স্ত্রীর প্রেমিকের ছুরিকাঘাতে আসিফ নিহত, মরদেহ নিয়ে কুমিল্লায় মহাসড়ক অবরোধ
কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলায় বিয়ের ১৩ দিনের মাথায় স্ত্রীর সাবেক প্রেমিকের ছুরিকাঘাতে আবু বক্কর প্রকাশ আসিফ (২৬) নামে এক যুবক নিহত হওয়ার ঘটনায় আজ শনিবার (১৫ নভেম্বর) সকালে মরদেহ নিয়ে চৌদ্দগ্রামে মহাসড়ক অবরোধ করেছে স্বজন ও এলাকাবাসী।
নিহত আসিফ কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ঘোলপাশা ইউনিয়নের কেন্ডা গ্রামের ফটিক মিয়ার ছেলে। এর আগে গত ৮ নভেম্বর আসিফ সদর দক্ষিণ উপজেলার আবদুল্লাহপুর গ্রামের শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে গেলে দুই ব্যক্তি তাকে ছুরিকাঘাত করে। গতকাল শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে তিনি মারা যান।
নিহত আসিফের পরিবারের দাবি, স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার সুইটির (১৯) সাবেক প্রেমিক রাব্বি প্রকাশ বাপ্পি নামে এক যুবক তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাতে আহত করে। শুক্রবার রাতে আসিফের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে গ্রামবাসী বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।
নিহত আবু বক্কর প্রকাশ আসিফের ছোট ভাই আরাফাত হোসেন জানান, তার ভাই আবু বক্কর দীর্ঘ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। গত দুই মাস আগে তিনি ছুটিতে দেশে আসেন। তিনি গত ২৭ অক্টোবর জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার আবদুল্লাহপুর গ্রামের সুমাইয়া আক্তার সুইটিকে বিয়ে করেন। গত ৮ নভেম্বর দুপুরে তিনি নববিবাহিত স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে যান। একই দিন সন্ধ্যায় শ্যালক শান্তসহ আসিফ অলির বাজারে ঘুরতে যান। কিছুক্ষণ পর পায়ে হেঁটে তারা আবদুল্লাহপুরে শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। আবদুল্লাহপুর এলাকায় সাদিয়া দারুল উলুম মাদরাসার সামনে পৌঁছালে বাপ্পি ও পারভেজ নামে দুই যুবক আমার ভাইকে উপুর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।
আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে সদর দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নেওয়া হলে শুক্রবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। আমরা পরে জানতে পারি, বাপ্পি নামের এক যুবকের সাথে আসিফের স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার সুইটির বিয়ের আগে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, এ হত্যাকাণ্ডের সাথে স্ত্রীও জড়িত রয়েছে।
আরাফাত আরও অভিযোগ করেন, ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নিতে ভাবি সুমাইয়া আক্তার সুইটি সদর দক্ষিণ থানায় ছুরিকাঘাতের একটি মামলা দায়ের করে। তিনি ভাই হত্যার বিচার চান। এ ঘটনায় তারা আদালতে ভাবিকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করবেন।
এদিকে, হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আজ শনিবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত নিহত আসিফের পরিবার ও এলাকাবাসী মরদেহ নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সৈয়দপুর এলাকায় অবরোধ করে। এ সময় বিক্ষোভ মিছিল করে তারা। এ সময় মহাসড়কের দুই দিকে প্রায় চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। চৌদ্দগ্রাম মডেল থানা ও মিয়াবাজার হাইওয়ে পুলিশ গিয়ে আসামিদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে বিক্ষুব্ধ জনতা অবরোধ তুলে নেয়।
এলাকাবাসী দাবি করছে, স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার সুইটির প্ররোচনায় তার সাবেক প্রেমিক ও তার সহযোগী পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী স্বামী আসিফকে হত্যা করেছে। ঘটনাটির ভিন্ন খাতে প্রবাহিত এবং নিজেকে রক্ষা করার জন্য সুইটি বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে।
মানববন্ধনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বক্তব্য দেন নিহত আবু বক্কর আসিফের মা আলেয়া বেগম, নানি রুপিয়া বেগম, স্থানীয় তোফায়েল আহমেদ জুয়েল, অ্যাডভোকেট জাহিদুল ইসলাম সুমন, মোজাম্মেল হক অপু, শহীদ মিয়া, আনোয়ার হোসেন, এয়াছিন মিয়া, মফিজ মেম্বার, রফিকুল ইসলাম, রাশেদ মিয়া প্রমুখ। এ সময় এলাকার বিপুল সংখ্যক নারী-পুরুষ ও তরুণরা উপস্থিত ছিলেন।
অভিযোগ সম্পর্কে সুমাইয়া আক্তার সুইটির বাবা দেলোয়ার হোসেন বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের সাথে আমার মেয়ে কোনোভাবেই জড়িত নয়। বিয়ের আগে আমার মেয়ের সাথে কারও প্রেমের সম্পর্ক ছিল না। আমার মেয়ে মোবাইলও ব্যবহার করতো না। তিনি হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
চৌদ্দগ্রাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, মহাসড়ক অবরোধের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। আসিফের মৃত্যুর ঘটনাটি সদর দক্ষিণ থানার। তার স্বজনরা দোষীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে চৌদ্দগ্রামের সৈয়দপুর এলাকায় অবরোধ করে। বিষয়টি পুলিশের মহাপরিদর্শক ও কুমিল্লা পুলিশ সুপার জেনেছেন। আমরা দোষীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আশ্বাস দিলে বিক্ষুব্ধ জনতা মহাসড়ক অবরোধ তুলে নেয়।
সদর দক্ষিণ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ঘটনার পর পরই অভিযুক্তরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। আমরা তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রেখেছি।

মনোয়ার হোসেন, কুমিল্লা (চৌদ্দগ্রাম)