট কাটছাঁট দিয়ে একটি দলের সঙ্গে ব্যাপক কম্প্রোমাইজ করে জনগণের স্বার্থে নয়, একটি বিশেষ দলের স্বার্থে অনেক পরিবর্তন তার ভাষণে বলেছেন। যার ফলে জনগণ ও দেশবাসী অত্যন্ত হতাশ হয়েছে।
ডা . তাহের আরও বলেন, আমরা মনে করি, আমাদের সংস্কার কমিশন যে প্রস্তাব দিয়েছিল হুবহু সেই সেটার ভিত্তিতে আদেশ জারি করা বাঞ্ছনীয়। সরকার তাদের চাপের কাছে নতি স্বীকার করে গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একই দিনের আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে। যদি ভোট সেদিন মানুষের মনোযোগের অভাবে কম হয়, তাহলে যারা সংস্কার চাচ্ছে না, তারাই আবার এই গণভোট নিয়ে প্রশ্ন তুলবে এবং তারা সংস্কার থেকে সেদিন চলে যাবে। এটা একটা ফাঁদ আমরা মনে করি। দুর্ভাগ্যবশত এই সরকার একটি দলের সেই ফাঁদে পা দিয়েছে এবং সংস্কারকে প্রায় গুরুত্বহীন করে ফেলেছে। আগেও আমরা দেখেছি, এই সরকার সেই বড় দলটির প্রতি আনুগত্য বা তাদের দুর্বলতা প্রকাশ করেছে। এই সরকার এখন আর নিরপেক্ষ সরকার নয়। এই সরকার একটি দলকে ক্ষমতায় আনার জন্য যেনতেন নির্বাচন আয়োজনের জন্য তাদের প্রচেষ্টা আছে বলে আমরা মনে করি।
আরও পড়ুন : একই দিনে গণভোট ও সংসদ নির্বাচন : প্রধান উপদেষ্টা
সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, প্রধান উপদেষ্টাকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করছে তিনজন উপদেষ্টা। তারা ভুল তথ্য দিয়ে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন যেন না হয় সেজন্য অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা আট দল এবং আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা কিছু দল আগামী ফেব্রুয়ারি মাসেই রোজার আগে একটি জাতীয় নির্বাচন হোক, এ ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের মতো পূর্বনির্ধারিত রায়ের একটি নির্বাচন হতে যাচ্ছে কিনা, এ নিয়ে আমাদের মনে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সরকারের আচরণে আমাদের বিশ্বাস করতে হচ্ছে, এই সরকারের অধীনেও কোনো সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচন করা সম্ভব নয়।
জামায়াতের এই নেতা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা আলাদাভাবে গণভোট ও নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন, এটা আমরা আশা করি। কমপক্ষে তিনজন উপদেষ্টা যারা উনাকে মিসগাইড করছে, আমরা তাদের অপসারণের দাবি করছি। প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের নাম আমরা পাঠাব। প্রশাসনে নিরপেক্ষ ও সৎ লোকদের নিয়োগ করতে হবে।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক