ঢাকায় শিক্ষক সমাবেশে আহত শিক্ষিকা না ফেরার দেশে
ঢাকায় ১০ম গ্রেডের দাবিতে শিক্ষকদের আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন চাঁদপুরের মতলব উত্তরের ঝিনাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ফাতেমা আক্তার (৪৫)। গত ৮ নভেম্বর সমাবেশের একপর্যায়ে হঠাৎ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ হলে তিনি প্রচণ্ড আতঙ্কে শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হন এবং ঘটনাস্থলেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নিহতের স্বামী ঠাকুরচর গ্রামের ডিএম সোলেমান।
সেদিন থেকেই শুরু হয় তার দীর্ঘ চিকিৎসা-লড়াই, যার শেষ হলো আজ। রোববার (১৬ নভেম্বর) সকাল ১০টায় তিনি মিরপুর আলোক হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুতে শিক্ষাঙ্গনে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
ফাতেমা আক্তার মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌর এলাকার ঘনিয়ারপাড় গ্রামের বাসিন্দা সুরুজ মোল্লার মেয়ে এবং ঠাকুরচর গ্রামের ডিএম সোলেমানের স্ত্রী। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে। শিক্ষাজীবনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী; ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা থেকে পদার্থবিজ্ঞানে বিএসসি (সম্মান) ও এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন।
মতলব উত্তরের শিক্ষকরা জানান, ফাতেমা আক্তার আন্দোলনের দিন শহীদ মিনারের সামনেও সক্রিয় ছিলেন। গ্রেনেড সাউন্ডের পর থেকেই তিনি প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং কয়েক দিন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করেছেন।
রোববার বাদ মাগরিব ঠাকুরচর গ্রামে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। জানাজায় সহকর্মী শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয়রা অংশ নেন।
উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি আব্দুল বাতেন শোক প্রকাশ করে বলেন, আন্দোলনে আহত হওয়ার পর থেকে তিনি যে কষ্টটা সয়েছেন, তা হৃদয়বিদারক। আমরা একজন নিবেদিতপ্রাণ, সৎ ও শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষিকাকে হারালাম। তার মৃত্যু আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।
কেন্দ্রীয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি শামসুদ্দিন মাসুদ বলেন, ফাতেমা আক্তার শুধুই একজন শিক্ষক ছিলেন না, তিনি ছিলেন শিক্ষকদের আন্দোলনের একজন সাহসী সৈনিক। সাউন্ড গ্রেনেডের ঘটনায় তার গুরুতর অসুস্থতা আমাদের মর্মাহত করেছে। এ ধরনের দুঃখজনক মৃত্যু কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের পাশে আছি।

শরীফুল ইসলাম, চাঁদপুর