মিস্ত্রি জহুরুলের চোখে অন্ধকার, হাতে আলো
চোখে আলো নেই, তবু তাঁর হাতে যেন জাদু। যন্ত্রের ক্ষুদ্রতম ত্রুটিও চোখ ছাড়াই বুঝে ফেলেন তিনি- কোন স্ক্রু ঢিলা, কোন নাট খুলতে হবে, কোন রেঞ্চ ব্যবহার করতে হবে- সবকিছু হাতের স্পর্শেই যেন অনুভব করেন। চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার আইলহাঁস ইউনিয়নের বুড়োপাড়া গ্রামের ষাটোর্ধ্ব জহুরুল ইসলাম মঙ্গল দৃষ্টি হারালেও দক্ষতায় হার মানান যেকোনো অভিজ্ঞ মিস্ত্রিকে।
জন্মগত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এই মানুষটি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সাইকেল, ভ্যান, শ্যালো ইঞ্জিন, পাওয়ারট্রলি থেকে শুরু করে টিউবওয়েল বসানো পর্যন্ত সব কাজই একাই করেন।
জহুরুল মঙ্গল বলেন, ‘চোখে না দেখেও কাজ করতে পারি- এটা আল্লাহর রহমত। আমার বাইরের চোখ নেই, কিন্তু অন্তরের চোখ দিয়েই দেখি। কোন স্ক্রু কোথায় লাগবে, কোন রেঞ্চ ধরতে হবে, হাতই আমাকে বলে দেয়।’
মাত্র সাত বছর বয়সে সাইকেলের প্রতি আগ্রহ থেকে এক দোকানে মিস্ত্রির কাজ শেখেন তিনি। ১৯৮৪ সালে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের গেটসংলগ্ন স্থানে নিজের দোকান খোলেন। পরে গ্রামে ফিরে শ্যালো ইঞ্জিন ও পাওয়ারট্রলির কাজেও দক্ষতা অর্জন করেন। ২০০৪ সাল থেকে বুড়োপাড়াতেই চলছে তাঁর স্থায়ী দোকান।
সরেজমিনে দেখা যায়, এক কৃষকের শ্যালো ইঞ্জিন নষ্ট হলে জহুরুল মঙ্গল সাইকেলে চড়ে মাঠে যান। শুধু হ্যান্ডেল ঘোরাতেই সমস্যাটি বুঝে ফেলেন। কয়েক মিনিটেই ইঞ্জিন সচল হয়ে যায়। এরপর আবার টিউবওয়েল মেরামতে ছুটে যান অন্য এক বাড়িতে- কোনোরকম সহযোগিতা ছাড়াই।
গ্রামের কৃষক তাইজাল শেখ বলেন, ‘৪০ বছর ধরে মেশিন চালাই, কিন্তু একটা নাটও খুলতে পারি না। মঙ্গল ভাই না দেখেই মেশিন ঠিক করেন- এটা আল্লাহর দেওয়া ক্ষমতা।’

ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশ (ইউএনবি)